আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় যোগ দিতে চায় ফ্রান্স। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশ থেকে কিছুটা অনুপ্রেরণাও নিতে চায় দেশটি।
বুধবার (২২ মে) তার বাসভবনে ইউএনবি প্রতিনিধিসহ সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা অনেক আগেই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেছেন। তাই আপনারা এগিয়ে আছেন। এজন্য আপনারা বেশ অভিজ্ঞ। আর আমরা এটি থেকে কিছুটা অনুপ্রেরণা নিতে চাই। একই সঙ্গে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আপনাদের সমর্থন করতে চাই।’
চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের সময় বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে ১ বিলিয়ন ইউরো (১ দশমিক ১ বিলিয়ন) মূল্যের একটি জলবায়ু অভিযোজন চুক্তি সই হতে পারে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার আশ্বাস কিরগিজস্তানের শিক্ষা উপমন্ত্রীর
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আপনাদের দেশকে সহায়তা করার লক্ষ্যে একটি অভিযোজন চুক্তি সই করতে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ফ্রান্স সফরে এটি সই করা হবে। এজন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, এই অভিযোজন চুক্তিটি ১ বিলিয়ন ইউরোর, যা মূলত রেয়াতযোগ্য ঋণ।
এটি মূলত বাংলাদেশ সরকারের সুশীল সমাজ ও স্থানীয় অংশীজনদের সহযোগিতায় এজেন্সি ফ্রাঁসেজ ডি ডেভেলপমেন্টের (এএফডি) মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অভিযোজন বটম-আপ পদ্ধতির হবে। কারণ এটি এ অঞ্চলে বসবাসকারী বাসিন্দাদের এর আওতায় নিয়ে আসে।’
তিনি বলেন, সরকার এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু সহায়তা ও বিনিয়োগ বাস্তবায়ন করছে, যা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার মতো কিছু এলাকার জনগণের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়াবে।
আরও পড়ুন: কসমস অ্যাতেলিয়ার ৭১ পরিদর্শন করলেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সুতরাং আমাদের উন্নয়ন ব্যাংকের (এএফডি) বিভিন্ন প্রকল্প, বিনিয়োগ থাকবে। এটি আপনাদের সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সুশীল সমাজ এবং খুব সক্রিয় ও অভিজ্ঞ তরুণদের সহায়তা করবে।’
এক্ষেত্রে তিনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে জড়িত হওয়ার উপর জোর দেন, কারণ গবেষণাকে মৌলিক হিসেবে দেখেন।
রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ফ্রান্স ও ইউরোপে তাদের অংশীদাররা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে আসার ক্ষেত্রে এবং কপ- এর কাঠামোর মধ্যে চলমান থাকা অন্যান্য সব বিষয়ের ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে চাপ দিতে বিশেষভাবে ঐক্যবদ্ধ।
২০২১ সালের নভেম্বরে শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফর করেছিলেন। তার আমন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ২০২৩ সালের ১০-১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে দ্বিপক্ষীয় সফর করেন।
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও ফ্রান্স দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, প্যারিস সম্মেলন একটি নিউ গ্লোবাল ফাইন্যান্স প্যাক্টের সূচনা করে। যার সুপারিশ বাংলাদেশ অনুমোদন করে। বাংলাদেশ ও ফ্রান্স যৌথভাবে প্যারিস প্যাক্ট ফর পিপল অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ুর জন্য সমস্ত উৎস থেকে অতিরিক্ত অর্থায়ন জোগাড় করার আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স আরও বিশ্বাস করে যে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু তহবিলের অর্থের ব্যবহার সহজতর করতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা উচিত।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তরুণরা দৃঢ়ভাবে কাজ করছে: রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই