বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেছেন, সঠিক তথ্য দিয়ে তথ্যের জায়গা পূরণ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার 'গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা' (রোল অব মিডিয়া ইন ডেমোক্রেসি) শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে (পলিসি ক্যাফে) তিনি বলেন, ‘তথ্যের জায়গায় সঠিক তথ্য না থাকলে, অপতথ্য জায়গাটি দখল করে নিবে।’
ইউএসএআইডি, আইএফইএস এবং সিইপিপিএসের সহযোগিতায় বিআইপিএসএস এই পলিসি ক্যাফের আয়োজন করে।
প্রথম আলোর ওয়েব (ইংরেজি) প্রধান আয়েশা কবির এবং দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদকীয় প্রধান শাহরিয়ার ফিরোজ গণতান্ত্রিক আলোচনা গঠনে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে অমূল্য অন্তর্দৃষ্টি তুলে ধরেন।
মনিরুজ্জামান আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন এবং একটি আকর্ষনীয় মতবিনিময়ের পরিবেশ করেন।
অনুষ্ঠানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যমের অবিচ্ছেদ্য ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা অবহিত গণতান্ত্রিক সম্পৃক্ততা প্রচারের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেয়।
আরও পড়ুন: বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ডিএসএ বাতিলের দাবি টিআইবি’র
মুনিরুজ্জামান একটি গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যমের গুরুত্ব তুলে ধরেন, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেখানে জাতীয় নির্বাচন খুব বেশি দূরে নয়। নির্বাচনে গণমাধ্যম প্রধান ভূমিকা পালন করবে।
এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।
আয়েশা জোর দিয়ে বলেন, যে দেশে বিরোধী দল খুব বেশি শক্তিশালী নয়, সেখানে জনগণের মতামত পৌঁছে দিতে গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের একটি সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। তবে প্রায়শই এটি রাজনৈতিক সত্তা, করপোরেট বা এমনকি বিদেশি সত্তা দ্বারাও বাধার মুখোমুখি হয়, যা একটি প্রাণবন্ত গণতান্ত্রিক সমাজ নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই উপেক্ষা উচিত।
শাহরিয়ারের মতে, গণতন্ত্রে জনগণের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গণমাধ্যমের দায়িত্ব। কিন্তু সরকার ও অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে গণমাধ্যম যে চ্যালেঞ্জ ও বিধিনিষেধের মুখোমুখি হয় তার বিরূপ প্রভাব রয়েছে, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজকে হুমকির মুখে ফেলে।
গণমাধ্যম কীভাবে মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে- এমন প্রশ্নের জবাবে আয়েশা গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরেন এবং জনগণ তাদের চারপাশে কী ঘটছে সে সম্পর্কে ধারণা পায়।
তিনি বলেন, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক- উভয় ভূমিকাই পালন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেহেতু প্রচুর ভুয়া খবর, ভুল তথ্য ও অপতথ্য ছড়ানো হয়, তাই তা মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন: স্বাধীন ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যম গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য: তথ্যমন্ত্রী
কিন্তু উজ্জ্বল দিক হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া তথ্য যাচাই করতে মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূলধারার মাধ্যমের ওপর নির্ভর করে এবং এইভাবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মূলধারার মাধ্যমের উপকার করে থাকে।
শাহরিয়ার বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার র্যাঙ্কিং-এ পতন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, সমৃদ্ধ গণমাধ্যম শিল্প থাকা সত্ত্বেও র্যাঙ্কিং নিচে নেমে যাচ্ছে।
তিনি কিছু পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে টিভি চ্যানেল ও গণমাধ্যমের উপস্থিতি বাড়লেও তারা জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছে না, বরং চ্যানেল মালিক ও সরকারের মধ্যে একধরনের ‘সহানুভূতিশীল’ সম্পর্ক রয়েছে।
আয়েশা মনে করেন, বিভিন্ন সংস্থার চাপ সত্ত্বেও গণমাধ্যমের সাহসী হওয়া এবং সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত।
তিনি বলেন, প্রকৃত তদন্ত ও ফ্যাক্ট চেকিং নিশ্চিত করতে হবে।
শাহরিয়ার মনে করেন, ভুয়া খবর ও ভুল তথ্য মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে ছড়ানো হয় এবং তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কীভাবে নির্ভরতা কমানো যায় এবং মূলধারার গণমাধ্যমের ওপর আরও বেশি নির্ভর করা যায় সেদিকে মনোনিবেশ করা দরকার।
আরও পড়ুন: নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
এছাড়াও নৈতিকতা নিয়ে কথা বলার সময় তিনি মিডিয়া চ্যানেলগুলোর মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তাদের ও সরকারের মধ্যে ‘সংযোগ’ পেশাদার সাংবাদিকতা নিশ্চিত ও বিদ্যমান অন্যান্য চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণ।
পলিসি ক্যাফেটিতে আলোচনার পরে একটি ইন্টারেক্টিভ সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শ্রোতারা কিছু পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন। যার মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের তথ্য বিভিন্ন উৎস থেকে আসায় প্রকৃত তথ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
সেশনে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের (টিকটকের মতো) সম্ভাব্য প্রভাবের মতো বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এছাড়া জনমত গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার সময় শক্তিশালী গণমাধ্যমের মতো বিষয়ও সামনে এসেছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্কলাররা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: গঠনমূলক সমালোচনা করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর