দাবি আদায়ে নিজ এলাকায় কর্ম বিরতিতে থাকা এমনকি বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকির সঙ্গে জড়িত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের নথিতে ইউএনবি দেখতে পেয়েছে যে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) বিভিন্ন ইউনিটের পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক।
ওই পাঁচ কর্মকর্তা হলেন- বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম হুমায়ুন কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, মানিকগঞ্জ পিবিএস’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক (কারিগরি) সামিউল কবির ও বিপাশা ইসলাম এবং মানিকগঞ্জ পিবিএস’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রাজন কুমার দাস।
এ লক্ষে বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) দুদকের সহকারী পরিচালক শহিদুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা ও উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজালাল।
দুদক আরও জানায়, খান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাসুদ খানের দায়ের করা অভিযোগের আলোকে আরইবির তদন্ত দল হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ। হুমায়ুন কবির পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অভ্যন্তরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
অভিযোগে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে হুমায়ুন কবির ২২৫ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
আরও পড়ুন: সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে মাস্টার রোল ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারীদের জাতীয়করণের পেছনে বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অভ্যন্তরে তথাকথিত আন্দোলনের সমন্বয়কদের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদক হুমায়ুন কবির, সেইসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিজিএম আসাদুজ্জামান ভূঁইয়াকে ২৭ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য একটি চিঠি দিয়েছে। আর বাকি তিনজন- সামিউল কবির, বিপাশা ইসলাম ও রাজন কুমার দাসকে আগামী ২৮ অক্টোবর হাজির হওয়ার জন্য তলব করেছে দুদক।
এর আগে বেশ কয়েকটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ও গ্রেপ্তারের পর আরইবির আওতাধীন বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (আরইবি) বিভিন্ন শাখার একটি অংশ কঠোর আল্টিমেটাম দিয়ে বিদ্যুৎ 'সম্পূর্ণ বন্ধের' হুমকি দেয়।
কর্মকর্তারা পিবিএসের বরখাস্ত করা ১০ কর্মকর্তাকে অবিলম্বে পুনর্বহাল এবং গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে তাদের দাবি পূরণের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়। তারা একই সময়সীমার মধ্যে আরইবি চেয়ারম্যানকে অপসারণেরও আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, দাবি আদায় না হলে হাজার হাজার পিবিএস কর্মচারী ‘ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ’ করাসহ গণবিক্ষোভ করবে।
আরও পড়ুন: সিলেটের ৮ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ‘ব্ল্যাক আউট’, ৩ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চার সমন্বয়ক আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া ও রাজন কুমার দাসের সই করা এক বিবৃতিতে এ হুমকি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, ‘দুই দফা দাবি আদায় না হলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪৫ হাজার কর্মী লংমার্চে যেতে বাধ্য হবে।’
অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা হিসেবে বিবেচিত বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ এনে আরইবি পিবিএসের বিভিন্ন ইউনিটের ১০ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার পর এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সংগঠনের শৃঙ্খলাবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও অভিযোগও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুতের একজন কর্মরত পরিদর্শককে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বরখাস্তকৃতদের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রাজন কুমার দাস, নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মনির হোসেন, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম দীপক কুমার সিনহা, ঢাকা পল্লী বিদ্যুতের-১ এর এজিএম আব্দুল হাকিম, ঢাকা পিবিএস -২ এর এজিএম মো. সালাউদ্দিন, মাগুরা পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো. রাহাত, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর সিনিয়র জিএম মো. জাকির হোসেন এবং বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম হুমায়ুন কবির।
আরও পড়ুন: ঢাকা-ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিতরণ প্রকল্পে পোল ও ১৪০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ ক্যাবল কিনবে বিআরইবি