প্রতিবছর এভাবে লাখ লাখ টাকা নদীগর্ভে গেলেও টনক নড়ে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। ভাঙন রোধে স্থায়ী প্রকল্পের কথা গত এক দশক ধরে শোনা গেলেও নানা কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। বর্তমানে এ এলাকায় হুমকির মুখে রয়েছে স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, ছয়টি ক্রসবাঁধ, দুটি বেরিবাঁধ, বেশ কয়েকটি হাটবাজারসহ অনেক ফসলি জমি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গাবুর হেলান, ডাংরারহাট, চতুরা, কালিরহাট ও বুড়িরহাট এলাকার লোকজন ঘরবাড়ি সরিয়ে পার্শ্ববর্তী বাঁধের রাস্তায় কিংবা উঁচুস্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।
চলতি বর্ষা মৌসুমে তিন দফা বন্যা ও তিস্তার প্রবল ভাঙনে অর্ধশত ঘরবাড়িসহ অনেক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভাঙন প্রতিরোধের জন্য কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করেছেন নদীপাড়ের মানুষজন।
গাবুর হেলান এলাকার বাসিন্দা তৈয়ব আলী নিজেদের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বাহে হামারগুলার মাঠ ভরা ফসল, গোয়ালভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ আছিল। সগে তিস্তা নদী গিলি খাইছে। এ্যালা আরেকজনের ভিটাবাড়িত আশ্রয় নিছি। সেটেও ভাঙবের ধরছে। এ্যালা হামরা যামো কোটে?’
একই এলাকার আইজার আলী বলেন, ‘সরকারিভাবে যে সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি তাতে আমাদের কিছুই হয় না। আমরা সাহায্য চাই না, নদী শাসনের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা চাই।’
সম্প্রতি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দ্দী বাপ্পি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম, তিস্তা নদী রক্ষা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ হোসেন সরকার, বিদ্যানন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মো. তাইজুল ইসলামসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘মানচিত্র থেকে আমার ইউনিয়নের মূল ভূখণ্ডের অর্ধেক নদীগর্ভে চলে গেছে। জরুরিভিত্তিতে নদী খনন করা হলে ভাঙন কমে যাবে।’
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, সরকার তিস্তা নদী তীরবর্তী চার জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ভাঙন রোধে চীনা সরকারের পাওয়ার চায়না কোম্পানির সাথে ২০১৯ সালে একটি চুক্তি করে। এতে স্থায়ীভাবে নদী শাসন ব্যবস্থাপনা থাকবে। বিষয়টির জরিপ ও ঋণ অনুমোদন হয়েছে। বর্তমানে তা পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘৮ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন হলে তিস্তা পাড়ের মানুষের আর কষ্ট থাকবে না। এটি অর্থনৈতিক জোন হিসেবে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।’