চাঁদপুর জেলা শহরের বড় স্টেশন মোলহেড- এ অবস্থিত ‘চাঁদপুর পযর্টন কেন্দ্রের’ পাশেই ত্রিনদীর ( মেঘনা, পদ্মা ও ডাকাতিয়া) মিলনস্থল, যা অপরূপ সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সবার কাছে। ত্রিনদীর এই মোহনায় স্থলের ঠিক প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে জেগে উঠেছে একটি আধা কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বালু চর, যা মিনি কক্সবাজার নামে খ্যাতি অজর্ন করেছে গত ৫-৬ বছর যাবৎ।
প্রতিদিন শহর ও দূর দূরান্ত থেকে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং প্রচন্ড গরমে গায়ে একটু মুক্ত বাতাস লাগানোর জন্য শত শত লোকজন এখানে আসেন।
পযর্টন কেন্দ্রে আসলে মন চাইবে এই চরে যেতে। এই চর যেনো সবাইকে ডাকে। এতে নদী ভ্রমণের পাশাপাশি মিনি কক্সবাজার বাজারও দেখা হয়। সতেজ হয় বিধ্বস্ত মন-প্রাণ।
আরও পড়ুন: ভ্রমণপিপাসু মানুষে মুখরিত মোহনপুর পর্যটনকেন্দ্র
প্রবীণ মাঝি-মাল্লারা জানান, বিশাল মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে ওই চরে যেতে নৌকায় ২০ মিনিট সময় লাগে। নদী পাড়ি দিতে জনপ্রতি আসা যাওয়া বাবদ গুনতে হয় ১০০ টাকা। এখানে ২০-২২ টি নৌকা সবসময় প্রস্তুত থাকে। ইঞ্জিন চালিত এক নৌকায় ২০ জন হলেই নৌকা ছেড়ে যায় । বড় স্টেশন মোলহেড থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এ সুপ্রশস্ত বালুচর- যাকে সবাই বলে মিনি কক্সবাজার। কক্সবাজারের ছোঁয়াটা এখানে আসলে যেনো খানিকটা হলেও উপলব্ধি করা যায়।
শুক্রবার বিকেলে এখানে গিয়ে দেখা যায় প্রায় সবাই পানিতে নেমে পড়েছে, অনেকেই পানিতে নেমে ঢেউয়ের সাথে খেলা করছে, কেউবা সাঁতার কাটছে। অনেকেই আবার ছবি বা ভিডিও করতে ব্যস্ত। কিশোর-কিশোরীদের আনন্দ যেন একটু বেশি।
কক্সবাজারের আমেজটা এখানে পাওয়া যাচ্ছে এমনটাই জানালেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। মিনি কক্সবাজার নাম শুনেই তারা এখানে এসেছেন বলে জানান।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাধি দক্ষিণ থেকে আসা লাভলী বেগম (৩৫) জানান, ‘আমি বাবা, বড় বোন, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এসেছি। এখানে পানিতে দুষ্টামি করলাম, নদীর পানিতে গোসলও করলাম। খুব ভালো লাগলো।’
আরও পড়ুন: সাভারে ভ্রমণের জায়গাগুলোতে উপচে পড়া ভিড়
হাজারো ভ্রমণপিপাসু মানুষ সকাল বিকেলে এখানে আসছেন। তবে ছুটির দিনে বেশি লোকজন আসে বলে জানান এখানকার মাস্ক বিক্রেতা বজলুর রশিদ (৬০) ও বেলুন-সন পাপড়িওয়ালা সলেমান মিয়া (১৬)। একই কথা জানান কাঁচা আম, কালোজাম, শরবত, কোল্ড ড্রিংকস, চা-সিগারেট বিক্রি করা বিভিন্ন ফেরিওয়ালারা।
তবে এখানে কিছু অসুবিধা দেখা গেছে। এখানে নেই কোন নামাজের স্থান, টয়লেট, পানির ব্যবস্থা। তাছাড়া হঠাৎ বৃষ্টি বা ঝড় আসলে কোথাও দাঁড়াবার জায়গা নেই। এছাড়াও বালু চরের লাগোয়া পশ্চিম পাশ এলাকাটি অরক্ষিত হওয়ায় বড় বড় বন গজিয়ে উঠেছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, পযর্টন কেন্দ্রে ও মিনি কক্সবাজারে কয়েকজনের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। তাছাড়া পর্যটন কেন্দ্রের আশপাশে খাবারের ও অন্যন্য দোকানগুলোতেও স্বাস্থ্য বিধির মেনে চলার প্রবণতা দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: ষাট গম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবনের পর্যটন এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক, (চাঁদপুর) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) আ: আল মাহমুদ জামান ইউএনবিন সাথে আলাপকালে জানান, ‘মেঘনার পশ্চিম পাড়ে জেগে ওঠা মিনি কক্সবাজার চাঁদপুর শহরের জন্য হুমকী। এরজন্যে মেঘনার স্রোতের পরিবতর্নের কারণে চাঁদপুর শহরে মেঘনার ভাঙন দেখা দিতে পারে। তবে প্রশাসনের মিনি কক্সবাজারের দিকে কোনও নজর নেই। ওখানে একলাখ টাকা খরচ করলে, সেটা পুরোটা পানিতেই চলে যাবে। আসলে চাঁদপুর শহর রক্ষা করা অতীব জরুরী।’
উল্লেখ্য গত বছর সাঁতার কাটতে নেমে কুমিল্লা শহর থেকে আগত এক যুবক মেঘনায় তলিয়ে যায়।