ভ্রমণকারী জানান, দৃষ্টিনন্দন স্থান, সার্বিক সুন্দর ব্যবস্থাপনা এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নৌপথে যাতায়াত বেশ আরামদায়ক ও সুবিধাজনক হওয়ায় প্রতিদিনই এখানে সমাগম বাড়ছে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে শত শত মানুষ এখানে ছুটে আসছেন। তাদের পদচারণায় মুখরিত এখন পুরো এলাকা। যা গত ৩-৪ মাস আগেও কল্পনাতীত ছিল।
মোহনপুর এলাকায় প্রায় ১৩ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা পর্যটনকেন্দ্রটিতে ঢুকতে জনপ্রতি প্রবেশমূল্য হিসেবে গুনতে হবে ২০ টাকা। নান্দনিক সৌন্দর্য ও আধুনিকতার মিশেলে গড়া এ বিনোদন কেন্দ্রে রয়েছে ভালো নিরাপত্তার ব্যবস্থা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো পাতানো বিছানার উপরে ছায়ার জন্য রয়েছে লাল ছাতা। আর আছে ঘোড়ায় চড়া, স্পিডবোট বা নৌকায় করে নদী ভ্রমণের সুব্যবস্থা। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবারের জোগান দিতে পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরেই রয়েছে দ্য শিপ ইন রেস্টুরেন্ট।
আরও পড়ুন: পর্যটন খাতের পুনর্জাগরণে স্থানীয় পর্যায়ে যেতে হবে: বিশেষজ্ঞরা
বেড়াতে আসা শিশু-কিশোরদের জন্য বিভিন্ন রাইডে চড়ার সুবিধা করে দেয়ার কাজও পুরোদমে চলছে। এর উন্নয় কাজ শেষে শিগগিরই তা চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপক ফজলে রাব্বি ও সুপারভাইজার ফরহাদ।
বিনোদন কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজি মিজানুর রহমান এলাকার একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক।
পর্যটনকেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রটিতে দিন দিন ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা বাড়ছে। ছুটির দিনে প্রায় ৮-১০ হাজার মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন।
আরও পড়ুন: পর্যটন করপোরেশনকে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে হবে: প্রতিমন্ত্রী
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, তিনটি তিনতলা এবং একটি দোতালা লঞ্চ নিয়ে বনভোজনের দল এখানে এসেছে। লঞ্চেই তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়ক পথেও বিভিন্ন যানবাহনে করে অনেকে বেড়াতে আসছেন। তারা খুশি এমন খোলামেলা পরিবেশে কিছুটা আনন্দময় সময় পার করতে পেরে।
কথা হয় রাজধানীর মিটফোর্ড থেকে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী রঞ্জন সুরের সাথে। তিনি জানান, তারা এখানে বনভোজন করতে এসেছেন। এখানকার পরিবেশ ও আয়োজন তাদের ভালো লেগেছে। তারা মোট ৩৫০ জন একসাথে এখানে এসেছেন।
আবদুল রহিম নামে আরেকজন জানান, তিনিসহ ৪৫০ জন বনভোজন করতে লঞ্চে করে এখানে এসেছেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে লঞ্চ ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে আসা একদল ভ্রমণকারীকেও ঘুরতে দেখা যায়। চাঁদপুরের ষোলঘর থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে আসেন এক নব দম্পতি। কেন্দ্রে এসেই ছবি ও সেলফি তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখা যায় তাদের।
আরও পড়ুন: করোনার ক্ষত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কুমিল্লার পর্যটন শিল্প
এদিকে, পর্যটনকেন্দ্রের ভেতরে কটেজ বা রেস্ট হাউজ নির্মাণ করছে কতৃপক্ষ। যেখানে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য রাত কাটানোর ব্যবস্থা থাকবে। উপভোগ করতে পারবেন রাতের আলোকিত লঞ্চ-স্টিমার চলাচলের মনোরম দৃশ্য।
বেড়াতে আসা আরও কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, এ স্থানটি অনেকটা কক্সবাজারের মতো। মিনি কক্সবাজার হিসেবে এখানে আসতে পেরে তাদের খুব ভালো লাগছে। ঢাকা বা তার আশপাশের এলাকা থেকে সেই শত শত মাইল দূরে কক্সবাজারে না গিয়ে এখানেই সৈকতের সব সুবিধা পাচ্ছেন তারা।
মুন্সিগঞ্জ, বিক্রমপুর ও কেরানীগঞ্জ বা ঢাকার যে কোনো অঞ্চল থেকে কম সময়ে এখানে আসা যায় আবার শেষ বিকালে বা সন্ধায় ফুরফুরে ও সতেজ মন নিয়ে ফিরেও যাওয়া যায়।
বিনোদন কেন্দ্রটির সৌন্দর্য বর্ধনে লাগানো ফুল ও অন্য গাছপালা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। সেই সাথে চলছে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। এসব কাজ শেষ হলে কেন্দ্রটি আরও বেশি পর্যটক আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: দেশের কোভিডের ক্ষত কাটাতে সাহায্য করতে পারে সমুদ্র পর্যটন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
মোহনপুর পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ফজলে রাব্বি বলেন, ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত এ কেন্দ্রের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে আরও ২-৩ মাস সময় লাগবে। নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে পর্যটকরা আধুনিক আরও বেশকিছু সুবিধা পাবেন।’
এদিকে, কেন্দ্রটি ঘিরে আশপাশে গড়ে উঠেছে অনেক ছোট-বড় নতুন দোকানপাট। বাড়ছে যানবাহনের ভিড় ও ব্যস্ততা। দোকানে দোকানে বাড়তি পর্যটকদের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন নাস্তা, চা ও পানীয় দোকানিরা। ভ্রাম্যমাণ দোকানিরাও দেদারছে বেচাকেনা করছেন।
কেন্দ্রটিকে ঘিরে অনেকের আয়-রোজগার বেড়েছে। ছোট ও মাঝারি দোকানিদের জীবন-জীবিকার পথ সুগম হয়েছে। তবে, মোহনপুর লঞ্চঘাটটি ছোট হওয়ায় বিপদের বা দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সচেতন নাগরীকরা। তারা ঘাটটি সম্প্রসারণসহ পর্যটনকেন্দ্রে আসা যাওয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সড়কগুলো আরও প্রশস্ত করার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।