বিশ্বের ২০টি নেতৃস্থানীয় অর্থনীতির গোষ্ঠী (জি২০) স্থায়ী সদস্য হিসেবে আফ্রিকান ইউনিয়নকে (এইউ) স্বাগত জানিয়েছে।
এটি জি২০-এর প্রতি একটি শক্তিশালী স্বীকৃতি, কারণ এর মাধ্যমে আফ্রিকার ৫০টিরও বেশি দেশের জোট এইউ বিশ্বমঞ্চে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বছর জি২০-তে এইউ-কে স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে বলেছিলেন, ‘দীর্ঘ সময় পর’ তারা (আফ্রিকার দেশগুলো) আসছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই সপ্তাহে তার দেশ জি২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য এইউ ব্লককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) মুখপাত্র এবা কালোন্দো বলেছেন, সাত বছর ধরে পূর্ণ সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছে এইউ। এতদিন এইউ ব্লকের একমাত্র দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা জি২০ সদস্য ছিল।
চলুন জেনে আসা যাক এইউ এবং এর সদস্যপদ এমন একটি বিশ্বে কী প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে আফ্রিকা জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, অভিবাসন এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
আফ্রিকার জন্য এর অর্থ কী?
স্থায়ী জি২০ সদস্যপদ এমন একটি মহাদেশের উত্থানের সংকেত দেয়, যার তরুণ জনসংখ্যা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন, যা ২০৫০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হবে এবং পৃথিবীর মানুষের এক চতুর্থাংশ হবে।
এইউ এর ৫৫টি সদস্য রাষ্ট্র, যার মধ্যে বিতর্কিত পশ্চিম সাহারাও রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এখানকার দেশগুলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থায় অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তারা বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য সংস্থাসহ পুরো বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার চায়। কেননা এগুলো আফ্রিকান দেশগুলোর ঋণের বোঝা আরও ভারী করে তুলছে এবং অন্যদের চেয়ে আফ্রিকান দেশগুলো তাদের থেকে বেশি অর্থ ধার করতে বাধ্য করে।
আফ্রিকা ক্রমবর্ধমানভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রাক্তন ইউরোপীয় উপনিবেশিকদের বাইরে একটি নতুন প্রজন্মের বৈশ্বিক শক্তির কাছ থেকে বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক স্বার্থের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।
চীন আফ্রিকার বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং তার বৃহত্তম ঋণদাতাদের মধ্যে একটি। রাশিয়া তার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। উপসাগরীয় দেশগুলো আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হয়ে উঠেছে। তুরস্কের বৃহত্তম বিদেশী সামরিক ঘাঁটি এবং দূতাবাস সোমালিয়ায়। ইসরায়েল ও ইরান অংশীদারদের সন্ধানে তাদের প্রচার বাড়াচ্ছে।
আফ্রিকান নেতারা যুদ্ধ, চরমপন্থা, ক্ষুধা ও বিপর্যয়ের একটি শিকার হওয়ার জন্য এই মহাদেশের কাঠামো গঠনকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এখানকার দেশগুলোকে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে এক বা অন্য পক্ষ নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়।
কেউ কেউ মধ্যস্থতাকারী হতে পছন্দ করে, যেমনটি রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পর আফ্রিকান শান্তি প্রচেষ্টা দেখা গেছে।
জি২০-এ আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্যপদ দেওয়া এমন একটি পদক্ষেপ, যা মহাদেশটিকে একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
আফ্রিকান ইউনিয়ন জি২০-এ কী নিয়ে আসবে?
পূর্ণ জি২০ সদস্যপদ সহ, এইউ এমন একটি মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে যা বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য এলাকার আবাসস্থল। এটি বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থানগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে সমৃদ্ধ, যা আফ্রিকা সবচেয়ে কম অবদান রাখে তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়।
আফ্রিকা মহাদেশে বিশ্বের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদের ৬০ শতাংশ ও ৩০ শতাংশেরও বেশি খনিজ রয়েছে, যা নবায়ণযোগ্য এবং কম-কার্বন প্রযুক্তির চাবিকাঠি।
গত মাসে প্রকাশিত আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র কঙ্গোতেই বিশ্বের প্রায় অর্ধেক কোবাল্ট রয়েছে, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির জন্য অপরিহার্য একটি ধাতু।
আফ্রিকান নেতারা প্রক্রিয়াকরণ ও আহরণের সুবিধা না থাকায় তাদের সম্পদ বহিরাগতদের নিয়ে যেতে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এবং তাদের অর্থনীতির সুবিধার জন্য আরও শিল্প বিকাশ চান তারা।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো এই সপ্তাহে প্রথম আফ্রিকা জলবায়ু সম্মেলনে বলেছেন, আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ বিবেচনা করুন, সে হিসেবে মহাদেশটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
সেখানে উপস্থিত নেতারা নাইরোবিতে ক্রিয়াশীল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যায্য প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নে ধনী দেশগুলোর দীর্ঘ প্রতিশ্রুত বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়া এবং বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির উপর ট্যাক্স নির্ধারণের আহ্বান জানানোর মাধ্যমে সম্মেলন শেষ করে।