ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রাশিয়ার সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করতে বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সেজন্য রাশিয়া ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের সম্পূর্ণ ভূখণ্ড দাবি করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের একটি চুক্তি করা উচিত। কারণ, রাশিয়া খুব বড় একটি শক্তি। তারা (ইউক্রেন) তা নয়।’
আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর স্থানীয় সময় শনিবার (১৬ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ট্রাম্প।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন ট্রাম্প ও পুতিন। সেখানে যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে পুতিন দনবাসের পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল দাবি করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে।
বৈঠক শেষে ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের বলেন, ‘জেলেনস্কি যদি দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেন, তাহলে একটি শান্তিচুক্তি সম্ভব হতে পারে।’ তবে, দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়ার এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন জেলেনস্কি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত দোনেৎস্ক অনেক আগে থেকে মস্কোর প্রধান লক্ষ্যবস্তু। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে রুশ বাহিনী।
আরও পড়ুন: ‘শূন্য হাতে’ পুতিনকে নিয়ে আলাস্কা ছাড়লেন ট্রাম্প
দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে দনবাস অঞ্চলটি গঠিত। এর মধ্যে লুহানস্ক প্রায় পুরোপুরি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্ক শহরসহ দোনেৎস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো এখনো ধরে রেখেছে ইউক্রেন।
শুক্রবারের বৈঠকে পুতিন ট্রাম্পকে বলেন, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিনিময়ে তিনি দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে সম্মুখযুদ্ধ স্থগিত রাখতে এবং আর না এগোতে রাজি রয়েছেন।
ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা এর আগে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে চাইলেও ট্রাম্প চাইছেন সরাসরি শান্তিচুক্তি। শনিবার ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সর্বোত্তম উপায় সরাসরি শান্তিচুক্তিতে যাওয়া, সবপক্ষ থেকেই এটা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা যুদ্ধ বন্ধ করবে। যুদ্ধবিরতি অনেক সময় টেকে না।
এদিকে, যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা। বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে ইউরোপের নেতারা বলেছেন, ইউক্রেনের ভুখণ্ড নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত তারাই নেবে। জোর করে আন্তর্জাতিক সীমানা পরিবর্তন করা যাবে না।
বৈঠকের পর জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। এরপর এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে সব অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের আরেক দফা সাময়িক বিরতি নয় বরং প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেটি স্থায়ী হবে।
এ সময় অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, সব ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দী ও বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি দিতে হবে এবং রাশিয়ার অপহৃত শিশুদের ফিরিয়ে দিতে হবে।
এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি ছাড়া সরাসরি শান্তিচুক্তিতে গেলে সেটি পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে বলে শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া আরেক বিবৃতিতে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: রাশিয়াকে ভুখণ্ড দিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত, ট্রাম্পের কূটনীতিতে পূর্ব ইউক্রেনে আতঙ্ক
তবে প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি বাদ দিয়ে সরাসরি শান্তিচুক্তিতে যাওয়া আরোচনায় মস্কোকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
আগামীকাল (সোমবার) ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করবেন জেলেনস্কি। এ সময় ইউরোপীয় নেতারাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।