ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে রোহিঙ্গাদের বহনকারী একটি বিধ্বস্ত হওয়া নৌকার সন্ধান পেয়েছে ইন্দোনেশিয়ার একটি তল্লাশি ও উদ্ধারকারী জাহাজ। বৃহস্পতিবার সেই নৌকার ধ্বংসাবশেষে আশ্রয় নেওয়া ৬৯ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে তারা।
উদ্ধারকারী জাহাজে থাকা এপির এক আলোকচিত্রী জানিয়েছেন, স্থানীয় মাছ ধরার নৌকায় ১০ জনকে তোলা হয়েছে এবং আরও ৫৯ জনকে ইন্দোনেশিয়ার জাহাজটি উদ্ধার করেছে।
রাতের বৃষ্টিতে ভিজে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। উদ্ধার করা রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুও ছিল। রাবারের ডিঙ্গি নৌকায় করে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বুধবার ইন্দোনেশিয়ার উত্তর উপকূলে ডুবে যাওয়ার সময় ছোট নৌকাটিতে কতজন শরণার্থী ছিল তা এখনো জানা যায়নি। স্থানীয় জেলেরা প্রাথমিকভাবে ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে, ধারণা করা হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ জনের মতো রোহিঙ্গা ছিল।
প্রাথমিকভাবে উপকূলের উত্তাল পানিতে নৌকাটি খুঁজে পেতে অসুবিধা হচ্ছিল। কয়েক ঘণ্টা পরে, ইন্দোনেশিয়ার অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল বুধবার সন্ধ্যায় বান্দা আচেহ শহর ত্যাগ করেছে।
অবশেষে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে নৌকা ও জীবিতদের খুঁজে পাওয়া যায়।
আচেহ বারাত জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের নেতা আমিরুদ্দিন বলেন, উদ্ধার করা রোহিঙ্গারা জানয়েছেন, নৌকাটি পূর্ব দিকে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে এটি ফুটো হতে শুরু করে এবং তারপরে তীব্র স্রোত এটিকে আচেহর পশ্চিমের দিকে ঠেলে দেয়। ওই ছয়জন জানান, ডুবে যাওয়া নৌকায় এখনও বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন বাকিরা।
মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযানের নৃসংশতা থেকে বাঁচতে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশের জনাকীর্ণ শিবির ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালানোর চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা। নভেম্বর থেকে ইন্দোনেশিয়ায়ও শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মতো ইন্দোনেশিয়াও জাতিসংঘের ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। তাই শরণার্থীদের আইনি সুরক্ষা দিতে এবং তাদের গ্রহণ করতে বাধ্য নয় তারা। তবে তারা এখন পর্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত শরণার্থীদের সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা, যাদের দুই-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু, তাদের জন্মভূমি মিয়ানমার ও প্রতিবেশী বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে নৌকায় করে পালিয়ে আসে। এর মধ্যে ৫৬৯ জন বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন, যা ২০১৪ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ প্রাণহানির সংখ্যা।