শত্রু দেশের সরকারের সঙ্গে যোগসাজশের দায়ে মার্কিন বংশোদ্ভূত ইরানি সাংবাদিক রেজা ভালিজাদেহকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।
রেজা ভালিজাদেহ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত ভয়েস অব আমেরিকার ফার্সি ভাষার সাবেক সাংবাদিক। পরবর্তীতে রেডিও ফারদায়ও কাজ করেছেন তিনি।
ভালিজাদেহর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেইন আঘাসি বলেন, ‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন মার্কিন সরকারের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে প্রথম রায় দিয়েছে তেহরানের বিপ্লবী আদালত।’
তিনি বলেন, রায় ঘোষণা হলেও মক্কেলের সঙ্গে আমাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ২০ দিনের মধ্যে আপিল করা যাবে।
গত আগস্ট মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভালিজাদেহ জানান, ইরানের ধর্মতন্ত্র রেডিও ফারদাকে শত্রুভাবাপন্ন আউটলেট হিসেবে দেখলেও তিনি সেখানেই ফিরছেন।
সে সময় তিনি লেখেন, ২০২৪ সালের ৬ মার্চ আমি তেহরান ফিরে আসি। তার আগে রেভলুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে বৈঠক হলেও তারা আমার নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। ফলে ১৩ বছর পর কোনো ধরনের নিশ্চয়তা ছাড়াই আমি দেশে ফিরি।
তেহরানের ফেরার পর প্রথম ছয় মাস ঠিকঠাক চললেও পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ইরানে সাময়িক মুক্তি পেলেন নোবেলজয়ী নার্গিস মোহাম্মদী
এর আগে, নভেম্বর মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ও দেশটির ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে চলমান দমন-পীড়নের প্রতিবাদে রাজধানীর একটি ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন ভয়েস অব আমেরিকার ফার্সি সার্ভিসের সাবেক সাংবাদিক কিয়ানুশ সানজারি।
তার আগে চারজন কারাবন্দির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন ৪২ বছর বয়সী ওই সানজারি। তাদের মুক্তি না দিলে তিনি আত্মহত্যা করবেন বলেও হুমকি দেন বলে জানায় ইরানি কর্তৃপক্ষ।
২০০৭ সালে রেডিও ফারদার সাবেক কর্মী পারনাজ আজিমা তার অসুস্থ মাকে দেখতে সংক্ষিপ্ত সফরে ইরানে ফেরেন। দেশে নামার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিমানবন্দরে তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। এরপর সরকার তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পাশাপাশি বারবার তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন। আট মাস পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। পরে তাকে দেশ ছাড়ার অনুমতিও দেওয়া হয়।
পশ্চিমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে ইরানে অস্থিরতা চলছে। সম্প্রতি (২০২২ সালে) মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ-সংঘর্ষ শুরু হয়।
টানা অস্থিরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে ইরান। বেকারত্ব বর্তমানে দেশটিতে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইরানের মুদ্রাও (রিয়াল) ডলারের বিপরীতে মূল্য হারিয়ে চলেছে, যা দেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।