সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি মদদপুষ্ট একটি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর অন্তত ৫০ সদস্যকে হত্যা করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এমনকি, চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলি সেনারা ওই গোষ্ঠীকে রক্ষায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে। মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, এই গোষ্ঠিটি জাতিসংঘের ত্রাণের ট্রাক লুটে জড়িত।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম আই-২৪ এর খবরের বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার (১০ জুন) গাজা উপত্যকার রাফায় হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ইয়াসের আবু শাবাবের নেতৃত্বাধীন একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী। স্থানীয়ভাবে নিজের অপরাধের জন্য কুখ্যাতি রয়েছে আবু শাবাবের।
মঙ্গলবার (১০ জুন) এক বিবৃতিতে অ্যান্টি টেরর সার্ভিস বা পপুলার ফোর্সেস নামে পরিচিত আল শাবাবের মিলিশিয়া গোষ্ঠিটি জানিয়েছে, ‘ত্রাণ সুরক্ষা দিতে গিয়ে আমাদের ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নেতা ইয়াসেরের আত্মীয়রাও রয়েছেন। তারা আরও দাবি করেছে, বিস্ফোরক অপসারণ করতে গিয়েও কিছু সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।’
অথচ, গাজায় ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা কাজে নিয়োজিত কর্মীদের মতে— এই গোষ্ঠীটি দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের ত্রাণের ট্রাকগুলো লুট করে আসছে।
আরও পড়ুন: গ্রেটা থুনবার্গসহ গাজার জন্য ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ আটক করেছে ইসরায়েল
গণমাধ্যম আই-২৪ এর প্রতিবেদনে জানা গেছে, হামাস যোদ্ধাদের হাত থেকে আবু শাবাবকে রক্ষায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এতে, উভয়পক্ষেই হতাহত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে এই গোষ্ঠীকে অস্ত্র সহায়তার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। হামাসকে দুর্বল করতেই এ সহায়তা করা হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমটির মতে, গত সপ্তাহে আবু শাবাবের গোষ্ঠীকে সহায়তা করতে প্রথমবারের মতো হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ড্রোন হামলায় হামাসের ৪ সদস্য নিহত হয়েছিলেন।
অথচ ইসরায়েল দাবি করেছে, কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজায়মুখী ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েনেট জানিয়েছে, আবু শাবাবের গোষ্ঠীটি হামাসের অ্যারো নামে পরিচিত ইউনিটের ছয় সদস্যকে হত্যা করেছে। এ ইউনিটটি সাধারণত ইসরায়েলের সহযোগীদের ওপর হামলাগুলো পরিচালনা করে থাকে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের সময় আবু শাবাব গাজার এক হামাস-নিয়ন্ত্রিত কারাগারে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে বন্দি ছিলেন। যুদ্ধ শুরুর পর তিনি কীভাবে ছাড়া পেলেন, তা স্পষ্ঠভাবে জানা যায়নি।
বর্তমানে পূর্ব রাফায় শতাধিক সদস্য নিয়ে তার গোষ্ঠীটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সামাজিকমাধ্যমে তাকে ইসরায়েলি এজেন্ট ও বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। হামাস এরমধ্যেই তাকে প্রকাশ্যে হত্যার ঘোষণা দিয়েছে।
এ বিষয়ে হামাস বলেছে, ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বিমান হামলা তাকে রক্ষা না করলে আজই সে আমাদের হাতে ধরা পড়তো।’ তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘ইসরায়েলের তাকে আজীবন রক্ষা করতে পারবে না। আজ না হয় কাল আমরা বিশ্বাসঘাতকদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করবো।’
আরও পড়ুন: খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ গেল ৩১ গাজাবাসীর
ইসরায়লের এমন একটি গোষ্ঠীকে অস্ত্র দেওয়ার পদক্ষেপ গাজাকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা।