ইয়েমেনে কাজ করা রেড ক্রসের প্রধান ফ্রানজ রোচেনস্টিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর জানিয়েছেন, নিহতদের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে অল্প কয়েকজন হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
রেড ক্রসের বিবৃতিতে বলা হয়, বন্দিশালায় প্রায় ১৭০ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে আহত ৪০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং বাকিরা মারা গেছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
‘এ বিপুল ধ্বংসের সাক্ষী হওয়া, ধ্বংসস্তুপের মাঝে লাশ পড়ে থাকতে দেখা ছিল আসলেই এক ধাক্কা। রাগ ও দুঃখ ছিল স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া,’ বলেন রোচেনস্টিন।
যুদ্ধের তথ্য সংরক্ষণ করা ইয়েমেন ডাটা প্রজেক্ট জানিয়েছে, চলতি বছরে জোটের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা ছিল এটি। স্কুল, হাসপাতাল ও বিয়ের অনুষ্ঠানে বিমান হামলা চালিয়ে হাজার হাজার ইয়েমেনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যার জন্য জোট আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে।
ইরানের মদদ পাওয়া হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী দখল করে নেয়ার পর ২০১৫ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ইয়েমেনি সরকারের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয় সৌদি আরব। এ সংঘাতে লাখো মানুষ নিহত এবং আরও কয়েক লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের কিনারায় পৌঁছে গেছে। সেখানে তৈরি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর মানবিক সংকট।
ইয়েমেনি কর্মকর্তারা জানান, রবিবারের হামলার লক্ষ্য ছিল দামার শহরের একটি কলেজ, যা হুতি বিদ্রোহীরা বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহার করছিল।
সৌদি জোট বন্দিশালায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, তারা বিদ্রোহীদের একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
স্থানীয় হাসপাতালে স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা আহত বন্দী নাজেম সালেহ বলেন, ‘আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম এবং মাঝ রাতে হয়তো তিন, চার বা ছয়টি হামলা চালানো হয়। তারা কারাগারটিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল।’ হামলার আগে রেড ক্রস দুবার এ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছিল বলে জানান তিনি।
ইয়েমেন বিষয়ক জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ৫২ জন বন্দী রয়েছেন এবং নিখোঁজ আছেন কমপক্ষে ৬৮ জন।
নিজেদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বন্দিশালা পরিদর্শন করা রেড ক্রস জানিয়েছে, অতীতে তারা সেখানকার বন্দীদের দেখতে গিয়েছিল।
সাবেক বন্দীরা জানিয়েছেন, এখানে আগে হুতিরা অস্ত্র মজুদ ও মেরামত করত।
হুতি পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখমাত্র ইউসেফ আল-হাদহ্রি জানান, ওই চত্বরে তিনটি ভবনে কমপক্ষে সাতটি বিমান হামলা আঘাত হানে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট দাবি করেছে, তারা ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সাথে সংগতি রেখে’ এবং ‘বেসামরিক ব্যক্তিদের রক্ষায় সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে’ একটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হুতিদের সমালোচনা করা ব্যক্তিদের ওই বন্দিশালায় আটক রাখা হত।