চীনা-মালিকানাধীন খনি থেকে এসিড ছড়িয়ে পড়ে দূষিত হয়েছে জাম্বিয়ার সবচেয়ে বড় নদীটি। এতে লাখ লাখ মানুষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশবিদরা।

নদীর ভাটিতে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূষণ শনাক্ত করা হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশটির উত্তরাঞ্চলের তামার খনি থেকে এসিডিক বর্জ্যের একটি টেইলিং ড্যাম (বাঁধ) ভেঙে গেলে এই দূষণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। খনিজ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বর্জ্য রাখার জন্য এই টেইলিং ড্যাম ব্যবহার করা হয়।

দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ঘনীভূত এসিড, দ্রবীভূত কঠিন বস্তু ও ভারী ধাতবের অন্তত পাঁচ কোটি লিটার বর্জ্য কাফু নদীর স্রোতে মিশে গেছে। জাম্বিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলপথ এই নদীটি।

দেশটির কপারবেল্ট প্রদেশের পরিবেশকর্মী চিলিকওয়া মুম্বা বলেন, ‘এটি একটি পরিবেশগত দুর্যোগ যা ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে আসবে।’

দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে তামার খনি উত্তোলনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে চীন। বিশ্বের শীর্ষ ১০ তামা উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে জাম্বিয়া একটি। স্মার্টফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে তামা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।

বিশেষজ্ঞদের সহায়তার আহ্বান জানিয়ে জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হাকাইন্দি হিচিলেমা বলেন, ‘এটি এমন একটি সংকট, যা কাফু নদীর আশপাশের লাখ লাখ মানুষ ও বন্যপ্রাণীর জন্য হুমকি তৈরি করছে।’

দেশটির ভেতর দিয়ে দেড় হাজার কিলোমিটারজুড়ে প্রবাহিত এই নদী। বর্তমানে পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির পরিধি নির্ণয়ে তদন্ত করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

নদীটির বিভিন্ন অংশে সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একজন প্রতিবেদক। খনি থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাটিতে মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখেছেন তিনি।

খনিটি পরিচালনা করছে সিনো-মেটালস লিচ জাম্বিয়া নামের একটি কোম্পানি যার বেশিরভাগ মালিকানা চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ননফেরাস মেটালস ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের।

নদী তীরবর্তী ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কার কথাও জানিয়েছে জাম্বিয়ার পানি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। এমনকি খনির এই দূষণ মাটির গভীরে গিয়ে ভূগর্ভস্থ পানিও দূষিত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কর্তৃপক্ষ।

কাফু নদীর কাছে বাস করেন সিন কর্নেলিউস। তিনি বলেন, ‘১৮ ফেব্রুয়ারির আগে এটি ছিল একটি প্রাণবন্ত নদী। আর সেই নদীটিই এখন প্রাণহীন হয়ে পড়ছে, মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠছে। নদীর আশপাশের পাখিরাও উধাও হয়ে গেছে।’

জাম্বিয়ার দুই কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৬০ শতাংশই কাফু নদীর অববাহিকায় বাস করেন। মৎস্য আহরণ, সেচ ও শিল্প-কারখানার পানির জন্য তারা এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। রাজধানী লুসাকাসহ দেশটির ৫০ লাখ মানুষের খাবার পানির উৎসও এই নদী।

এসিডিক বর্জ্য নদীতে ছড়িয়ে পড়ার কিটওয়ে শহরের পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।