বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। এমনকি বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছেন ট্রাম্প কন্যা ইভাঙ্কা ও তার স্বামী জেরেড কুশনার।
ট্রাম্প ভারতে এলেন এমন সময়ে যখন ভারতের অর্থনীতি কিছুটা চাপের মুখে ও বেকারত্ব বেড়েছে অনেক।আবার নাগরিকত্ব আর কাশ্মীর ইস্যুতে দেশে বিদেশে সমালোচিত হচ্ছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের ইন্ডিয়া প্রজেক্টের ডিরেক্টর তানভি মাদন বলেন, ‘এ সফর তাকে (মোদী) রাজনৈতিকভাবে চাঙ্গা করবে এবং তার জন্য ভালো সংবাদ তৈরি করবে।তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির পাশে দেখা যাবে।’
তবে ভারতীয় উপমহাদেশে ট্রাম্পের 'আমেরিকাই প্রথম' নীতি নিয়ে বিশেষ কোনো আগ্রহ নেই বলেও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
ভারতীয় আমেরিকান ভোটারদের আকৃষ্টের চেষ্টা: সফরটি অনেকের কাছেই একটি সুখকর সফর হিসেবে বিবেচিত কারণ এখানে এসে ট্রাম্পকে কঠিন কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হবেনা কিন্তু তার নিজের রাজনীতির জন্য কিছু পয়েন্ট অর্জনের সুযোগ আছে। দ্বিতীয় বার নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে এটি আমেরিকার ভোটারদের কাছে তার ইমেজ বাড়াবে।
‘তার প্রচার দল বিষয়টি এমনভাবে দেখাবে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সারাবিশ্বে কেমন সমাদৃত,’ বলছিলেন মিজ মাদন।
তাছাড়া ভারতীয় আমেরিকান ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষিত হতে পারে বিশেষভাবে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৫ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক আছেন এবং দেশটির রাজনীতিতে ভারতীয়রা একটি ক্রম বর্ধিষ্ণু শক্তি হিসেবে বেড়ে উঠছে। সাধারণত তারা ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়ে থাকে।
ন্যাশনাল এশিয়ান আমেরিকান সার্ভে অনুযায়ী ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প ভারতীয় ভোটের মাত্র ১৬ শতাংশের ভোট পেয়েছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্তিক রামাকৃষ্ণানন বলেন, ‘সরকারের ছোটো আকার কিংবা কর কর্তনে ভারতীয় আমেরিকানরা বিশ্বাস করেনা। তারা সামাজিক খাতে ব্যয় বাড়ানোকে পছন্দ করে।’
গত সেপ্টেম্বরে হিউস্টন, টেক্সাসে নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বড় সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প যেখানে মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ‘ট্রাম্পের চেয়ে ভালো প্রেসিডেন্ট আর কাউকে আপনারা পাননি।’
বাণিজ্য চুক্তি: সফরের মূল কেন্দ্রে আছে একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি। গত কয়েক মাস ধরে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে দু পক্ষের মধ্যে। দুদেশের মধ্যে এখন বাণিজ্যের পরিমাণ ১৬০ বিলিয়ন ডলার।
তারপরেও উদ্বেগ আছে আমেরিকানদের দিক থেকে বিশেষ করে ভারতের শুল্ক বাড়ানো, দাম নিয়ন্ত্রণ কিংবা ই-কমার্স নিয়ে। দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন নিয়ে উদ্বেগ তো আছেই।
ভারত জিএসপি সুবিধার আওতায় প্রাপ্ত শুল্ক সুবিধা পেতে চায়, যা ট্রাম্প ২০১৯ এ বাতিল করেছিলেন।
‘এমনকি একটি স্বল্পমাত্রার চুক্তিও একটি ইঙ্গিত দেয় যে বাড়ন্ত বাণিজ্য নিয়ে দুদেশই বেশ সিরিয়াস,’ বলছিলেন ইউএস ইন্ডিয়া বিজনেসের প্রেসিডেন্ট নিশা বিশওয়াল।
চীন ফ্যাক্টর: ট্রাম্পের রাজনৈতিক ব্র্যান্ড হলো চীনের প্রতি কঠোর হওয়া, বিশেষ করে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়ে বেশ উদ্বেগ আছে যুক্তরাষ্ট্রের।
মাদন বলেন, ‘আমি মনে করিনা যে এই সফরে তারা চীন নিয়ে কোনো আলোচনা করবেন না। বিশেষ করে এ অঞ্চলের চীনের কার্যক্রম নিয়ে দু পক্ষেরই উদ্বেগ আছে।’
চীন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধের প্রভাব পড়েছে ভারতের অর্থনীতিতেও কিন্তু চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেশি ঘনিষ্ঠতা হলে সেটি ভারতকে হিসেবের বাইরে নিয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন আছে যে চীনের যোগ্য প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত তৈরি হতে পারে কিনা। সেক্ষেত্রে ট্রাম্প মোদীর ভারতকে ভালো বন্ধু হিসেবে পেতেই পারেন।
প্রতিরক্ষা: গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে প্রতিরক্ষা খাতে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হতে যাচ্ছে ট্রাম্পের সফরের সময়।
এ সফরের আগেই স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিলিয়ন ডলারের বেশি দামে সমন্বিত এয়ার ডিফেন্স উইপন সিস্টেম বিক্রির বিষয়টি অনুমোদন করেছে। প্রতিরক্ষা খাতে ক্রেতা তালিকায় বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে ভারত। রাশিয়া ও ফ্রান্স থেকেও বড় ধরণের কেনাকাটা করেছে তারা।
ট্রাম্প যদি কিছু বিক্রি করতে পারেন তাহলে ভোটারদের বোঝাতে পারবেন যে এতে করে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে।
'ট্রাম্প মোদী রসায়ন': আট মাসের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে এটা হবে পঞ্চম সাক্ষাৎ। তারা একে অপরকে 'বন্ধু' সম্বোধন করে থাকেন। একে অন্যকে হাগ করার অনেক ছবি আছে।
‘ভারতে আমরা ভালোভাবে সমাদৃত নই কিন্তু মোদীকে আমি অনেক পছন্দ করি,’ একথা সফরের আগে ট্রাম্প বলেছেন সংবাদকর্মীদের।
জন হপ্কিন্স স্কুলের জসুয়া হোয়াইট বলেন, এ সফরেই সব পরিষ্কার হবেনা তবে আমলারা নিশ্চয়ই দেখবেন হিসেব করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কতটা অর্জিত হলো।