বৈশ্বিক বাণিজ্য এখন ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এ কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে ‘বাণিজ্যযুদ্ধে’ না জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বুধবার (৯ জুলাই) আসিয়ান জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই সতর্কতার আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের কারণে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো বর্তমানে উদ্বিগ্নতার মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে এই সতর্কতা দিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের আঞ্চলিক জোট হচ্ছে আসিয়ান। বিশ্বের সবচেয়ে বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর বেশ কয়েকটি এই জোটের সদস্য বলে মনে করা হয়। তবে জোটের ১০টির মধ্যে আটটি দেশই পড়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের মুখে, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে আনোয়ার বলেন, বিশ্ব এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে নীতিকে অস্থির করে তুলছে ক্ষমতা। একসময় যে বিষয়গুলো প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হতো, এখন তা চাপ সৃষ্টি, একঘরে করা ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও চলমান বাণিজ্য হুমকি মোকাবিলায় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
জোটভুক্ত দেশগুলোকে পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়ানো, আঞ্চলিক সংহতি জোরদার এবং বাইরের শক্তির ওপর নির্ভরতা কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের সংহতি কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমিত থাকলে চলবে না। এই বাণিজ্য হুমকি কোনো ক্ষণস্থায়ী ঝড় নয়। এটি আমাদের সময়ের নতুন বাস্তবতা।’
চলতি বছরের এপ্রিলে প্রথম এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অবশ্য সমঝোতার সুযোগ দিতে সে সময় ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করা হয়। এরপর সোমবার (৭ জুলাই) ও বুধবার (৯ জুলাই) নতুন করে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ হারে, কোনো দেশের ওপর আবার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। কোনো সমঝোতায় না এলে ১ আগস্ট থেকে এই হারে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে, কোনো দেশ পাল্টা পদক্ষেপ নিলে তার বিরুদ্ধে আরও শুল্ক বাড়ানোর হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
প্রথমবারে শুল্ক আরোপের পর কেবল ভিয়েতনামই একটি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হার ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামাতে পেরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, ব্রাজিলের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ওপর ৩৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের ওপর ২৫ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ২০ শতাংশ, আর লাওস ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে পারে। বাংলাদেশের ওপরও শুল্কের এই খড়্গ নেমে এসেছে ৩৫ শতাংশ হারে।
আসিয়ানভুক্ত অনেক দেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে তারা যৌথ অবস্থান তৈরির চেষ্টা করবে।