স্পেনে ভারী বর্ষণের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির জরুরি উদ্ধার পরিষেবা বিভাগ।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবারের মধ্যে আঘাত হানা এ বন্যায় শুধু ভালেন্সিয়া প্রদেশেই ১৫৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে প্রাদেশিক প্রশাসন। এছাড়া, আন্দালুসিয়া ও ক্যাসটিয়া মাঞ্চায় আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ভালেন্সিয়ার জরুরি সমন্বয়কেন্দ্র জানিয়েছে, উদ্ধারকর্মীরা এখনও হতাহতদের সন্ধান করছে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বৃহস্পতিবার ভালেন্সিয়ায় উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার তদারক সংস্থা সেন্টার ফর কোঅর্ডিনেটেড অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড অপারেশন্স (সিইসিওপিআই) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে বলেন, চরম আবহাওয়া এখনও শেষ হয়নি।
১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের ঘটনা দেখছে ভালেন্সিয়া। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোরের মধ্যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিছু অঞ্চলে প্রতি বর্গমিটারে ৪০০ লিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বহু মানুষ ও যানবাহন ভেসে যায়। পাশাপাশি স্থানীয়দের বেশিরভাগই তাদের বাড়িতে আটকা পড়েছে এবং সম্পত্তি ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।
আরও পড়ুন: স্পেনে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৫
টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভালেন্সিয়ার সঙ্গে মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার সংযোগকারী প্রধান সড়কগুলো এখনও চলাচলের উপযোগী হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গ্যারেজ থেকে কাদা পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। অনেকে আবার কাদায় ঢাকা ধ্বংসস্তূপ থেকে জিনিসপত্র উদ্ধার করছেন।
এদিকে, দেশটির ছোট্ট শহর পাইপোর্তায় তিন মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসের কারণে অন্তত ৪৫ জন নিহতের খবর দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বলেন, ‘ভালেন্সিয়াবাসীর এই বিপদের দিনে আমরা তাদের পাশে রয়েছি। এই বিপর্যয়ের মধ্যে আমরা তাদের একা ছেড়ে দেইনি। তাদের টিকে থাকার লড়াইয়ে যতটা সম্ভব প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এছাড়া, মাদ্রিদে এক অনুষ্ঠানে রাজা ষষ্ঠ ফেলিপে এই বিপর্যয়কর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনিও সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন যে, জরুরি অবস্থা এখনও শেষ হয়নি।
বৃহস্পতিবার ভালেন্সিয়ার উত্তরাঞ্চলে আরও মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ভালেন্সিয়া ও মাদ্রিদের মধ্যে দ্রুতগতির রেলযোগাযোগ অন্তত দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পরিবহনমন্ত্রী অস্কার পুয়েন্তে। বন্যায় ভালেন্সিয়ার প্রায় ৮০ কিলোমিটার স্থানীয় ও আঞ্চলিক রেলপথ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে স্পেনের সামরিক বাহিনীর জরুরি ইউনিটের প্রায় এক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, যারা উদ্ধার ও পরিষ্কার অভিযানে সহায়তা করছে। তবে নিখোঁজদের সবাইকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে আগামী দিনগুলোতে আরও লাশ পাওয়া যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: রেকর্ড তাপপ্রবাহে স্পেনে ৩ জনের মৃত্যু
হঠাৎ এমন মুষলধারে বৃষ্টিপাতকে আবহাওয়াবিদরা ‘বিচ্ছিন্ন অতি-গভীর নিম্নচাপ’ বা ডিএএনএ নামে আখ্যায়িত করেছেন। ভূমধ্যসাগরের উষ্ণ স্রোত অতিক্রম করার সময় ঘটে বায়ুমণ্ডলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ডিএএনএ-র কারণে ১৯৫৭ ও ১৯৬৬ সালেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে স্পেন। সে সময়েও তুরিয়া নদী উপচে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ভালেন্সিয়া শহরকে কার্যত ধ্বংস করে দেয়।
এ ঘটনায় স্পেন সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। অপরদিকে, ভালেন্সিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য সমস্ত ম্যাচ স্থগিত করেছে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন, যার মধ্যে শনিবার ভালেন্সিয়া ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যকার কোপা দেল রের ম্যাচও রয়েছে।