বেআইনিভাবে বিয়ের অভিযোগে করা মামলায় বেকসুর খালাস পেলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি।
এর আগে ওই মামলায় দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ড শনিবার (১৩ জুলাই) বাতিল করেছে দেশটির একটি আদালত।
রায়ের বিষয়ে খানের আইনজীবী বলেন, বেআইনিভাবে বিয়ের অভিযোগে ২০১৮ সালে দায়ের করা এক মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রীকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। তাকে কারাগারে পাঠানোর প্রায় এক বছর পর এ রায় দেওয়া হলো।
ইমরান খানের অন্যতম আইনজীবী নাঈম পাঞ্জুথা বলেন, আদালত রাওয়ালপিন্ডির গ্যারিসন শহরে এই রায় ঘোষণা করেন। আর এখানেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আটক রাখা হয়েছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি আপিল আদালত ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির দোষী সাব্যস্ত করে সাজা বহাল রাখেন। ওই আদেশের দুই সপ্তাহ পর খালাস পেলেন তারা।
আদালত তার সংক্ষিপ্ত আদেশে বলেছে, যদি এই দম্পতিকে অন্য কোনো মামলায় অভিযুক্ত না করা হয় তবে তাদের মুক্তি দিতে হবে।
বিবি হলেন খানের তৃতীয় স্ত্রী এবং একজন আধ্যাত্মিক গুরু। খানের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার মাত্র তিন মাসেরও কম সময় আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে পূর্বের স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল বিবির। পাকিস্তানের ইসলামি আইন অনুযায়ী, বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া নারীদের ক্ষেত্রে নতুন বিয়ের আগে তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়।
বিবি বলেছেন, ২০১৭ সালের আগস্টে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। এই দম্পতি বিচারের সময় জোর দিয়েছিলেন তারা অপেক্ষার সময়সীমা লঙ্ঘন করেননি।
আদালতের আদেশে সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা স্পষ্ট নয়। ২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে কর্তৃপক্ষ।
ইমরান খানের দলকে অন্যায়ভাবে সংসদে কমপক্ষে ২০টি আসন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার একদিন পর এই আদেশ এলো। এটি দেশটির দুর্বল শাসক জোটের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের দুর্নীতির মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ড স্থগিত
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টিকে এর আগে জাতীয় পরিষদ বা সংসদের নিম্নকক্ষে নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত অতিরিক্ত আসন দেওয়ার ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। যদিও এই রায় ইমরান খানের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক বিজয় ছিল। তবে এটি তার দলকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো অবস্থানে রাখতে পারবে না। শাহবাজ গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পরে ক্ষমতায় আসেন। তবে ভোটে কারচুপি হয়েছে বলে দাবি করে আসছেন খানের মিত্ররা।
২০২৩ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে সহিংসতায় উস্কানিসহ দেড় শতাধিক মামলায় জড়ানো হয় ইমরান খানকে। এরপরে সারা দেশে দাঙ্গার সময় খানের সমর্থকরা সামরিক ও সরকারি ভবনগুলোতে আক্রমণ করে। উত্তর-পশ্চিমে রাষ্ট্রায়ত্ব রেডিও পাকিস্তানের আবাসিক একটি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা।
সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানকে মুক্তি দেওয়ার পরেই সহিংসতা কমেছিল। দুর্নীতির দায়ে আদালত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পরে ২০২৩ সালের আগস্টের শুরুতে খানকে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর থেকে যেসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সেসব মামলায় বিভিন্ন আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ১৪ বছরের কারাদণ্ড