বিষাক্ত ধূসর ধোঁয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির আকাশ। গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে রাজ্যের সব স্কুল বন্ধ এবং নির্মাণকাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মানুষ মাস্ক পড়ে রাস্তায় বের হতে বাধ্য হচ্ছে।
বছরের এই সময়ে শহরটির বাতাসের মান সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়।
কর্তৃপক্ষ গুরুতর বায়ু দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সংগ্রাম করছে। যার ফলে প্রতি বছর শহরের ২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।
ভারতের প্রধান পরিবেশ পর্যবেক্ষণ সংস্থা এসএএফএআর -এর মতে, মঙ্গলবার বায়ুর গুণমান সূচকে দিল্লির বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণা ৪০০ চিহ্নের কাছাকাছি চলে গেছে। এই স্তরটি বিপজ্জনক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা সীমার ১০ গুণেরও বেশি। টানা পঞ্চম দিন এই অঞ্চলে বাতাসের মান বিপজ্জনক।
ইন্ডিয়া গেট স্মৃতিস্তম্ভের কাছে মাস্ক পড়ে বেড়াতে আসা অন্ধ্র প্রদেশের বাসিন্দা শ্রীনিবাস রাও নামের একজন দর্শনার্থী বলেন, ‘বাতাসে অনেক ধোঁয়াশা আছে। আমি বায়ুর মানের সূচকটি দেখছি এবং এই জলবায়ু সম্পর্কে ভয় পাচ্ছি।’
কর্তৃপক্ষ ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য পানির স্প্রিঙ্কলার এবং অ্যান্টি-মগ বন্দুক মোতায়েন করেছে। এছাড়া ধোঁয়া সৃষ্টিকারী পেট্রল ও ডিজেল গাড়ি, বাস ও ট্রাক ব্যবহারকারী চালকদের জন্য ২০ হাজার টাকা (২৪০ ডলার) জরিমানা ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে, চিকিৎসকেরা বাসিন্দাদের মাস্ক পরার এবং যথাসম্ভব বাড়ির বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ বাতাসে মিশে থাকা ধোঁয়াশা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, ফ্লু ও হাঁপানির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
আরও পড়ুন: আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩: দিল্লির বাতাস বিপজ্জনক, ঘনিয়ে আসছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ম্যাচ
অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সোমবার বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলকে সপ্তাহান্তে নয়াদিল্লিতে তাদের প্রশিক্ষণ সেশন বাতিল করতে হয়। দূষণের ফলে ভারতে আয়োজিত চলমান ক্রিকেট বিশ্বকাপ ব্যাহত করারও হুমকি দেখা দেয়।
গত সপ্তাহে এয়ার পিউরিফায়ারের চাহিদা বেড়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
রেনু আগরওয়াল (৫৫) নামের এক নারী বলেন, বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন এই সপ্তাহান্তে দীপাবলি (হিন্দুদের আলোত প্রজ্বলনের উৎসব, যাতে আতশবাজি জ্বালানো হয়) উৎসবের ফলে ধোঁয়াশার অবস্থা আরও শোচনীয় হবে। তার মেয়ের ডাস্ট অ্যালার্জি আছে, দূষণের ফলে তার শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘সে শ্বাস নিতে পারে না। যদিও আমরা আমাদের বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখি, তবুও দূষণের ফলে তার অবস্থা এমনটাই খারাপ যে এমনকি ওয়াশরুমে যাওয়াও তার পক্ষে কঠিন। তার শ্বাসকষ্ট হয়।’
প্রায় প্রতি বছরই ভারতের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার শীর্ষে থাকে নয়াদিল্লী। বিশেষ করে শীতকালে, যখন প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর সময় এবং শীতল তাপমাত্রার একসঙ্গে মিলে যায়; যা বিপজ্জনক ধোঁয়াকে আটকে রাখে।
শীতকালীন গম-বপনের মরসুমের শুরুতে ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলা উত্তর ভারতে দূষণের একটি প্রধান কারণ।
কর্তৃপক্ষ কাজ করার জন্য মেশিন কেনার জন্য নগদ প্রণোদনা দিয়ে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে।
কিন্তু পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি অনুসারে, এখনও নয়াদিল্লির দূষণের ২৫ শতাংশের জন্য দায়ী ফসল পোড়ানোর ধোঁয়া।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশি, ভারতীয়, নেপালি ও পাকিস্তানিদের গড় আয়ু ৫ বছর কমবে: একিউএলআই
রেসপাইয়ার লিভিং সায়েন্সেস এর তথ্যমতে, নয়াদিল্লিতে ২০১৯ ও ২০২০ সালের মধ্যে বাতাসে ক্ষুদ্র কণার তীব্রতা ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ২০২১ সালে তা ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ হ্রাস পায় এবং ২০২২ ও ২০২৩ সালে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মারাত্মক বায়ু দূষণ সংকট শহরের প্রতিটি বাসিন্দাকে প্রভাবিত করছে। কিন্তু বাইরে কাজ করা লাখ লাখ মানুষ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
অটোরিকশা চালক গুলশান কুমার জানান, তার নাক, গলা ও চোখ নিয়মিত বাতাসের ময়লায় ভরে যায়। তার সন্তানরা তাকে বিহার রাজ্যে তার নিজ শহরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে।
তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে কেন আমি এই দূষিত ও অসুস্থ শহরে কাজ করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি বাড়িতে আমার কোনো চাকরি থাকত, আমি দিল্লিতে কাজ করতে আসতাম না।’