মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ যখন বাড়িয়ে দিয়েছেন, তখন শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে বেইজিং। বুধবার (৫ মার্চ) সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে রাজস্ব যুদ্ধ, বাণিজ্য যুদ্ধ কিংবা যেকোনো যুদ্ধই হোক—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথা রয়েছে। এরমধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে ঢোকার পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে জোরালো মন্তব্যটি এসেছে চীনের পক্ষ থেকে।
চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প। এতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য প্রবেশে ক্রমবর্ধমান শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশ। জবাবে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘চীনের ওপর চরম চাপ প্রয়োগ করা হলে সেটা ভুল নিশানা ও ভুল হিসাব হবে...যদি যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে এবং শুল্কযুদ্ধ, বাণিজ্য যুদ্ধ কিংবা অন্য যেকোনো যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, চীন শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবে।’
‘কাজেই যত দ্রুত সম্ভব ঔদ্ধত্যপূর্ণ চেহারা দূরে রেখে সংলাপের ও সহযোগিতার সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিচ্ছে চীন।’
‘যেকোনো যুদ্ধের’ এই মন্তব্য পরে ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাস থেকেও রিপোস্ট করে লিখেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধই চায় না কেন, হোক সেটা রাজস্ব যুদ্ধ, বাণিজ্য যুদ্ধ কিংবা অন্য যে কোনো যুদ্ধ—আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত আছি।’
আরও পড়ুন: দেশগুলো ট্রাম্পের শুল্কারোপের পাল্টা জবাব দেবে কীভাবে?
যেকোনো যুদ্ধ বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে, জানতে চাইলে লিন জিয়ান বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন কোনো অভিপ্রায় থাকে এবং চীনা স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রতি জোর দেয়, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফক্স নিউজকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার হেগসেথ বলেন, ‘যদিও চীনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কোনো যুদ্ধ চাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র, তবে আমরা প্রস্তুত।’
‘আমরা এক বিপজ্জনক বিশ্বে বাস করছি, যেখানে শক্তিশালী ও উদীয়মান দেশগুলোর ভিন্ন আদর্শ রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি। ‘যদি আমরা চীনা কিংবা অন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ নিবৃত্ত করতে চাই, আমাদের শক্তিশালী হতে হবে,’ বলেন তিনি।
চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ফেনটানিল প্রবেশ নিয়ে মার্কিন শুল্কারোপ চেষ্টায় কঠোর আপত্তি জানিয়েছে বেইজিং। অতিমাত্রায় ফেনটালিন সেবনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর এই ভয়াবহ মাদক সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় চীন ও মেক্সিকোতে। তবে ফেনটালিন সংক্রান্ত শুল্কারোপকে ‘ঠুনকো অজুহাত’ বলে উল্লেখ করেছে চীন।
চলতি সপ্তাহে মার্কিন কৃষি পণ্যে পনেরো শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ করে প্রতিশোধ নিয়েছে বেইজিং। সয়াবিনসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যই চীনে সবচেয়ে বেশি রফতানি করে যুক্তরাষ্ট্র।
সর্বশেষ চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের সময় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন কিনেছে চীনা আমদানিকারকরা।