ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি।
শুক্রবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শীর্ষ উপদেষ্টা আলী লারিজানির সঙ্গে আলোচনায় মিকাতি এ মন্তব্য করেন।
এমন এক সময় লারিজানি লেবানন সফরে গিয়েছেন যখন ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ১৩ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে উভয় পক্ষের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
হিজবুল্লাহর প্রধান সমর্থক ইরান। কয়েক দশক ধরে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছে দেশটি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলার পরদিন ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজায় আগ্রাসন শুরু করলে হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট নিক্ষেপ শুরু করে।
তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি নাগরিকদের স্থায়ী নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে হিজবুল্লাহর সব অস্ত্রাগার ও স্থাপনা ধ্বংস করে সংগঠনটিকে নির্মূল করার অঙ্গীকার কারছে তারা।
আরও পড়ুন: লেবাননে যুদ্ধবিরতি হবে না: ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০০ জনের বেশি লেবানিজ নিহত হয়েছেন, যার ৮০ শতাংশই ঘটেছে গত মাসে।
এদিকে লেবাননের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, লেবাননের পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরির কাছে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি খসড়া হস্তান্তর করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিসা জনসন।
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হিজবুল্লাহর নেতুত্ব দিচ্ছেন বেরি।
২০০৬ সালে সর্বশেষ ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের অবসান ঘটানো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে একটি খসড়া প্রস্তাবের অনুলিপি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন লেবাননের একজন কর্মকর্তা।
ওই প্রস্তাবে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বলা হয়, দক্ষিণ লেবাননে কেবল লেবাননের সেনাবাহিনী ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা কাজ করবে, অর্থাৎ হিজবুল্লাহকে সেখান থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে হবে। অবশ্য এই বিধান কখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
তবে একটি ছোট, বিতর্কিত সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে লেবাননের ওপর দিয়ে ঘন ঘন সামরিক অভিযান চালিয়ে ওই প্রস্তাব লঙ্ঘন করছে বলে ইসরায়েলের প্রতিও লেবাননের অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লেবাননের ওই কর্মকর্তা এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে শুধু এটুকু বলেছেন যে, চুক্তিতে ইসরায়েল কিছু নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোর দিচ্ছে।
মার্কিন দূতাবাস এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করতে অস্বীকার করেছে। তবে এটি মিথ্যা কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে গেছে তারা।
আরও পড়ুন: লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রবাসী বাংলাদেশি নিহত
তবে লারিজানির সঙ্গে আলোচনা চলাকালে মিকাতি ইরানকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, লেবানন সরকার চায় যে প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হোক।
হিজবুল্লাহকে পৃষ্ঠপোষকতা করায় ইরানের সমালোচনা করে মিকাতি বলেন, (লেবানন) সরকার চায়, এক পক্ষকে সমর্থন করে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে ইরান যেন লেবাননের জাতীয় ঐক্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।
মিকাতি ও বেরির সঙ্গে বৈঠকের পর লারিজানি বলেন, ইরান যে লেবাননের সরকার ও জনগণের পাশে থাকতে চায় তা প্রকাশ করাই এই সফরের মূল উদ্দেশ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা ইরান বানচাল করার চেষ্টা করছেন কিনা- জানতে চাইলে লারিজানি বলেন, ‘আমরা কোনো প্রচেষ্টা উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি না। সমস্যার সমাধান করতে আমরাও চাই এবং পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমরা লেবাননের পাশে থাকব।’
প্রসঙ্গত, লেবাননের শিয়া মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠী হিসেবে দেশটির রাজনীতিতে গত এক দশক ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসছে হিজবুল্লাহ। তবে ইরানের সমর্থনের ফলে দেশটিতে টিকে থাকার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামরিকভাবেও লেবাননে আধিপত্য ধরে রেখেছে গোষ্ঠীটি।