তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি প্রচারাভিযান বিজ্ঞাপনে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী লাই চিং-তের সঙ্গে এক গাড়িতে দেখা যায়। ওই বিজ্ঞাপনে যাত্রীর আসনে বসে ছিলেন সাই ও লাই। বিজ্ঞাপনে তাদের একসঙ্গে দেশ শাসন করার বছরগুলোরর প্রতিচ্ছবিও বিনিময় করেন তারা। সাই পরে লাইকে চালকের আসনে বসান।
বিজ্ঞাপনে বার্তাটি স্পষ্ট ছিল: ৮ বছর ক্ষমতায় থেকে দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানকে সাই যেদিকে ধাবিত করেছেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে লাই সেদিকেই দেশকে নিয়ে যাবেন।
সোমবার তাইওয়ানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ৬৪ বছর বয়সী লাই চিং-তে।
সাইয়ের উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখার অর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গড়ে তোলা তাইওয়ানের অনানুষ্ঠানিক বন্ধুত্ব ধরে রাখা। একইসঙ্গে তাইওয়ানকে নিজেদের অঞ্চল দাবি ও জোর করে পুনর্দখল করতে চাইলেও চীনের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার মাধ্যমে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা।
আরও পড়ুন: তাইওয়ানকে কখনো ছুড়ে ফেলবে না যুক্তরাষ্ট্র: পেলোসি
সবশেষ নির্বাচনে লাই ও সাইয়ের ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। ফলে জাতীয় প্রতিরক্ষা বাজেটের অনুমোদনসহ গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করা লাইয়ের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। দেশে এমন রাজনৈতিক অচলাবস্থা থাকা সত্ত্বেও সাইয়ের করে যাওয়া কিছু সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও হবে নবনির্বাচিত এই প্রেসিডেন্টের অন্যতম দায়িত্ব।
৬৭ বছর বয়সী সাই তাইওয়ানের প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি এবং রাজনৈতিক রাজবংশের সদস্য নন- এশিয়ার এমন গুটিকয়েক নারী নেতৃত্বের একজন। তার গড়া রাজনৈতিক ঐতিহ্য হচ্ছে চীনের কাছ থেকে তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করা। তাইওয়ানের সামরিক ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, সমলিঙ্গের মানুষের বিবাহের বৈধতা ও কোভিড মহামারির মধ্যেও শক্ত হাতে দেশ পরিচালনার জন্য তাকে দীর্ঘদিন সস্মরণ করবে দেশটির জনগণ।
সাইয়ের জনপ্রিয়তা আংশিকভাবে তাইওয়ানের পরিচয়ের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। দেশটির নাগরিকদের বড় একটি অংশ এখন নিজেদের চীন-বিরোধী ও তাইওয়ানিজ হিসেবে পরিচয় দেয় এবং বেইজিং থেকে পৃথক হয়ে আলাদাভাবে শাসিত হতে চায়।
১৯৯২ সালের ঐক্যচুক্তি অস্বীকার করার পর সাইকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আখ্যা দেয় বেইজিং। ওই চুক্তিতে বলা ছিল, তাইওয়ান হচ্ছে ‘একক চীনের’ একটি অংশ।
আরও পড়ুন: তাইওয়ানে ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন, মৃত্যু বেড়ে ১৩
তবে চীনের আশ্রয় থেকে বের হলেও বেইজিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগের দরজা তিনি সবসময় খোলা রেখেছেন। কিন্তু আলোচনার পরিবর্তে দ্বীপটিতে সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে চীন। তাইওয়ান উপকূলের কাছে প্রতিদিনই অন্তত দুটি করে যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে বেইজিং।
সাই দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন লাই। কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি একজন ‘ফায়ারব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিতি পান।
২০১৭ সালে তিনি বেইজিংয়ের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে নিজেকে ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার জন্য বাস্তববাদী কর্মী’ হিসেবে আখ্যা দেন। তবে তারপর থেকে নিজের অবস্থান অনেকটা নমনীয় করেছেন লাই। তাইওয়ান প্রণালীতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা ও বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনার মতো বিষয়গুলোতে বর্তমানে সমর্থন দেন তিনি।
লাইকে নিয়ে ন্যাশনাল চেংচি ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক লেভ নাচম্যান বলেন, “গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে লাই বিশ্বকে এটি বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, তিনি ‘সাই ইং-ওয়েন ২.০’।”
তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাইয়ের গড়ে তোলা সম্পর্কের ভিত্তি জোরদার করার চেষ্টা করবেন নবনির্বাচিত এ প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না দিলেও দ্বীপটির বাসিন্দাদের আত্মরক্ষায় বদ্ধপরিকর।
নাচম্যান বলেন, ‘এতকিছুর পরও লাইয়ের বৈদেশিক কূটনীতিতে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা আসতে পারে ওয়াশিংটন থেকেই। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে সরকার গঠন করলে সাইয়ের এত বছর ধরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সঙ্গে গড়ে তোলা সম্পর্ক বিফলে যেতে পারে।