ক্যালিফোর্নিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারণে অঙ্গরাজ্যটির গভর্নরের আপত্তি সত্ত্বেও লস অ্যাঞ্জেলেসে ২ হাজারের মতো জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
স্থানীয় সময় শনিবার (৭ জুন) ক্যালিফোর্নিয়ার বিশৃঙ্খলা দমনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম। সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ উসকানিমূলক এবং এটি কেবল উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’
সম্প্রতি ১১৮ জন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) কর্মকর্তারা। তাদের দাবি গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজন অপরাধী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এবং কিছু ব্যক্তির আগের ফৌজদারি রেকর্ড রয়েছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ১৯ দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেন ট্রাম্প
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ( ৬ জুন) ফ্যাশন ডিস্ট্রিক্টে একটি পোশাকের গুদামের বাইরেও অভিযান চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস ও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি অফিসের প্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, ওই কোম্পানির এক নিয়োগকর্তা কিছু কর্মীর জন্য ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করছিলেন।
অভিবাসী অধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেন, হোম ডিপোর দোকানগুলোর বাইরে এবং একটি ডোনাট শপের সামনেও অভিবাসীদের আটকের ঘটনা ঘটে।
এর পরপরই গ্রেপ্তার ও আটকদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ দ্বিতীয় দিনেও চলতে থাকায় এবং টিয়ার গ্যাস ও ধোঁয়ায় বাতাস ভরে উঠলে হোয়াইট হাউজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ জোরদার করে। বর্ডার প্যাট্রোলের দাঙ্গা-প্রতিরোধী ইউনিট মোতায়ন করা হয় বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের আগ্রাসী অবস্থান বোঝাতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্স পোস্টে বলেন, ‘যদি সহিংসতা চলতেই থাকে, তাহলে ক্যাম্প পেন্ডলটনের অ্যাকটিভ ডিউটি মেরিনদেরও মোতায়েন করা হবে— তারা সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছে।’
এদিকে, নিউসামের অফিস জানায়, ‘টাইটেল ১০’ কর্তৃত্ব ব্যবহার করে ক্যালিফোর্নিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি অংশ ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে এনেছেন ট্রাম্প, যার ফলে গভর্নর নয়, এখন কমান্ড চেইনের শীর্ষে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিজেই।
এ বিষয়ে, হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, বিক্ষোভের সময় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ যে কাজ করেছে, তা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অপরাধীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও তাদের ফিরিয়ে দিতে অপরিহার্য। এই সহিংসতার প্রেক্ষিতে ক্যালিফোর্নিয়ার অদক্ষ ডেমোক্র্যাট নেতারা তাদের নাগরিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব পুরোপুরি ত্যাগ করেছেন।’
সেনা মোতায়নের আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি নিউসাম ও লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস নিজেদের কাজ না করেন, তাহলে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করবে এবং সমস্যা সমাধান করবে। যেভাবে দাঙ্গা ও লুটপাটকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, ঠিক সেভাবেই করবে।’
এর আগে, ২০২০ সালে মিনিয়াপলিসে জর্জ ফ্লয়েডকে পুলিশ হত্যা করার পর শুরু হওয়া বিক্ষোভ দমন করতে ট্রাম্প একাধিক রাজ্যের গভর্নরদের ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ করেন। অনেক গভর্নর তাতে সম্মত হয়ে ফেডারেল জেলার উদ্দেশ্যে সেনা পাঠানো হয়েছিল।
এ ছাড়াও ট্রাম্প তখন বিদ্রোহ দমন আইন প্রয়োগের হুমকিও দিয়েছিলেন। আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে এটি খুব কমই ব্যবহৃত হয়েছে। তবে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে বলেন, এটি ‘শুধুমাত্র সবচেয়ে জরুরি ও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে’ প্রয়োগ করা উচিত।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ওই আইন কার্যকর করেননি এবং শনিবারও তিনি এটি কার্যকর করেননি বলে জানিয়েছেন ক্যারোলিন লেভিট ও গ্যাভিন নিউসাম।
আরও পড়ুন: পুতিন ‘পুরোপুরি পাগল’ হয়ে গেছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প
এই বিক্ষোভে যাদের গ্রেপ্তার করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেন সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়নের আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট ডেভিড হুয়ের্তা। বিচার বিভাগীয় মুখপাত্র কিয়ারান ম্যাকএভয় বিষয়টি নিশ্চিত করেন। হুয়ের্তার আইনি প্রতিনিধিত্ব রয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
ডেমোক্র্যাট সিনেট ও সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার তার অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমর এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘মুক্তভাবে মত প্রকাশের অধিকার চর্চার কারণে মার্কিন নাগরিকদের গ্রেপ্তার ও আটকের একটি ভয়ানক ঘটনা দেখা যাচ্ছে।’
এই অভিবাসন গ্রেপ্তারগুলো এমন সময়ে হচ্ছে, যখন ট্রাম্প ও তার প্রশাসন দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে অভিবাসীদের বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস বলেন, ‘এই কর্মকাণ্ড দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে ভয় তৈরি করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।’