শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন মার্কসবাদী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে।
শনিবারের নির্বাচনে মার্কসবাদী ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার কোয়ালিশনের প্রধান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৫৫ বছর বয়সি দিশানায়েকে বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ও আরও ৩৬ জন প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন।
দিশানায়েকে পেয়েছেন ৫৭ লাখ ৪০ হাজার ১৭৯ ভোট আর প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ৯০২ ভোট।
নির্বাচনে জয় লাভ করায় দিশানায়েককে অভিনন্দন জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বকে যৌথভাবে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।
এর আগে দিশানায়েককে অভিনন্দন জানায় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত।
দায়িত্ব গ্রহণের পর সংক্ষিপ্ত ভাষণে দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্যদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট।
দিশানায়েকে বলেন, 'আমরা গভীরভাবে বুঝতে পেরেছি যে একটি চ্যালেঞ্জিং দেশ পেতে যাচ্ছি। একটি সরকার, একক দল বা কোনো ব্যক্তি এই গভীর সংকটের সমাধান করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।’
প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী দীনেশ গুনাবর্ধনে পদত্যাগ করেন, যাতে নতুন প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা নিয়োগ দিতে পারেন।
দেশটি যখন সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট এবং এর ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে চাইছে তখন এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
১৯৭৮ সালে শ্রীলঙ্কার নতুন সংবিধানের পর দিশানায়েকে দেশটির নবম প্রেসিডেন্ট।
দিশানায়েকের জোটের নেতৃত্বে রয়েছে মার্কসবাদী দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনা বা পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট, যা ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের জন্য দুটি ব্যর্থ সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়েছিল। পরে ১৯৯৪ সালে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে প্রবেশ করে দলটি। এরপর থেকে বেশিরভাগ সময়ই বিরোধী দলে ছিল।
দিশানায়েকে ২০০০ সালে প্রথম সংসদে নির্বাচিত হয়ে এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার অধীনে সংক্ষিপ্তভাবে কৃষি ও সেচমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরে তিনি ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং গোতাবায়া রাজাপাকসের কাছে হেরে যান।
দিশানায়েকের প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ হবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ত্রাণ চুক্তির আওতায় তার পূর্বসূরী রনিল বিক্রমাসিংহের আরোপিত কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন ব্যবস্থা সহজ করার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা।
বিক্রমাসিংহে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো পরিবর্তনের যে কোনো পদক্ষেপ প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের চতুর্থ কিস্তি ছাড়তে বিলম্ব করতে পারে।
প্রকল্পের নামে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া হলেও তার বিপরীতে কোনো রাজস্ব আয় আসেনি। যে কারণে সৃষ্টি হয় এই অর্থনৈতিক সংকটের। কোভিড -১৯ মহামারীর প্রভাব ও তার মুদ্রার পরিমাণ বাড়াতে বৈদেশিক রিজার্ভ ব্যবহার করতে সরকারের জোর দেওয়ার ফলে এই অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে।
এর ফলে ২০২২ সালে খাদ্য, ওষুধ, রান্নার গ্যাস ও জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। শুরু হয় ব্যাপক বিক্ষোভ যা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজাপাকসেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।
রাজাপাকসের বাকি মেয়াদ পূরণের জন্য পার্লামেন্টের ভোটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহেকে নির্বাচিত করা হয়।