ঘোষণা দিয়ে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ইসরায়েলে বড় ধরনের ড্রোন হামলার পর পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে ইসরায়েল। অন্তত ১০০টি যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়ে লেবাননের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে হিজবুল্লাহর হাজার হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপনকারী ব্যারেল ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।
রবিবার (২৫ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের ৪০টির বেশি উৎক্ষেপন এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। আজ ভোরের আগে ড্রোন হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। এরপর এই অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
আইডিএফের তথ্যানুসারে, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে বেশিরভাগ হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। তবে মধ্য ইসরায়েলের দিকেও কিছু হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘যারাই আমাদের আঘাত করুক না কেন, আমরা তাদের প্রতিহত ও পাল্টা আঘাত করব।’
বিমান হামলায় দক্ষিণ লেবাননের খিয়াম শহরে একজন নিহত হয়েছেন বলে ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় কান টিভির খবরে বলা হয়েছে।
এছাড়া ইসরায়েলের মাগেন দাভিদ আদম উদ্ধার পরিষেবা জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে এক নারী আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হামলায় একটি বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের গোলান মালভূমিতে ‘হিজবুল্লাহর’ হামলায় ১২ কিশোর নিহত
আইডিএফ মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের দিকে গুলি চালাতে হিজবুল্লাহর ব্যাপক প্রস্তুতি চিহ্নিত করেছে আইডিএফ। নিজেদের ওপর হামলার হুমকি কমাতে আত্মরক্ষায় এই হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্ত দেশব্যাপী জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছেন।
ঘোষণায় দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে তেল আবিব পর্যন্ত বাসিন্দাদের জন্য নতুন নিরাপত্তা নির্দেশনা জারি, বড় জমায়েত নিষিদ্ধ এবং লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্র বা নিরাপদ কক্ষের কাছাকাছি থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগত ও বহির্গামী ফ্লাইটগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে, আগামীকাল সকালে তাদের কার্যক্রম ফের চালু হবে।
লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শোকোরের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ নিতে গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের ১১টি সেনা ঘাঁটিতে ৩২০টির বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার ভোরে লেবাননে ইসরায়েলের অনবরত বিমান হামলা শুরু হয়েছে জানিয়ে এনএনএ বলেছে, এর ফলে সম্পত্তি, ফসল এবং অবকাঠামো, বিশেষত পানি ও বিদ্যুৎ পরিষেবা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত বছরের শেষ দিকে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাত নিয়ে আরব লীগ মহাসচিবের উদ্বেগ
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা করার সময় থেকেই হামলা শুরু করেছে হিজবুল্লাহ। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে গুলি বিনিময় চলছে। তবে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সঙ্গে লড়াই সম্প্রতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। এটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা একটি পূর্ণ যুদ্ধের রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হিজবুল্লাহ হামাসের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তাদের সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হলে ইরানও তাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে তারাও ইসরালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে। সর্বোপরি, এটি একটি বড় পর্যায়ের আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।
সম্প্রতি হিজবুল্লাহর মোকাবিলায় ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে সৈন্য জড়ো করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এ ব্যাপারে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, আমাদের কাছে নতুন এমন অস্ত্র ও গোয়েন্দা সক্ষমতা রয়েছে, যা ইসরায়েলের গভীরে আরও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করার সক্ষমতা রাখে।
অবশ্য গাজায় যুদ্ধবিরতি হলেই কেবল ইসরায়েলে হামলা বন্ধ করা হবে বলে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।