বহুজাতিক কোম্পানি উবারের দৌলতে রাইড শেয়ারিং এখন জনপ্রিয় একটি আয়ের মাধ্যম। ধরাবাঁধা কোনো সময় না থাকায় একজন উবার ড্রাইভার মুক্তপেশার মতোই উপার্জন করতে পারেন নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী। তবে এর জন্য কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। এগুলো নির্ধারিত হয় মূলত সংশ্লিষ্ট দেশের পরিবহন অধিদপ্তর প্রণীত বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। আজকের নিবন্ধে উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। একই সঙ্গে জেনে নেওয়া হবে- প্রয়োজনে উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করার পর কীভাবে তা পুনরায় চালু করবেন।

উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট করার পূর্বশর্ত

মোটর বাইক বা কার থাকুক বা না থাকুক, উভয় ক্ষেত্রেই ড্রাইভার হিসেবে উবারে যোগ দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যানবাহনটির জন্য বিআরটিএ’র (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) রাইড শেয়ারিং তালিকাভুক্তি সনদপত্র নিতে হবে। নিজের গাড়ি থাকলে মালিক নিজে এই সনদপত্র নিবেন।

আর গাড়ি না থাকলে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান তথা উবার সেই গাড়ির জন্য বিআরটিএর রাইড শেয়ারিং-এ তালিকাভূক্ত করবে। এই সনদপত্র নেবার পর উবার ড্রাইবার অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদন করা যাবে।

এছাড়া বিআরটিএ মতে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম ১৮ বছরের যে বয়ঃসীমা আছে, উবার বাংলাদেশের ড্রাইভারদের বেলায়ও তা প্রযোজ্য হবে।

আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ বিলাসবহুল গাড়ি

উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

চালক হিসেবে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত পরিচিতিপত্র:

- প্রোফাইল ছবি (চালকের পুরো মুখমণ্ডলসহ কাঁধের শীর্ষভাগ ফোকাসে থাকা চশমাবিহীন উজ্জ্বল ছবি হতে হবে, যেখানে ফ্রেমে শুধুমাত্র চালকের মুখ থাকবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি বা অন্য কোনও মুদ্রিত ছবি হওয়া যাবে না।)

- জাতীয় পরিচয়পত্র

- বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স

গাড়ির (মোটর বাইক/কার) প্রয়োজনীয় নথি:

- নিবন্ধনপত্র

- ফিটনেস সনদপত্র

- ট্যাক্স টোকেন

- ইনস্যুরেন্স

যানবাহন না থাকলে আবেদনকারীকে শুধু নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে।

আরও পড়ুন: ঢাকায় গাড়ি চালানো শেখার জন্য কয়েকটি নির্ভরযোগ্য ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার

ধাপে ধাপে উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করার পদ্ধতি

বিআরটিএ রাইড শেয়ারিং তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালে নিবন্ধন

প্রথমেই বিএসপি (বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল) পোর্টালে (https://bsp.brta.gov.bd/register) যেয়ে ‘নিবন্ধন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। অতঃপর প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ‘নিবন্ধন করুন’ এ ক্লিক করার পর ইমেইল ঠিকানা যাচাই করা হবে।

এ সময় প্রদানকৃত ইমেইলে বার্তা প্রদান এবং মোবাইল নম্বরে ওটিপি প্রদানের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা হবে। যাচাই শেষে পুনরায় ইমেইল ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করা যাবে।

এরপর প্রথমে ড্যাশবোর্ডের বাম পাশে ছবির উপরে ক্লিক করে সকল তথ্য দিয়ে প্রোফাইল সম্পূর্ণ করতে হবে।

মোটরযান নিবন্ধন

হোম পেজের ‘মোটরযান নিবন্ধন’ মেনুর অধীনে ‘মোটরযান সংযুক্তকরণ’ এ যেতে হবে। এখানে মোটরযানের মালিকের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চেসিস নম্বর, উৎপাদনের বছর ও ইঞ্জিন নম্বর দিতে হবে।

তারপর বাম পাশের মেনুগুলো থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সে মেনুর অধীনে ‘ড্রাইভার সংযুক্তকরণ’-এ যেতে হবে। এখানে আবেদনকারীর ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, জন্ম তারিখ ও মোবাইল নম্বর দিতে হবে। মোবাইল নম্বর ওটিপির মাধ্যমে যাচাই করা হবে।

এবার বাম পাশের ‘রাইড শেয়ারিং’ মেনুর অধীনে ‘মোটরযান নিবন্ধন’-এ যেতে হবে। এখানে পূর্বের ন্যায় মোটরযান নম্বর সহ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর তথ্যাবলি প্রদান করতে হবে।

অতঃপর রাইড শেয়ারিং কোম্পানির তথ্যে উবার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং আবেদনের সময়কাল এক বছর দিতে হবে। সকল তথ্য দেয়ার পর সাবমিট করলে আবেদনটি উবারের অনুমোদনের জন্য গৃহীত হবে। অনুমোদন করা হলে তা ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শন করা হবে।

আরও পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে

রাইড শেয়ারিং তালিকাভুক্তির ফি জমা

অনলাইন ফি পরিশোধ

ড্যাশবোর্ডের নোটিফিকেশন থেকে ‘রাইড শেয়ারিং সংক্রান্ত’ মেনুতে গেলে অনলাইন ও ব্যাংক; এই দুই মাধ্যমে ফি পরিশোধের অপশন দেখা যাবে।

অনলাইনে ফি জমা দিতে চাইলে ‘অনলাইন ফি জমা’ অপশনে যেয়ে ‘ফি জমা দিন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।

এ সময় ভিন্ন ভিন্ন মোটরযানের জন্য কত টাকা কি কি মাধ্যমে দিতে হবে সেগুলোর অপশন প্রদর্শিত হবে। এগুলো থেকে সুবিধামত মাধ্যম নির্বাচন করে ফি পরিশোধ করা যাবে।

এরপর ড্যাশবোর্ড নোটিফিকেশনে বিআরটিএ কর্তৃক অনুমোদনের জন্য আবেদন চূড়ান্ত ভাবে গৃহীত হওয়ার বার্তা দেখানো হবে।

ব্যাংকের মাধ্যমে ফি পরিশোধ

ব্যাংকের মাধ্যমে ফি জমা দেয়ার জন্য প্রথমে বিআরটি অনুমোদিত ব্যাংকে সশরীরে যেয়ে ফি জমা দিতে হবে। তারপর বিএসপি পোর্টালে লগইন করে ‘রাইড শেয়ারিং সংক্রান্ত’ অপশনে যেয়ে ‘ব্যাংকের মাধ্যমে ফি জমা’তে ক্লিক করতে হবে। এখানে ব্যাংক প্রদত্ত টাকার রশিদের ট্রানজেকশন নম্বরটি প্রবেশ করাতে হবে।

মোটরযান তালিকাভুক্তির সনদ প্রাপ্তি

ফি পরিশোধের পর আবেদন চূড়ান্তভাবে বিআরটিএ কর্তৃপক্ত কর্তৃক অনুমোদনের জন্য গৃহীত হবে। অনুমোদন হয়ে গেলে তা ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শিত হবে, যা প্রিন্ট করে নেওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স যেভাবে করবেন

উবার সাইটে/অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি

উবারে ওয়েবসাইট তথা https://www.uber.com/a/join-new লিংকের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাবে। এছাড়া তাদের মোবাইল অ্যাপ থেকেও নিবন্ধন পদ্ধতি সম্পন্ন করা যায়। এর জন্য গুগল প্লে-স্টোর থেকে উবার ড্রাইভার অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে হবে।

রেজিস্ট্রেশন ফর্মে নাম, ইমেইল ঠিকানা, শহর ও পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এরপর গাড়ির ধরণ অর্থাৎ মোটরবাইক বা কার নির্বাচন করতে হবে। গাড়ি নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ব্র্যান্ড, মডেল এবং লাইসেন্স নম্বর দিতে হবে।

এরপর উপরোল্লিখিত প্রতিটি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সফট কপি আপলোড করতে হবে।

চূড়ান্তভাবে উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করার নিয়ম

নিজস্ব গাড়ি থাকলে সেটি নিয়ে স্থানীয় উবার অ্যাক্টিভেশন সেন্টারে যেতে হবে। অতঃপর সেখানে গাড়ি চালিয়ে দক্ষতা প্রমাণের পর সক্রিয় হয়ে যাবে সদ্য খোলা অ্যাকাউন্টটি।

নিজস্ব গাড়ি না থাকলে উবার তাদের যানবাহন ব্যবহার করে এই দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়।

এই পুরো নিবন্ধন থেকে অ্যাকাউন্ট সক্রিয়করণের প্রক্রিয়াটি সরাসরি উবার অফিসে যেয়েও করা যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের যে শহরগুলোতে উবারের অফিস রয়েছে সেগুলো হলো- ঢাকা, বাগেরহাট, বরিশাল, বগুড়া, চিটাগং, কক্সবাজার, দিনাজপুর, যশোর, খুলনা, নাটোর, নীলফামারি, রাজশাহী এবং রংপুর।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে থেকে জার্মান ভাষার আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট পাওয়ার উপায়

যেভাবে উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করবেন

উবার অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে হলে, প্রথমে অ্যাপ হোম পেজের উপরের বাম দিকে তিন-রেখার আইকনটি চাপতে হবে। মেনু লিস্টে নীচের দিকে স্ক্রল করে ‘হেল্প’ মেনুতে যেতে হবে।

তারপর ‘অ্যাকাউন্ট সেটিংস’ এ যেয়ে অ্যাকাউন্ট সেটিংস পরিবর্তন করতে হবে। এখানে নীচের দিকে ‘ডিলেট ইয়োর অ্যাকাউন্ট’ অপশনে ক্লিক করলে বেশ কিছু প্রশ্ন আসবে।

প্রথম দুটি প্রশ্নে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, ‘ড্রাইভার-পার্টনার অ্যাকাউন্ট’ এবং ‘রাইডার অ্যাকাউন্ট’-এর মধ্যে কোনটি ডিলেট করতে চান।

এখানে যে কোনো একটি অথবা দুটো অ্যাকাউন্ট-ই মুছে ফেলা যাবে ‘ইয়েস’ টাইপ করার মাধ্যমে।

এবার উবার জানতে চাইবে কেন অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করা হচ্ছে।

এখানে উল্লেখিত উত্তরগুলোর মধ্যেই যদি উদ্দিষ্ট কারণটি থাকে তাহলে তা সিলেক্ট করা যেতে পারে। অন্যথায় ‘আদার্স’ নির্বাচন করে প্রদর্শিত টেক্সট বক্সে সঙ্গতিপূর্ণ কারণটি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তারপর সাবমিট করলেই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: ইউটিউব ভিডিও স্ক্রিপ্ট রাইটিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা

যেভাবে উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট পুনরায় সক্রিয় করবেন

https://partners.uber.com লিংকে যেয়ে ড্রাইভার প্রোফাইল পৃষ্ঠায় গেলে অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করতে কোন কোন ধাপ বাকি আছে তা দেখা যাবে।

এখানে দেখতে হবে কোনো প্রয়োজনীয় নথিটি প্রোফাইলে আপলোড করা হয়নি অথবা গৃহীত হয়নি। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পুনরায় আপলোড করতে হবে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তাদের সঙ্গে সরাসরি ০৯৬১২১১১৭৭৭ নাম্বারে ফোন করে কথা বলা যেতে পারে।

এছাড়া সশরীরে সেবা কেন্দ্রে যেয়ে আপিল করা যেতে পারে। এ জন্য আগে থেকে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য https://www.uber.com/bd/en/drive/contact/ লিঙ্কের ‘বুক অ্যান অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ এ যাওয়া যেতে পারে।

শেষাংশ

উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো একটি উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। গাড়ি চালনার দক্ষতা, ট্রাফিক নিয়মের প্রতি অনুগত থাকা এবং যাত্রীদের উত্তম সেবা প্রদান চালককে চূড়ান্ত বৈধতা দিতে পারে। এই ভালো অভিজ্ঞতা চালকের চাহিদার প্রতি উবারকে সুবিবেচক হওয়ার দিকে ধাবিত করে। ফলশ্রুতিতে, সঙ্গতিপূর্ণ কারণ দর্শানো পূর্বক অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে কোনোরূপ জটিলতা ছাড়াই পুনরায় সক্রিয় করা যেতে পারে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো অ্যাকাউন্ট।

আরও পড়ুন: অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করবেন যেভাবে