জ্ঞান বিকাশের পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধি করার সুযোগ সৃষ্টি হয় বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে। উন্নত একাডেমিক পরিবেশ এবং মানসম্পন্ন জীবনযাত্রা শিক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠানের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। এমন অভাবনীয় সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে পূর্ব এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। অত্যাধুনিক অবকাঠামো ও গবেষণায় উত্তরোত্তর উন্নয়নের কারণে দেশটি বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। কেননা বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনগোষ্ঠীর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশের যোগান দিচ্ছে কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। চলুন, দেশটিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পর্যালোচনা করা যাক।
দক্ষিণ কোরিয়ায় কেন পড়তে যাবেন
আন্তর্জাতিক সংস্থা ওইসিডির (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) তালিকাভুক্ত দেশগুলোর একটি দক্ষিণ কোরিয়া। একাডেমিক কৃতিত্ব ও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত ও পেশাদার ফোরামে দেশটির রয়েছে একটি অভিজাত অবস্থান।
বিগত কয়েক বছর ধরে কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ের শীর্ষ শতকে রয়েছে দেশটির ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো- সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (৩১), কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (৫৩), ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয় (৫৬), কোরিয়া ইউনিভার্সিটি (৬৭) ও পোহং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (৯৮)।
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি যথেষ্ট স্থিতিশীল হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের চাকরি নিয়ে তেমন বিড়ম্বনা পোহাতে হয় না। প্রতিটি জব সেক্টর একদম শিক্ষানবিশ পর্যায় থেকে জব স্যাটিস্ফেকশন নিশ্চিত করায় কাজে পাওয়া যায় নিরাপদ ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।
জীবনযাত্রার খরচ সংক্রান্ত বৃহৎ অনলাইন ডাটাবেজ নাম্বিও অনুসারে বিশ্বে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়। এছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয় এবং ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মতো বিশেষণগুলোও যুক্ত হয়েছে দেশটির চলমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে। সর্বোপরি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাঝে বসবাসের জন্য পূর্ব এশিয়ার সেরা গন্তব্য এই দেশটি।
দক্ষিণ কোরিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও চাহিদা সম্পন্ন কোর্সের তালিকা
বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম সারির ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
· সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
· কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
· ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়
· কোরিয়া ইউনিভার্সিটি
· পোহং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
· সুংকিউনকওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়
· হ্যানিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়
· উলসান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
· দেগু গিয়াংবুক ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
· কিউং হি ইউনিভার্সিটি
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি বিষয়-
অর্থনীতি, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফাইন্যান্স, ফ্যাশন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, হস্পিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট, ডিজাইন মিডিয়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বায়োটেকনোলজি
দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য নিজস্ব অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে। তাছাড়া ভর্তি কার্যক্রম শুরুর সময়কাল এবং পূর্বশর্তগুলোও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই চূড়ান্ত আবেদনের পূর্বে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চেক করা উচিত।
ভর্তির আবেদনগুলো সাধারণত সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হওয়ার অন্তত ৩ থেকে ৪ মাস আগে জমা নেওয়া হয়। গড়পড়তায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির মৌসুম প্রধানত দুটি। প্রথমটি হলো স্প্রিং সেমিস্টার, যার আবেদন গ্রহণ মার্চ থেকে জুন মাসে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলে।
দ্বিতীয়টি হলো ফল সেমিস্টার, যে মৌসুমের আবেদন গ্রহণ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর অব্দি শুরু করা হয়। আর ভর্তির যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হয় মে থেকে জুন মাসের মধ্যে।
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
· সম্পূর্ণ পূরণকৃত আবেদনপত্র
· পাসপোর্ট
· পাসপোর্ট সাইজের ছবি
· উচ্চ মাধ্যমিক সনদ বা সমমানের ডিপ্লোমা
· ইংরেজি ভাষা দক্ষতা সনদ: টোফেল (ন্যূনতম ৭১) বা আইইএলটিএস (কমপক্ষে ৫ দশমিক ৫)
· পার্সোনাল স্টেটমেন্ট
· ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা আর্থিক সহায়তার হলফনামা
· লেটার অব রিকমেন্ডেশন
· সিভি
· পিতামাতার পাসপোর্ট বা পরিচয়পত্র (এনআইডি)
মাস্টার্সে আবেদনের জন্য অতিরিক্ত নথি
· ব্যাচেলর ডিগ্রি বা সমমানের ডিপ্লোমা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট
· কাজের অভিজ্ঞতা (প্রোগ্রাম বিশেষে প্রযোজ্য)
পিএইচডি আবেদনের নথি
· স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা সমমানের ডিপ্লোমা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট
· মাস্টার্স থিসিস বা গবেষণার প্রস্তাবনা
দক্ষিণ কোরিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন
আবেদন অনুযায়ী ভর্তির অফার লেটার প্রাপ্তির পরপরই প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে ভিসার কাজ শুরু করা। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদী অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ডি-২ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসায় প্রাথমিকভাবে ২ বছর পর্যন্ত মেয়াদ মঞ্জুর করা হয়। আর একক এন্ট্রি ভিসার মেয়াদ ৩ মাস।
আবেদনের জন্য সরাসরি চলে যেতে হবে কোরিয়ান ভিসা পোর্টালে-
https://www.visa.go.kr/openPage.do?MENU_ID=1020408
এই লিংকের ফর্ম পূরণের সময় ভিসার জন্য দরকারি সব নথিপত্র আপলোড করতে হবে। তারপর ই-ফর্মটি বারকোডসহ প্রিন্ট করে আপলোডকৃত নথির হার্ড কপিসহ একত্রে কোরিয়ান দূতাবাস বা কন্স্যুলেটে জমা দিতে হবে।
ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
· প্রিন্ট করা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনপত্র বা ই-ফর্ম
· বিগত ৬ মাসের মধ্যে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি রঙিন ছবি
· দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছার দিন থেকে পরবর্তী ন্যূনতম ৬ মাসের মেয়াদসহ বৈধ পাসপোর্ট
· কভার বা ফরোয়ার্ডিং লেটার
· দক্ষিণ কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত ভর্তির অফার লেটার
· জন্ম সনদপত্র
· সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন অফিস কর্তৃক ইস্যুকৃত পারিবারিক সম্পর্কের সার্টিফিকেট
· আবেদনকারীর নিজের বা গ্যারান্টরের আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণ করার জন্য তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট
· আবেদন সংক্রান্ত ও অধ্যয়নের জন্য বিদেশে বসবাসের নিমিত্তে পিতামাতার অনাপত্তি পত্র (এনওসি)
· পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
· বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক প্রদত্ত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
· শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণ স্বাপেক্ষে যাবতীয় সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট
· এই নথিগুলো অবশ্যই বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিগত ৩ মাসের মধ্যে নোটারিকৃত হতে হবে। আবেদনের সঙ্গে এগুলোর আসল ও ফটোকপি উভয়ই জমা দিতে হবে।
· জাতীয়ভাবে স্বীকৃত যক্ষ্মা পরীক্ষা কেন্দ্র দ্বারা বিগত ৩ মাসের মধ্যে জারিকৃত যক্ষ্মা পরীক্ষার ফলাফল
· বিগত ২ বছরের মধ্যে জারিকৃত ইংরেজি ভাষা শিক্ষার সার্টিফিকেট (টোফেল বা আইইএলটিএস)
· কোরিয়ান ভাষা দক্ষতার শংসাপত্র (দক্ষিণ কোরিয়া স্বীকৃত): কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা বা এই ভাষার প্রোগ্রামগুলোতে অধ্যয়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
ভিসা আবেদন জমা প্রদান
আবেদনপত্রসহ যাবতীয় নথিপত্র নিয়ে কনস্যুলেটে যাওয়ার পূর্বে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। এর জন্য https://www.g4k.go.kr/cipl/0100/login.do- লিংকে যেয়ে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। অতঃপর এই অ্যাকাউন্টের অধীনে নথিপত্র জমাদানের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ের জন্য আবেদন করা যাবে। এই আবেদনের সময় প্রদানকৃত নাম, ফোন নাম্বার, ইমেইল ঠিকানা, পাসপোর্ট বা এনআইডি ভিসার আবেদনের সঙ্গে হুবহু মিল থাকতে হবে।
মনোনীত নির্দিষ্ট দিনক্ষণের ব্যাপারে ফোন নাম্বার ও ইমেইল ঠিকানায় জানানো হবে।
কন্স্যুলেটের ঠিকানা: ৪, মাদানী এভিনিউ, বারিধারা, ঢাকা-১২১২ বাংলাদেশ
ভিসার কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য কন্স্যুলেটরে যাওয়ার সময় প্রতি কার্যদিবসে (রবি থেকে বৃহস্পতিবার) বিকাল ৩ থেকে ৪টা।
ভিসা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের আনুষঙ্গিক খরচ
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে আবেদন জমা করার পর থেকে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। অবশ্য নথিপত্রে জটিলতা থাকলে এই সময় আরও প্রলম্বিত হতে পারে। এ সময় অনলাইনে ভিসার সর্বশেষ অবস্থা জানা যেতে পারে। তার জন্য যেতে হবে
https://www.visa.go.kr/openPage.do?MENU_ID=10301- লিংকে।
ভিসা প্রস্তুত হয়ে গেলে তা ভিসা পোর্টাল, এসএমএস ও ই-মেইলের মাধ্যমে প্রার্থীকে জানানো হবে। আর ভিসা সরবরাহের সময় প্রতি কার্যদিবসে বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা।
৯০ দিনের বেশি মেয়াদের একক প্রবেশাধিকার বিশিষ্ট ডি-২ ভিসার ফি ৬০ মার্কিন ডলার বা ৬ হাজার ৬০০ টাকা। দক্ষিণ কোরিয়ান দূতাবাস অনুসারে এখানে ডলারের নির্ধারিত বিনিময় হার মার্কিন ডলার প্রতি ১১০ বাংলাদেশি টাকা। কন্স্যুলেট অফিসে ভিসার কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময় এই ফি পরিশোধ করতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যয়নের বিষয় ও ডিগ্রির পর্যায়ের ওপর ভিত্তি করে পড়াশোনার খরচ ভিন্ন হয়ে থাকে। তার মধ্যে ব্যাচেলর কোর্সগুলোতে প্রয়োজন হয় সাধারণত ৪৩ লাখ থেকে ৩ কোটি ৩৯ লাখ কোরিয়ান ওন। এই বাজেট ৩ লাখ ৭০ হাজার ১৯ থেকে ২৯ লাখ ১৭ হাজার ১২৫ টাকার (১ দক্ষিণ কোরিয়ান ওন = শূন্য দশমিক ০৮৬ বাংলাদেশি টাকা) সমান। আর স্নাতকোত্তরের জন্য বাজেট রাখতে হবে ৫০ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৫ কোটি ৮ লাখ ওন। পরিমাণটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৮ থেকে ৪৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৫ টাকার সমতুল্য।
জীবনযাত্রার খরচের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর হচ্ছে রাজধানী সিউল। অপরদিকে বুসান এবং ইঞ্ছনের মতো শহরগুলোর নিত্যনৈমিত্তিক খরচ যথেষ্ট কম।
লিপস্কলার অনুসারে বাড়িভাড়া বাদে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান শহরগুলোতে জীবনযাত্রার অন্যান্য মাসিক খরচ নিম্নরূপ-
· সিউল: ১৫ লাখ ৫০ হাজার ১০৬ ওন বা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৮ টাকা
· বুসান: ১৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭০৯ ওন বা ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৭২ টাকা
· জেজু: ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৭৮ ওন বা ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৭১ টাকা
· দেজেওন: ১৬ লাখ ১০ হাজার ২০৫ ওন (১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬০ টাকা)
· ইঞ্ছন: ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৮৭ ওন (১ লাখ ১৮ হাজার ৩০২ টাকা)
এগুলোর সঙ্গে আবাসন খাতে যে বাজেট রাখতে হবে তা হলো-
· সিউল: ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৬১১ ওন বা ৯৯ হাজার ৩৫৫ টাকা
· বুসান: ৫ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ ওন (৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা)
· জেজু: ১৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭৪৩ ওন (১ লাখ ৬১ হাজার ৭৫৪ টাকা)
· দেজেওন: ৪ লাখ ২১ হাজার ৬৬৬ ওন (৩৬ হাজার ২৮৫ টাকা)
· ইঞ্ছন: ৫ লাখ ২৫ হাজার ওন (৪৫ হাজার ১৭৭ টাকা)
দক্ষিণ কোরিয়ায় স্কলারশিপের সুবিধা
অধ্যয়ন ও জীবনযাত্রার বাজেটের অর্থ সঙ্কুলানের জন্য দেশটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত স্কলারশিপের সুবিধা।
ইয়নসেই ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক প্রোগ্রামের জন্য পূর্ণ, অর্ধেক, বা প্রতি সেমিস্টারের এক-তৃতীয়াংশ অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে।
একইভাবে কোরিয়া ইউনিভার্সিটিও আংশিক বা সম্পূর্ণ অধ্যয়ন খরচ বহন করে থাকে।
হ্যানিয়াং ইন্টার্ন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড্স অধ্যয়ন ফি ৭০, ৫০ বা ৩০ শতাংশ মওকুফ করে।
বেশ কিছু বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পর্যায়ে অধ্যয়নের জন্য পূর্ণ তহবিল প্রদান করে। তার মধ্যে স্যামসাং গ্লোবাল হোপ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম পূর্ণ টিউশন ফি ছাড়াও আন্ডারগ্রাজুয়েটদের প্রতি সেমিস্টারে দেয় ৩৯ লাখ ওন (৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯৮ টাকা)। আর গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য সরবরাহ করা হয় প্রতি সেমিস্টারে ৩৫ থেকে ৫০ লাখ ওন। তহবিলটি প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ১৭৮ থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার ২৫৪ টাকার সমতুল্য।
গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপ আন্ডারগ্রাজুয়েট ও পোস্ট-গ্রাজুয়েট উভয় পর্যায়ে পূর্ণ অর্থ সহায়তা দেয়।
পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
অধ্যয়নকালীন খণ্ডকালীন চাকরির জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ন্যূনতম এক সেমিস্টার শেষ করতে হবে। এই শর্তে আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা ও গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীরা ৩০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। প্রচলিত ডিগ্রি সম্পন্ন হওয়ার পর, যারা থিসিসে কাজ করছেন তারাও সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের অনুমতি পান।
লিপস্কলার অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় কিছু খণ্ডকালীন চাকরি ঘণ্টাপ্রতি মজুরিসহ উল্লেখ করা হলো-
· ক্যাশিয়ার: ৯ থেকে ১০ হাজার ওন বা ৭৭৪ থেকে ৮৬১ টাকা
· সেলস অ্যাসোসিয়েট: ১১ থেকে ১২ হাজার ওন (৯৪৭ থেকে ১ হাজার ৩৩ টাকা)
· প্যাকেজ হ্যান্ডলার: ১৩ থেকে ১৪ হাজার ওন (১ হাজার ১১৯ থেকে ১ হাজার ২০৫ টাকা)
· লেকচারার: ৫১ থেকে ৫৫ হাজার ওন (৪ হাজার ৩৮৯ থেকে ৪ হাজার ৭৩৩ টাকা)
· প্রাইভেট টিউশন: ২৬ থেকে ২৮ হাজার ওন (২ হাজার ২৩৭ থেকে ২ হাজার ৪০৯ টাকা)
· গবেষণা সহকারী: ১২ থেকে ১৩ হাজার ওন (১ হাজার ৩৩ থেকে ১ হাজার ১১৯ টাকা)
· প্রশাসনিক সহকারী: ৬ থেকে ৭ হাজার ওন (৫১৬ থেকে ৬০২ টাকা)
শেষাংশ
দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষা লাভের নেপথ্যে মূল আকর্ষণ হচ্ছে দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাঠ্যক্রমে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব থাকার ফলে নিজেদের পছন্দমতো বিষয় নির্বাচন করতে পারছে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে খণ্ডকালীন কাজের জন্য কোরিয়ান ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন জরুরি। এটি পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনধারণকেও সহজ করে তুলবে। বিশেষত স্কলারশিপ অর্জনের ক্ষেত্রে আলাদা মাত্রা যোগ করতে পারে এই ভাষা দক্ষতা। উপরন্তু, ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন স্কলারশিপ নিশ্চিত করা গেলে তা ভিসা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।