বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বর্তমান পুঁজিবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা ও বিগত সময়ে লটারির মাধ্যমে খোলা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট বাতিলের ফলে গেল আট বছরে বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম জানান, দেশের পুঁজিবাজারে আইপিও শেয়ার বরাদ্দের ক্ষেত্রে পূর্বে প্রচলিত লটারি সিস্টেমে নামে-বেনামে, নিবাসী-অনিবাসী ব্যক্তিরা একাধিক বিও আকউন্ট খুলে লটারিতে আবেদন করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে কমিশন ২০২১ সালে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে আইপিও শেয়ার বরাদ্দে লটারি সিস্টেম বাতিল করে আনুপাতিক শেয়ার বণ্টনের পদ্ধতি চালু করে।
‘এতে আগের তুলনায় শেয়ার প্রাপ্যতার হার কমে যায়। নামে-বেনামে খোলা বিও হিসাবের বার্ষিক হিসাব ফি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় অধিকাংশ বেনামি বিও হিসাব বন্ধ করে দেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজারে সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।’
এছাড়া সরকারি সিকিউরিটিজের (সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বিল, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদি) মুনাফার হার ঊর্ধ্বমুখী এবং ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের অনেকে দূরে সরে গেছেন। অনেকে আবার পুঁজিবাজার থেকে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন করতে না পারার কারণেও হতাশ হয়ে বাজার ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানায় বিএসইসি।
বিগত এক বছরে ঢাকার পুঁজিবাজারে প্রধান সূচক কমেছে প্রায় এক হাজার। এ প্রসঙ্গে বিএসইসি জানায়, বিগত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনের নিন্মমুখী প্রবণতার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টার্জিত টাকা ঝুঁকিপূর্ণ এ খাতে বিনিয়োগে করছেন না। এছাড়া পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এর বাইরে পারিপার্শ্বিক অস্থিতিশীল বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা, কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা ও দীর্ঘমেয়াদী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফা কমে যাওয়ার প্রভাবও বিও অ্যাকাউন্ট কমার পেছন দায়ী বলে মনে করে বিএসইসি।
তবে ইতিবাচক বার্তা দিয়ে রেজাউল বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে, যা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক।
বর্তমান কমিশনের সংস্কারমূলক কার্যক্রমের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আগামীতে বিও হিসাবের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রত্যাশা এ কর্মকর্তার।
প্রসঙ্গত গত আট বছরে পুঁজিবাজার থেকে ১২ লাখ বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে পুঁজিবাজারে অর্থলগ্নিকারীদের বিনিফিশিয়ারি ওউনার (বিও) অ্যাকাউন্ট কমতে কমতে ২০২৪ এ এসে অবস্থান করছে সর্বনিম্নে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ঢাকার পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৯ লাখ ২৯ হাজার ১৮৯টি, যা ২০২৪ সালে কমে হয়েছে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫২। এতে করে আট বছরে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৩৭ জন বিনিয়োগকারী হারিয়েছে পুঁজিবাজার। ২০২৩ সালে বাজারে বিও অ্যাকাউন্টধারী ছিলেন ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৪ জন। সে হিসাবে এক বছরে বিনিয়োগকারী কমেছে ৯০ হাজারেও বেশি।