কিন্তু জীবদ্দশায় সেই কালুরঘাট নতুন সেতু দেখে যেতে পারলেন না এই নেতা। নতুন কালুরঘাট সেতু তার অপূর্ণই থেকে গেল। এই সেতুর জন্য আগামী ডিসেম্বরে সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেয়ারও কথা জানিয়েছিলেন তিনি। অনেকটা ক্ষোভ আর অভিমান নিয়ে তাকে না ফেরার দেশে চলতে যেতে হলো।
গত ৯ আগস্ট চট্টগ্রাম ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে সেতুর জন্য প্রয়োজনে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার কথা বলেছিলেন মহাজোটের শরিক দল জাসদের এই নেতা।
এদিকে জাতীয় সংসদে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার বলার পরও কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর সড়কসহ রেলসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতু নির্মাণের পরিণতি না দেখলে আসসালামু আলাইকুম বলে সংসদ থেকে বেরিয়ে যাব।’
দুই বছর আগে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাদল সরকারের কাছে জানিয়ে দেন কালুরঘাটে সেতু দেখে যেতে না পারলে মরেও শান্তি পাবো না। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে কালুরঘাটে সড়ক কাম রেলসেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি পূরণ করতে চেয়েছিলেন। এই সড়ক কাম রেল সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি।
কালুরঘাট সেতুটি তার নির্বাচনী এলাকায় পড়েছে জানিয়ে মইন উদ্দীন খান বাদল বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় সেতুটি দিয়ে ট্রেন ও যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এ অঞ্চলের মানুষ।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘টানেল, জলাবদ্ধতা প্রকল্প, ফ্লাইওভারসহ পুরো চট্টগ্রামে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হচ্ছে, অথচ হচ্ছে না কেবল কালুরঘাট সেতু। চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু প্রকল্পের জন্য সরকারের খরচ হবে ৩৩৯ কোটি টাকা।’
কোরিয়ান একটি কোম্পানি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, রেল কাম সড়ক সেতুটির নির্মাণ ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮০০ কোটি টাকা কোরিয়া দেবে বলেছে। বাকিটা বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে। এরপরও এই সেতু হচ্ছে না।
বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক মুস্তফা নঈম জানান, কালুরঘাটের ব্রিটিশদের তৈরি জরাজীর্ণ সেতু ভেঙে নতুন সেতুর জন্য সংসদে লড়াই করে গেছেন মঈন উদ্দিন খান বাদল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে, আমি এখন জীবনসায়াহ্নে। জীবনে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই। আমার জীবদ্দশায় আমি নতুন কালুরঘাট সেতু দেখে যেতে চাই। এর জন্য যদি আমার রাজনৈতিক পরিচয় বিসর্জন দিতে হয় তাতেও আমি রাজি।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বর্ষীয়ান নেতা তার কাঙ্ক্ষিত সেতু দেখে যেতে পারলেন না।
বৃহস্পতিবার সকালে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদের মৃত্যুর খবরে বোয়ালখালী উপজেলার স্বর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বোয়ালখালী শাখার সভাপতি শ্যামল বিশ্বাস জানান, এমপি বাদলের মৃত্যুতে বোয়ালখালীবাসী একজন গুনী ব্যক্তিকে হারাল। তাকে আরও বেশ কিছুদিন বোয়ালখালীবাসীর প্রয়োজন ছিল।
বোয়ালখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. শাহীনুর কিবরিয়া মাসুদ বলেন, সাংসদ বাদল গণমানুষের মনের কথা সাবলীলভাবে সংসদে তুলে ধরতেন। তার চিরবিদায়ে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।
উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা সারোয়াতলীতে মাইনুদ্দিন খান বাদল জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি জাসদ একাংশের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। গত ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম-৮ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তিনবার তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। বৃহস্পতিবার ভোরে ৬৭ বছর বয়সে ভারতের বেঙ্গালুর নারায়ণা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।