বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ দুই নেতা প্রথমবারের মতো আলোচনায় এসেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আবু সাদিক। ঢাবির শিক্ষাজীবনে তারে একটি উল্লেখযোগ্য ও প্রসিদ্ধ পটভূমি রয়েছে।

তবে তিনি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ছয়জন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের ঠিক বাইরে নেতৃস্থানীয় দলের অংশ ছিলেন।

ঢাবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করেছেন এস এম ফরহাদ। সম্প্রতি তিনি ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার রিসার্চ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

উল্লেখ্য, দুই নেতাই পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী এবং একই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন।

আবু সাদিক খাগড়াছড়ির বাসিন্দা এবং খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ মাদরাসা থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (দাখিল) সম্পন্ন করার পর চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ কামিল মাদরাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (আলিম) সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এই আবু সাদিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এমনকি ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় ৯ দফা গঠন ও প্রচারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের জানান, কলঙ্কিত গোয়েন্দা শাখার গ্রেপ্তার এড়াতে কয়েকজন সমন্বয়কারীকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার প্রচেষ্টা সমন্বয় করতে সক্ষম হন তিনি।

এস এম ফরহাদের বাড়ি রাঙামাটিতে। তিনি বায়তুশ শরফ মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করে চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া, আদর্শ কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

'৯ দফা'র মূল রচয়িতা আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের মতে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এস এম ফরহাদ। এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। এই ফরহাদ তার হল-কবি জসীমউদ্দীন হলে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটিতে উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষ বিতার্কিক ছিলেন। তিনি হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতিও ছিলেন। বিতর্কে দক্ষতার জন্য তাকে পুরস্কৃত করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।

দুই শিবির নেতাই তাদের নিজ নিজ হলেই থাকতেন, তবুও কখনও সন্দেহের উদ্রেক হয়নি। যা জাতিকে রহস্যে ভাসিয়েছে। এটি শিবিরের গোপনীয়তার জনপ্রিয় কল্পনায় গল্প হিসেবে এসেছে এবং এতে অসাধারণ দক্ষতাও ছিল। ঢাবি শিবির সভাপতি থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবিরের হলে এবং ঢাবি শিবির সাধারণ সম্পাদক থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের হলে।

আরও পড়ুন: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির নেতাদের পরিচয় প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তামজিদ হোসেন বলেন, ‘আমি এটাকে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখছি। প্রকৃতপক্ষে, ফ্যাসিবাদের আমলে তারা সবচেয়ে নিপীড়িত ছিল। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়া নতুন বাংলাদেশে আমরা এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে প্রত্যেকের মতামত প্রকাশের অধিকার থাকবে, প্রত্যেকেরই নিজের রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশের সুযোগ থাকবে।’

ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক চর্চা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকবে এটা অবশ্যই কাম্য। কারণ আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম কারণ রাজনীতির অভাব। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন রাজনৈতিক নীতি নিয়ে আসতে হবে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী রাজনীতির কারণে রাজনীতির প্রতি অশ্রদ্ধা সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করেছিল পরিবেশ সংসদ। তা কার্যকর না হলেও আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ঢাবি ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে তাদের উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।

জনসম্পৃক্ততার ফলে আন্দোলনের সাফল্য চিহ্নিত করে আবু সাদিক তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন,  ‘শহীদ-গাজীর স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা যারা বেঁচে আছি তাদের এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাদের শহীদদের স্বপ্ন পূরণে ঐক্যবদ্ধভাবে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আমরা সফল না হলে '৪৭, '৭১ ও '২৪ এর সকল শহীদের রক্ত বৃথা যাবে। বৈষম্যহীনভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়তে ব্যর্থ হলে আমাদের দৃষ্টিহীন ভাইদের দৃষ্টিশক্তি বৃথা যাবে।’

আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে জামায়াত, শিবির ও বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে: প্রধানমন্ত্রী