প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আসন্ন রমজানের আগে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তার কথায়, ‘রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে ভোট করার জন্য যা যা করার দরকার জোরেশোরে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন সিইসি।
এ এম এম নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্যেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। এজন্য যা যা করা দরকার জোরেশোরে নিচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টাও নিউ ইয়র্কে যার সাথে দেখা হচ্ছে বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। আমরা এ ঐতিহাসিক নির্বাচনের জন্য কাজ করছি।’
এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কারো কথায় চলছি না। আইনকানুন, সংবিধান অনুযায়ী, সরল সোজা পথে চলতে চাই। বাঁকা পথে বা কারো ফেভারের (সুবিধা) জন্য কাজ করছি না। রাজনৈতিক দল আমাদের মূল স্টেকহোল্ডার (অংশীদার)। উনাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন সম্ভব নয়।’
নির্বাচনের মাঠে কেউ ‘ফাউল করতে’ নামবে না
আগামী নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির জন্য ইসির পক্ষ থেকে ‘সর্বশক্তি প্রয়োগ করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রত্যাশার কথাও বলেন সিইসি।
একটি পত্রিকার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সব খেলোয়াড় যদি ফাউল করার জন্য মাঠে নামে, ম্যাচ পণ্ড হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সবাই ফাউল করার জন্য মাঠে নামলে তো মুশকিল। কেউ যেন ফাউল না করে, সে বিষয়ে আমরা তৎপর। নির্বাচনে কেউ ফাউল করতে নামবে না, ভালো নিয়তে নামবেন আশা করি।’
‘আমাকে কেউ বলেনি যে ইলেকশনে ফাউল করার জন্য নামবেন। আশা করি, সবাই সহযোগিতা করবেন।’
অনিয়ম ঠেকাতে ইসি সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, তারা ফাউল করার জন্য নয়, বরং একটি সুন্দর নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য মাঠে নামবে।’
‘শাপলা’ প্রতীক
নিবন্ধনপ্রত্যাশী জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আগে নিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্য শাপলা প্রতীক চাইলেও তা নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, এ বিষয়ে ইসি সিনিয়র সচিব ইতোমধ্যে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এনসিপি শাপলা চেয়েছে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অথচ শপলা চেয়েছিল নাগরিক ঐক্য, তারা প্রথম চেয়েছিল। তখন আলোচনায় আনেনি। এখন কেন এত আলোচনা? নাগরিক ঐক্যকে শাপলা দেইনি আমরা।’
নির্বাচনি প্রতীকের চূড়ান্ত তালিকা বুধবার জারি হয়েছে। ইসি সচিব এনসিপিকে বিকল্প প্রতীক চেয়ে আবেদন করার পরামর্শ দিলেও এনসিপি ফের শাপলা চেয়ে আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘চিঠি নিয়ে কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নেব। গতকাল এল, একা সিদ্ধান্ত নেব না। আমাদের কমিশনের সভায় আলোচনার পর পরবর্তী কাযক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেব। কমিশন সভার আলোচনার পর কথা হবে।’
এনসিপির চিঠির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যেকোনো দল চিঠি দিতে পারে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া দল এনসিপি। চিঠি দেওয়ায় অসুবিধা নেই। দল তো দেবেই। রাজনীতিবিদরা দেশের স্বার্থে সব কিছু একমোডেট করেন। চিঠি বিবেচনা করব, কী করা যায় দেখা যাক।’
শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিলে তা কীভাবে আদায় করতে হয়—জানা আছে বলে হুমকি দিয়েছেন এনসিপির নেতারা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বলেন, “রাজনীতিবিদরা অনেক কথা বলতে পারেন। আমরা তো জবাব দিতে পারব না, শ্রোতা। আমাদের কাজ আইন মোতাবেক করব। এটা হুমকি মনে করি না। উনারা তো দেশদ্রোহী না, উনারা দেশপ্রেমিক। দেশের জন্য, আমাদের জন্য হুমকি মনে করি না।’
পিআর নয়, ভোট হবে আরপিও অনুযায়ী
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) ভোটের দাবিতে কয়েকটি দল সোচ্চার হলেও ইসি নির্বাচনি আইন ও সংবিধানের বাইরে যাবে না বলে ভাষ্য সিইসির।
তিনি বলেন, ‘ভোট আমাদের আরপিও অনুযায়ী হবে। পিআর তো আরপিওতে নাই। আরপিও বদলে অন্য একটা দিলে হয় তখন (হতে পারে), আইন না বদলালে তো হয় না। আমাদের আরপিও মেনে চলতে হয়।’
সিইসি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইলে আইন বদলাতে হবে। পিআর নিয়ে কথা বললে আবার আমার বিরুদ্ধে কথা হবে, যদিও এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ফেব্রুয়ারির জন্য অপেক্ষা করছি। নির্বাচন আয়োজনের জন্য অপেক্ষা করছি। সংবিধান-আরপিওতে যা আছে সে অনুযায়ী হবে। ভোটের দিনের দুই মাস আগে তফসিল হবে। রোজার আগে নির্বাচন হবে।’