আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী বরিশাল-৪ আসনে শাম্মী আহমেদ, ফরিদপুর-৩ আসনে শামীম হক, কক্সবাজার-১ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) নগরীর নির্বাচন ভবনে তাদের প্রার্থিতা নিয়ে আপিলের শুনানি করে এ ঘোষণা দেয়।
চার প্রার্থীর মধ্যে শাম্মী আহমেদ, শামীম হক ও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে এবং সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রার্থিতা ঋণ খেলাপির কারণে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
তবে, বরিশাল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ এবং ফরিদপুর-৩ আসনে ব্যবসায়ী এ কে আজাদের আগামী জানুয়ারি-৭-এর আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। কারণ কমিশন শুক্রবার তাদের প্রার্থীতার বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল খারিজ করে দিয়েছে।
বরিশাল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার কারণে শাম্মী আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
শাম্মী রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে দুটি আপিল জমা দিয়েছেন- একটি তার মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে এবং আরেকটি পঙ্কজ দেবনাথের মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিরুদ্ধে।
শাম্মী তার আবেদনে অভিযোগ করেছেন, পঙ্কজ দেবনাথ তার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন।
ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
কিন্তু প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে দুই প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে কমিশনে আবেদন করেন।
শামীম হক তার আবেদনে অভিযোগ করেছেন, এ কে আজাদ তার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন।
অন্যদিকে এ কে আজাদ অভিযোগ করেছেন, শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।
শুক্রবার কমিশন এ কে আজাদের দায়ের করা আবেদনটি গ্রহণ করে এবং শুনানি শেষে শামীম হকের করা আপিল বাতিল করে।
বরিশাল-৫ আসনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীম রিটার্নিং অফিসারের সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্র গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করে কমিশনে আপিল জমা দেন।
জাহিদ ফারুক তার আপিলে অভিযোগ করেন, সাদিক আবদুল্লাহর দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।
ঋণ খেলাপির অভিযোগে কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে তিনি কমিশনে আবেদন করেন। কিন্তু কমিশন তার আপিল শুনানি করে খারিজ করে দেয়।
গত ১০ ডিসেম্বর থেকে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীদের করা আপিলের শুনানি ও নিষ্পত্তির কাজ শুক্রবার শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রার্থিতা নিয়ে ইসির সিদ্ধান্তে কেউ ক্ষুব্ধ হলে তাকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
মনোনয়নপত্র বাতিল বা গ্রহণের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মোট ৫৬১ জন প্রার্থী ইসিতে আপিল করেছেন।
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারাদেশের ৩০০টি আসনে ৭৪৭ জন স্বতন্ত্রসহ মোট ২ হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
কিন্তু রিটার্নিং অফিসাররা ১৯৮৫ জনের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন এবং ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৯টি দল সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে বিএনপি এবং আরও কিছু দল এই নির্বাচন যা বর্জন করছে।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর এবং প্রার্থীরা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি (সকাল ৮টা) অর্থাৎ, ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।