বছরের শুরুতেই নিপাহ ভাইরাসের মরণঘাতী সংক্রমণের শিকার হলেন মানিকগঞ্জের মান্তা গ্রাম নিবাসী ৩৮ বছর বয়সী বাবুল হোসেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী।
আক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসাধীন পরীক্ষার জন্য রোগীর নমুনা পাঠানো হয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইইডিসিআর (ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ)-এ। গবেষণায় বেরিয়ে আসে- বাবুল মিয়া কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়েছিলেন নিপাহ ভাইরাসে।
১১ দিন আগে একইভাবে আরও একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বাবুল মিয়ার পাশের গ্রাম ঘোস্তায়। নিহত ব্যক্তি ২৭ বছর বয়সী লুৎফর রহমান। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র অনুসারে লুৎফরের বিষয়টিতে নিপাহ ভাইরাসের সুস্পষ্ট কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এরপরেও আতঙ্ক বিরাজ করছে গোটা উপজেলাজুড়ে।
তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে এই ভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ আশঙ্কাজনক। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বস্তরের জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। এই পরিপ্রেক্ষিতে নিপাহ ভাইরাস সম্বন্ধে সম্যক ধারণা নেওয়ার পাশাপাশি চলুন জেনে নেই- কীভাবে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিরোধ করবেন।
আরও পড়ুন: কিডনি পরিশোধনকারী ১০টি ভেষজ চা
নিপাহ ভাইরাস কী
জুনোটিক ভাইরাসের অনেকগুলো ধরনের একটি হচ্ছে নিপাহ ভাইরাস; সংক্ষেপে এনআইভি। জুনোটিক ভাইরাস বলতে এমন ভাইরাসকে বোঝানো হয়, যা মেরুদণ্ডী প্রাণী এবং মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তত্ত্বীয় দিক থেকে এনআইভির বাহক শ্রেণীটা বিশাল হলেও বাস্তবে শুধু শূকর এবং বাদুড়ের মধ্যে এর উপস্থিতি দেখা গেছে। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এনআইভির বাহক হচ্ছে টেরোপাস প্রজাতির ফল খেকো বাদুড়, যেটি ফ্লাইং ফক্স নামেও পরিচিত।
বিশ্বের সব থেকে বড় বাদুড়গুলোর নানা প্রজাতির মধ্যে একটি হচ্ছে এই টেরোপাস। এগুলোকে সাধারণত দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব আফ্রিকা এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চলগুলোতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় নিপাহ ভাইরাসে শ্বশুরের পর মৃত্যু হয়েছে পুত্রবধূর
নিপাহ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়
প্রাণীদেহের গুরুত্বপূর্ণ জিনগত উপাদান আরএনএ বা রাইবো নিউক্লিইক এসিড। এনআইভি মূলত এই আরএনএকে সংক্রামিত করার মাধ্যমে পুরো প্রাণীকে আক্রান্ত করে। তারপর অন্য কোনো প্রাণী কোনো মাধ্যমে সেই আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে এলে সঙ্গেসঙ্গেই সুস্থ প্রাণীটিতে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাল আরএনএ। এই মাধ্যমগুলো নানান ধরনের হতে পারে।
- সরাসরি সংক্রামিত প্রাণীর সংস্পর্শ, যেমন বাদুড়ের রক্ত, লালা, বমি বা মলমূত্র। ঘরবাড়ির আঙ্গিনা, পানির তোলার কূয়ার কাছে, চাষের ক্ষেত বা গৃহস্থালি পশুপাখির ঘরের পাশে খেজুর গাছ থাকলে এমন সংস্পর্শ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আক্রান্ত প্রাণীর শরীর নিঃসৃত নানা তরল পদার্থে দূষিত খাদ্য গ্রহণ, যেমন আক্রান্ত বাদুড়ের মুখ দেওয়া খেজুরের রস, বাদুড়ের নষ্ট করা কূপের পানি বা আধ-খাওয়া ফল।
- আক্রান্ত কোনো মানুষের সংস্পর্শ, যেমন রক্ত, থুথু, হাঁচি-কাশি, বমি, মলমূত্র, এমনকি শ্বাস প্রশ্বাস। এনআইভি বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পাড়ে এবং এটি একটি শক্তিশালী ছোঁয়াচে রোগ।
আরও পড়ুন: কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
প্রাথমিকভাবে মানুষে মানুষে সংক্রমণের ব্যাপারটি না থাকলেও বর্তমানে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ঘটনা প্রচুর ঘটছে।
হাসপাতালের যে কর্মীরা এ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্তদের সেবার নিয়োজিত থাকেন এবং খেজুরের রস সংগ্রহ কাজের সঙ্গে জড়িতরা এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে।