নৃ-জনগোষ্ঠি গারোদের অন্যতম প্রধান উৎসব ‘ওয়ানগালা’। নতুন ফসল ঘরে তোলাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব হিসেবে এ ওয়ানগালা উৎসব উদযাপন করা হয়।
এ বছর আগামী ২৩ ও ২৪ নভেম্বর শেরপুরে ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানগালা উৎসব।
মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর নিয়ন্ত্রণে জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতবাড়ী উপজেলা এবং পাশ্ববর্তী জামালাপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার গারো সমাজের ৪৭টি গ্রাম রয়েছে। ওইসব গ্রামের প্রায় ২২ হাজার খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস।
জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য খৃষ্টভক্ত এবং গারাগানজিং, কতুচ, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদক ও আরেং নামে ১২টি গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের শত শত লোক ওয়ানগালা উৎসবে শামিল হন।
গারো সম্প্রদায়ের কয়েকশত মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন।
এছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারোদের নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে র্যাফেল ড্র ও বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লীর পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে এক মেলা বসে।
আগামী রবিবার (২৪ নভেম্বর) মরিয়মনগর সাধূ জর্জের ধর্মপল্লীতে ওয়ানগালা উৎসবের ধর্মীয় ও সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা চলবে। তবে আগেরদিন শনিবার ময়িমনগর ধর্মপল্লী উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী গারোদের ঐতিহ্যবাহী রান্না ও খাবারের প্রদর্শনী। এ উপলক্ষে গারোদের ঐতিহ্যবাহী রান্না ও খাবারের প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
ঝিনাইগাতী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (টিডব্লিওএ) সাধারণ সম্পাদক অসীম ম্রং জানান, গারো জনগোষ্ঠির আধ্যাত্মিক ও মূল্যবোধকে আরও সমৃদ্ধ এবং ঐতিহ্যবাহী গারো কৃষ্টি ও সংস্কৃতি চর্চায় নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা হয় এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। যাতে বর্তমান প্রজন্ম এখান থেকে বুঝতে ও শিখতে পারে। ওয়ানগালা উৎসবটি গারো সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবও বটে।
মরিয়মনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অঞ্জন আরেং বনে, ওয়ানগালা উৎসব আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো লুপ্তপ্রায় গারো জনগোষ্ঠির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির চর্চায় উৎসাহিত করা এবং ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠির নিকট তুলে ধরা। যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এই সংস্কৃতি চর্চা ও সংরক্ষণ করতে পারে।