গরু চুরির অভিযোগে সিলেটের গোয়াইনঘাটে গণপিটুনি দেওয়ার পর চুন ও বালু মিশ্রিত পানি খাইয়ে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তবে দীর্ঘ সময় তাকে আটকে রেখে দফায় দফায় মারধর করা হলেও পুলিশ তৎপর হয়ে তাকে উদ্ধার করলে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হতো বলে মত স্থানীয়দের।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলার জাফলং ইউনিয়নের জাফলং চা বাগানে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকের নাম হেলাল উদ্দিন। তিনি উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের দাতারি গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, চা বাগানে গরু চুরির অভিযোগে ইসলামপুর গাংপার গ্রামের মনিরের ছেলে মোশাররফ হোসেন, আমির উদ্দিন ও একই গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে সালামসহ তার সহযোগিরা হেলালকে ধরে নিয়ে যান। এরপর তারা হেলালকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেন এবং জোর করে চুন ও বালু মিশ্রিত পানি খাওয়ান।
নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লে জাফলং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তাকে ফেলে রাখা হয়। পরে বুধবার তার স্বজনরা সেখান থেকে অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে আসার সময় পথে বমি ও রক্তক্ষরণে মারা যান হেলাল।
এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, পুলিশের অবহেলার কারণেই মৃত্যু হয়েছে হেলালের।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে গণপিটুনিতে ছিনতাইকারীর মৃত্যুর অভিযোগ
ডৌবাড়ী ইউনিয়নের সচেতন মহল অভিযোগ করে জানান, চুরির জন্য হেলালকে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে রাতভর মারধর করা হয়। সেটি কি পুলিশ দেখেনি বা শুনেনি? পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করলে এমন হত্যাকাণ্ড হতো না।
তবে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ও জাফলং ইউনিয়ন বিট অফিসার প্রভাকর জানান, মঙ্গলবার সন্ধায় হেলালকে উদ্ধার করার জন্য তিনি গিয়েছিলেন, কিন্ত সেখানে থাকা লোকজন তাকে বলে, হেলালের পরিবারের লোকজন আসলে তাদের কাছে দিয়ে দেবে। তারপর তাকে সেখানে রেখে চলে আসেন তিনি।
এদিকে, হেলালের পরিবারের সদস্যদের দাবি, পুলিশ সময়মতো উদ্ধার না করায় হেলালকে ইচ্ছামতো দফায় দফায় মারধর করেছে মোশাররফ বাহিনী। পরে রাত ৩টার দিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা সেখান থেকে হেলালকে উদ্বার করে নিয়ে আসার সময় পথেই তার মৃত্যু হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেনি। তারা উদ্ধারের নামে দায় এড়িয়েছে মাত্র।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই ভাই নিহত
অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি কোনো মারধর করিনি। আমার এলাকার মানুষ মারধর করেছে। কিছু সময়ের জন্য আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম।’
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অতিরিক্ত মারধর এবং চুন-বালু মিশ্রিত পানি খাওয়ানোর কারণে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’