এ আয়োজনকে ঘিরে মা-বাবা হারা এতিম শিশুদের যেন আনন্দের শেষ ছিল না। নিজেদের হাতে তৈরি পিঠা ভাগাভাগি করে খেয়েছে তারা। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।
আরও পড়ুন: করোনা প্রতিরোধে ‘আইডিয়া’র ‘ইমিউনিটি পিঠা’
সদর উপজেলার সীমানন্দপুর গ্রামের ‘আজিজুর রহমান বালিকা সমাজ সেবা এতিমখানা’-তে রবিবার ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজন করা হয়।
এতিমখানাটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। এখানে দুই শতাধিক শিশুর বসবাস। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এতিম সদস্যের সংখ্যা ১৪০ জন। মা-বাবা হারা এসব শিশুদের কষ্ট লাঘবে আয়োজন করা হয় খেজুর রসে ভেজানো পিঠা উৎসব।
প্রতিষ্ঠানের মেয়েরা নিজেরাই চালের গুড়া তৈরি ও খেজুর রস জ্বালিয়ে পিঠা বানিয়ে এক সাথে বসে তৃপ্তি সহকারে খেয়েছে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় বসন্ত উৎসব ও পিঠাপুলির মেলা
এতিমখানার নিবাসী মদিনা খানম, মাহমুদা খানম, নাঈমা সুলতানাসহ কয়েকজন বলে, ‘আমরা বিভিন্ন এলাকার বোনেরা সবাই একসাথে এতিমখানায় বাস করি। আমাদের কারও মা আবার কারও বাবা নেই। বাড়িতের আর্থিক অবস্থাও ভালো না। এ শীতে খেজুর রসের পিঠা খাওয়ানোতে আমরা খুব খুশি হয়েছি। অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন ফল খাওয়ানো হয়। কিছু দিন আগে আমাদের চিতই পিঠা খাওয়ানো হয়েছিল।’
‘আমরা নিজেরা আতপ চাল থেকে গুড়া তৈরি করেছি। খেজুর রস জ্বালিয়ে তার মধ্যে পিঠা ভিজিয়ে ভেজা পিঠা তৈরি করেছি। আমরা একসাথে বসে খেয়েছি। মাঝে মধ্যে অনেক স্যাররা এসে আমাদের মিষ্টি, ভাত-মাংস খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। আমরা সবাই মিলে-মিশে থাকার কারণে মা-বাবার কষ্ট ভুলে থাকতে পারি। আমাদের এখানের স্যাররাও আমাদের খুব ভালোবাসেন,’ জানায় তারা।
আরও পড়ুন: মেহেরপুরে কয়েদিদের ইচ্ছা পূরণে ভাপা পিঠা উৎসব
এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শিশুরা এ এতিমখানায় বসবাস করে। এখানে দুই শতাধিক মেয়ে রয়েছে। আমরা ১৪০ এতিম শিশুর জন্য সরকারি অনুদান পেয়ে থাকি। এখানে বসবাসরত শিশুরা আমাদের সন্তান। এদের কারও মা নেই আবার কারও বাবা নেই। অনেকের বাবা-মা কেউ নেই। বাড়ির আর্থিক অবস্থাও ভালো না। তাই তাদের চাহিদা আমরা পূরণ করার চেষ্টা করি। ওরা যাতে কষ্ট না পায় সে জন্যই খেজুর রসের ভেজা পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে আগে চিতই পিঠার উৎসব করা হয়। এছাড়া মৌসুম অনুযায়ী ফল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।’
আরও পড়ুন: রাজধানীতে শহরবাতি’র শীতের পিঠা মেলা
তিনি জানান, এতিমখানার নিবাসীরা বয়স ভেদে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে অধ্যায়ন করে।
এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা চণ্ডিবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে খরচ বহন করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। (সরকারি অনুদান বাদে) বাকি সব এতিমের ভরণ-পোষণ বিত্তবানদের সহযোগিতায় চলে। এতিম শিশুদের লালন-পালন ও জীবনমান উন্নয়নে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’