স্থানীয়রা জানান, বেজেরডাঙ্গায় এক বছর আগেও প্রায় ১৬ থেকে ১৭শ নার্সারি ছিল, সেখানে আজ ১১ থেকে ১২শ’ নার্সারি রয়েছে। অবশ্য ফুলতলা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৯০ হেক্টর জমিতে তিনশ’ নার্সারি রয়েছে।
নার্সারি মালিকদের অভিযোগ, এই শিল্পের প্রসার ঘটানোর জন্য স্থানের অভাবে থাকায় অনেক নার্সারি মালিক এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন।
এদিকে, নার্সারি শিল্পের উপযোগী জমিতে ইটের ভাটা ও শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠায় জায়গার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে অনেক নার্সারি মালিক এলাকার বাইরে গিয়ে জমি লিজ নিয়ে চারা উৎপাদন করছে। এ জন্য উৎপাদন খরচও দ্বিগুন হচ্ছে।
ফুলতলার মাটি অত্যন্ত উর্বর হওয়ায় এখানে বিভিন্ন জাতের ফলজ, বনজ ও ঔষধী চারা উৎপাদান করা হয়। যেমন ফলজ আম, কাঁঠাল, লিচু, নারকেল, কুল, জামরুল, বাতাবি লেবু, বনজ চারার মধ্যে মেহগনি, সেগুন, সিরিশসহ অন্যান্য, ঔষধি গাছের মধ্যে আমলকি, হরতকি, বয়রা, চালতে, লেবুসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির চারা উৎপাদন হয়।
ইতোপূর্বে এখান থেকে প্রতিদিন পরিবহনযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে নার্সারি মৌসুমে উৎপাদিত চারা ব্যাপকহারে বিক্রি হতো। বর্তমানে করোনা ও বন্যার কারণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি কিছুটা বাধাগ্রস্থ হওয়ায় আশপাশ জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের আগমন কম হচ্ছে। এতে নার্সারী শিল্প দিন দিন ধস নামছে বলে নার্সারি মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নার্সারি মালিক আ. সালাম বলেন, সারা বছর নার্সারীর উপর নির্ভর করে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকেন। এ বছর উৎপাদিত চারা বিক্রির পরিমাণ কম হওয়ায় সারা বছর শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ মিটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলা নার্সারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ফুলতলা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার জানান, সারা বাংলাদেশের মধ্যে ফুলতলার নার্সারি শিল্প অন্যতম স্থান দখল করে আছে। বর্তমানে এ শিল্প নানা সমস্যায় জর্জরিত। সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বার বার নার্সারি জোন ঘোষণার দাবি করা স্বত্বেও এটি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এলাকায় যত্রতত্র ইট ভাটা ও শিল্প কলখানা গড়ে উঠায় নার্সারি শিল্পের প্রসার ঘটছে না।
অপরদিকে, দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা এবং করোনার কারণে নার্সারি শিল্পের ভরা মৌসুমে বাইরের ক্রেতার উপস্থিতি খুবই কম। বিভিন্ন জেলায় সামান্য পরিমাণ চারা বিক্রি হচ্ছে বলে কোনো মতে নার্সারি ব্যবসায়ীরা বেঁচে আছে।
উপজেলা নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বিগত মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার চারা বিক্রয় হতো। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার চারাও বিক্রি হচ্ছে না।
তিনি জানান, ইতোপূর্বে সিঅ্যন্ডবি’র জায়গায় নার্সারি ব্যবসায়ীরা উৎপাতি চারা রেখে কেনাবেচা করতো। বর্তমানে সিঅ্যান্ডবি’র পেছনে প্রকৃত জমির মালিকদের চারা অবতরণ ও বিক্রির জন্য ভাড়া দিতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
ফুলতলা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা জানান, করোনার কারণে সরকারিভাবে বৃক্ষ মেলা না হলেও কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে নার্সারি মালিকদের সকল ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।