খুলনায় আকাশ ছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বাজার মনিটরিং না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। শিম ফুলকপি,বাঁধাকপি,মুলার পাশাপাশি বাজারে বেগুন, পটল,ঢেঁড়স,ঝিঙা ও করলার পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু এতো বাহারি সবজি থাকার পরও বেশ চড়া দামেই বিক্রি করা হচ্ছে এসব সবজি। ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়লেও স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের।
বিক্রেতাদের দাবি,গত কয়েক মাস ধরে সবজির দাম বাড়তি থাকলেও সপ্তাহ ধরে কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি সবজি মৌসুমী না হওয়ায় সেগুলোর দাম কিছুটা বাড়তিই রয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার নগরীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহের বাজারে তেমন দেখা মেলেনি। শিমের পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের অন্যতম সবজি বাঁধাকপি ও ফুলকপি। ছোট আকারের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা পিস,যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। শুক্রবারেও বাজারে বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬০ টাকা। তবে তুলনামূলক দাম কমার তালিকায় আছে মুলা। শীতের আগাম এ সবজিটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা,যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো ও গাজরের দাম এখনও চড়াই রয়েছে। পাকা টমেটো আগের সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। এদিকে শিমসহ নতুন কিছু সবজি আসায় কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে করলা, ঝিঙে,বরবটি,বেগুন,পটল,ঢেঁড়স,ধুন্দলসহ সব ধরনের সবজি। করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। চিচিঙ্গা,ঝিঙে,ধুন্দলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে স্বেচ্ছাসেবকদের ‘বিনা লাভের বাজার’
গত সপ্তাহের মতো ছোট আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পিস। এদিকে বাজারে সবচেয়ে কমদামি সবজি হিসেবে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে। বাজারগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখী কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা,বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা,করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা,পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা,ঢেঁড়স ৪০ টাকা,বরবটি ৬০ টাকা,পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা,ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা,চিচিঙ্গা ৬০ টাকা,কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা,ঝিঙা ৬০ টাকা,শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি সিম ২০০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস,পাকা টমেটো প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ও গাজর ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে লেবুর হালি ১৫ থেকে ৩০ টাকা,ধনেপাতা কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা,মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তবে গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ৮০ টাকা কমে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ।
বাজারগুলোতে লাল শাক ১৫ টাকা আঁটি,লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা,পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা,কলমি শাক ১০ টাকা,পুঁই শাক ৩০ টাকা ও ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কামরুল আহসান নামে এক ক্রেতা বলেন, দুয়েকটি সবজি বাদে সব সবজির দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকার ওপরে। সবজির এতো দাম হলে স্বস্তি মেলে কী করে? আমরা তো ভেবেছিলাম নতুন সরকার ঠিকঠাকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না। বাজার এখনও সিন্ডিকেটের দখলেই রয়ে গেছে।’
তিনি বলেন,‘সবজিতে বাজার ভরপুর। অথচ দামের বেলায় মনে হয় এগুলো বিরল প্রজাতির সবজি। দু-তিন রকম সবজি কিনলেই ১০০ থেকে ১৫০ টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। মাছ-মাংস বাদ দিয়ে সবজি কিনে খাবো তারও উপায় নেই। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে।’
এদিকে সবজির দাম প্রসঙ্গে নগরীর সান্ধ্য বাজারের সবজি বিক্রেতা রফিক বলেন,‘বাজারে তুলনামূলক সবজির দাম কিছুটা কমই। তবে যেগুলো নতুন এসেছে সেগুলোর দাম একটু বেশি। গতকালকের বাজারে শিম বিক্রি করছি ২০০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে শিম ছিলই না। শিমসহ ২ থেকে ৪ আইটেমের সবজি বর্তমানে মৌসুমের না হওয়ায় কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার নতুন করে এসব সবজি উঠতে শুরু করলে এগুলোরও দাম কমে যাবে।
বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা,আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা ও আলু কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা,গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা,গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস প্রতি কেজি ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা, হাঁসের ডিম ১৮০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নগরীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে,সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে,যা গত সপ্তাহে ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারগুলোতে সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকা,দেশি মুরগি ৩০ টাকা কমে ৫২০ টাকা,লেয়ার লাল মুরগি ১০ টাকা কমে ৩০০ টাকা ও সাদা লেয়ার কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভরা মৌসুমেও খুলনার বাজারে দেখা মিলছে না ইলিশের, দামও চড়া