গাইবান্ধার চার উপজেলার অন্তত ২১টি পয়েন্টে নদীর পাড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), গাইবান্ধার তথ্যনুযায়ী জেলার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি কমলেও পাড় ভাঙে, বাড়লেও ভাঙে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, মিয়ার বাজার, পোড়ার চর এলাকায় দেখা দিয়েছে তিস্তার ভাঙন। যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে গাইবান্ধা সদর সিদাই, হাসধরা, মোল্লারচর, কামারজানিতে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমলেও ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া, রতনপুর, চরগুপ্তমনি, কোচখালি, কুন্দেরপাড়াসহ বেশ কিছু পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ জানান, ভয়াবহ ভাঙনে উড়িয়া ও রতনপুরসহ কয়েকটি গ্রামের অর্ধেক বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। এসব এলাকা থেকে অনেক মানুষ বসতবাড়ি হারিয়ে এখন পথে বসেছে। কিছু পরিবার পাশের এলাকার জমিতে ঘরবাড়ির অংশ ও চালা ফেলে রেখেছেন। নিজের জায়গা-জমি হারিয়ে অনেকেই অন্যের জমিতে ঘর তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবার কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
আরও পড়ুন: সরকারের পদক্ষেপের কারণেই সারাদেশে নদীভাঙন কমে এসেছে: পানিসম্পদ উপমন্ত্রী
একই এলাকার নুরুন্নবী মিয়া জানান, তার বাড়ি ছিল নদী থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দূরে। কিন্তু গেল বছর ভাঙনের কারণে রতনপুরে এসে ঠাঁই গড়ে তোলেন। এবার পানি বাড়ার সময় ও কমার সময় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, এলাকার বাসিন্দারা নদীভাঙন প্রতিরোধে মানববন্ধন করেছেন। তবে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সে কারণে এই এলাকা থেকে অনেক পরিবার চলে গিয়ে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া একাডেমি এলাকায় থাকার জায়গা করে নিয়েছে। তারা অর্থ ও খাবার সংকটে ভুগছেন।
সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট বলেন, যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে সাঘাটা উপজেলার মুন্সিরহাট, ভুষির ভিটা, দাড়িয়ার ভিটা এলাকার চার শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, জমিজমা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত তিন দিনে তিন শতাধিক পরিবার ঘরের চালা খুলে নিয়ে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। আর যারা কোথাও আশ্রয় নিতে পারেনি তারা পরিবার নিয়ে স্থানীয় একটি স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই বাস করছেন খোলা আকাশের নিচে। খোলা জায়গায় রান্না করতেও দেখা গেছে অনেককে।
ময়না নামে এক গৃহবধূ জানান, ভাঙন ঠেকানোর কাজ হচ্ছে, বর্ষার সময় বস্তা ফেলা হচ্ছে, কিন্তু কোথায় যাচ্ছে বস্তা তা কেউ বলতে পারে না। ঠিক মতো কাজ না করলে ভাঙন ঠেকানো মুশকিল হবে, আমাদের মতো অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে স্কুলে আশ্রয় নিতে হবে।
‘ভাঙন ঠেকানোর নামে কাজ করলেও পুরো টাকা যাচ্ছে পানিতে। শুষ্ক মৌসুমে কাজ করলে হয়তো আমাদের পথে বসতে হতো না’- এমন অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা মুন্না মিয়া।
এ ব্যাপারে পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মজিবুর রহমান বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে কয়েকটি পয়েন্টে বালুর বস্তা ও জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। জরুরিভাবে এই প্রতিরোধ কাজ করা হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই ভাঙন প্রতিরোধ হবে।
আরও পড়ুন: বন্যা ও নদীভাঙন মোকাবিলায় ১৮০৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন একনেকে