চট্টগ্রামে এবারের কোরবানির ঈদে সাড়ে ৩ লাখ গবাদি পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রামের আড়ৎদাররা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অনুরোধে স্থানীয়ভাবে এক থেকে দুই সপ্তাহ সংরক্ষণ করারও প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।
সোমবার (১৭ জুন) বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা। রেওয়াজ অনুযায়ী পরের ২ দিনও কিছু পশু কোরবানি করা হবে। ওই সময় পাড়া-মহল্লা থেকে কাঁচা চামড়া কিনে বা সংগ্রহ করে মৌসুমি ক্রেতারা তা বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ৎ সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করবে।
কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ কেনা, চামড়াজাত করার জন্য গুদাম ভাড়া এবং শ্রমিক ঠিক করে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন কাঁচা চামড়া আড়ৎদার সমিতি।
প্রতিবার বর্গফুট হিসেবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হলেও এবার পিস হিসেবে আলাদা দাম প্রকাশ করায় মৌসুমি-ফড়িয়া ও আড়ৎদারদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা করছেন ট্যানারি মালিকরা।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান রাতারাতি চামড়া ঢাকায় না নেওয়ারও অনুরোধ করেছেন আড়ৎদারদের।
ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩ টাকা বেড়েছে।
ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
ঢাকার বাইরে (চট্টগ্রামে) লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গতবছর যা ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ছিল।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের আতুরার ডিপোর আড়ৎপাড়া থেকে প্রতি বছর ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ লবণজাত চামড়া যায় ঢাকার ট্যানারিগুলোতে।
এবছরও একই পরিমাণ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে আড়ৎদাররা। কিন্তু প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা বুঝে পাননি আড়ৎদাররা। গেলবারের চেয়ে সরকার নির্ধারিত বাড়তি দামে চামড়া কেনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে আড়ৎদার সমিতি।
কয়েক বছর আগেও ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত দেড়শ’ আড়ৎদার চামড়া সংগ্রহ করতো চট্টগ্রামের আতুরার ডিপো আড়ৎপাড়া থেকে। কিন্তু এখন এই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ জনে।
আরও পড়ুন: খুলনায় চামড়া সংরক্ষণে অনিশ্চয়তা
বকেয়া টাকা বুঝে না পাওয়ার পাশাপাশি লবণ, লেবার ও পরিবহন খরচ যোগাড় করতে না পেরে ব্যবসা ছেড়েছেন অনেকে।
ট্যনারি মালিকরা বলছেন, বর্গফুট হিসেবে চামড়ার দাম এক পিচ হিসেবে ভিন্ন। লবণযুক্ত, লবণ ছাড়া, ঢাকার ভেতরে ও ঢাকার বাইরে আলাদা আলাদা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এত সব জটিল কঠিন হিসেবে নিকেশ না বোঝায় মৌসুমি ব্যবসায়, ফড়িয়া কিংবা আড়ৎদারদের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ার শঙ্কা আছে এবার।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, ‘গতবছর চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদে প্রায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম আমরা। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি ছিল গরুর চামড়া। এবার গরু, ছাগল, মহিষ মিলে সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট আছে আমাদের। এখন আমাদের লবণ ক্রয়, লোকবল ঠিক করা, গুদাম ঠিক করাসহ সার্বিক প্রস্তুতি চলছে।’
তিনি আরও বলেন, এবছর গরমের তীব্রতা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি, যেটা চামড়া সংগ্রহের জন্য অনূকূলে নয়। চামড়া রেখে দিলে খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ থাকবে চামড়া সংগ্রহ করার পর যাতে দ্রুত আড়তে নিয়ে আসে অথবা লবণ দিয়ে স্থানীয়ভাবে মজুদ করে রাখা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির চামড়া স্থানীয়ভাবে ৭ থেকে ১০ দিন সংরক্ষণ করতে হবে। চামড়া যেন বর্ডার ক্রস না করে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। সংরক্ষণ করতে গিয়ে চামড়া যেন নষ্ট না হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে কাজে লাগাতে হবে, উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: চামড়া পাচার ঠেকাতে হিলি সীমান্তে কঠোর নজরদারি বিজিবির