‘জাতীয় উন্নয়নের জন্য তরুণদের ক্ষমতায়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাগো ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বুধবার থেকে কক্সবাজারের লং বিচ হোটেলে শুরু হয়েছে ‘চতুর্থ জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২০’। এই সম্মেলনটি আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
তরুণদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জন, দীর্ঘ মেয়াদে বিকাশ ও বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ভূমিকা রাখতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তরুণদের ক্ষমতায়নের জন্য উপযোগী প্ল্যাটফর্ম হলো জাতীয় যুব সম্মেলন। এছাড়াও, এই সম্মেলনের মাধ্যমে তরুণরা ভিন্ন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভের পাশাপাশি প্রায়োগিক বিষয়গুলো সম্পর্কেও ধারণা লাভ করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘তারুণ্য প্রাণশক্তিতে ভরপুর। আর বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যাই তরুণ। তাই, আমাদের তরুণদের উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। এসডিজি অর্জনে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তরুণদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য জাতীয় যুব সম্মেলন একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম।’
শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আগত প্রতিনিধি, দেশের সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব, মন্ত্রী, কূটনৈতিক এবং সমাজের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারক ও সারাদেশ থেকে আগত তরুণদের অংশগ্রহণ সম্মেলনটিকে এক মিলন মেলায় পরিণত করেছে। ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের তরুণ ভলান্টিয়াররা সম্মেলনে তাদের ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, পরিকল্পনা এবং মানুষের উন্নয়নে তাদের কর্মকাণ্ডগুলো সবার সামনে তুলে ধরবে। অন্যদিকে, সম্মেলনে আগত অতিথিরা তাদের অভিজ্ঞতা, আইডিয়া, ভবিষ্যতে দেশকে যারা নেতৃত্ব দেবেন সেসব তরুণ সমাজের কাছে তাদের প্রত্যাশার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। এই সক্রিয় তরুণ নাগরিকরা সম্মেলন শেষে নিজের জেলায় ফিরে গিয়ে নিজেদের কমিউনিটির বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবেন এবং এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সামনের দিনগুলোতে কাজ করবেন।
এ বছর সম্মেলনটিতে সারাদেশ থেকে আগত ৬শ' তরুণ অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে ৩০টিরও বেশি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অনুষ্ঠানের সূচনা ও মিশনের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় ও পরের দিনগুলো জ্ঞান বিনিময়, দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও তথ্যবহুল কর্মশালা দিয়ে সাজানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে তরুণদের ক্ষমতায়ন করতে পারলে তারা সমাজে বিদ্যমান দারিদ্রতা, সহিংসতা ও অনাচারের মতো বিষয়গুলো সহজেই চিহ্নিত করতে পারবে। তরুণদের সক্ষমতা বিকাশে সাহায্য করার চেয়ে ভালো বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। সম্মেলনের কর্মশালাগুলো তরুণদের অভিজ্ঞতা ও চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করবে।’
চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সুপরিচিত ব্যবসায়ী নেতা ও প্রতিনিধিরা বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তাদের মতামত দেবেন। এর মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন, সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অর্থিক বিষয়ে ধারণা লাভ, তরুণদের উদ্বুদ্ধকরণ, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন, কার্যকরী যোগাযোগ, মানব সম্পদ ও সাফল্য গাঁথা।
অনুষ্ঠানে জাগো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক করভি রাকসান্দ বলেন, তরুণ জনগোষ্ঠীই সমাজের মেরুদণ্ড। তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সম্পৃক্ত করা ও তাদের ক্ষমতায়নে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। এই তরুণরাই তাদের নিজেদের কমিউনিটির পরিবর্তনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে এবং বাংলাদেশের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই সম্মেলনে বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৭৫ জনেরও বেশি বক্তা এবং একাধিক বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তির সমন্বয়ে প্যানেল থাকবে। এদের মধ্যে রয়েছেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ শারহান নাসের তন্ময়, কন্টেন্ট নির্মাতা ও ভিডিও ব্লগার ডিয়ার অ্যালেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাই কমিশনার কানবার হোসেন বর, বিজিএমই’র প্রেসিডেন্ট রুবানা হক, ব্র্যাকের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আসিফ সালেহ, আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোমিনুল ইসলাম, গ্রিন ডেল্টার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফারজানা চৌধুরী, নভোএয়ারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মফিজুর রহমান, অ্যাপেক্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ নাসিম মনজুর, আইডিএলসি ভেঞ্চার ক্যাপিটালের পার্টনার সামাদ মিরালী, টেন মিনিটস স্কুলের সিইও আয়মান সাদিক, ডন সামদানি ফ্যাসিলিটেশনের চিফ ইন্সপিরেশনাল অফিসার গোলাম সামদানী ডন, ইউএন ওমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শোকো ইশিকাওয়া, ওয়াটারঅ্যাইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, ইউএনডিপি বাংলাদেশের রেসিডেন্ট রিপ্রেসেন্টেটিভ সুদীপ্ত মুখার্জী এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশনস মো. আব্দুল কাইয়ুম।