একদিকে দেশের পূর্বাঞ্চলে ১১টি জেলা বন্যায় প্লাবিত অন্যদিকে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৪টি গ্রামে নদীর পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার মানুষ।
গত চার দিন নারী-পুরুষ সবাই একসঙ্গে চেষ্টা করেও বাঁধ নির্মাণ করতে পারেনি। বরং দিনদিন ভাঙন আরও বাড়ছে।
ভেসে গেছে অনেক মাছের ঘের ও পুকুর। ভেসে গেছে ফসলের খেত। খরস্রোতা নদীর তীব্র জোয়ারের সময় নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ২১ আগস্ট বিকেলে হঠাৎ করে পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ড পোলডারে জোয়ারের সময় ভাঙন দেখা যায়। তখন নারী-পুরুষ সবাই একসঙ্গে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হননি তারা। বরং নদী ভাঙন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে।
দেলুটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিপন মণ্ডল ইউএনবিকে বলেন, কালীনগর, দারুল মল্লিক, সৈয়দ খালি, হরিনখোলা, সেনেরহাট, গোপীপাগলা, খেজুরতলা, তেলিখোলা, হাটবাড়ি, ফুলবাড়ি, বিগড়দানা, দূর্গাপুর ও নোয়াল- এ ১৪টি গ্রাম পানিতে ডুবে আছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে বিএনপির উপকমিটি গঠন
চেয়ারম্যান আরও জানান, এসব গ্রামে আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় কিছু মানুষ পানির মধ্যে বাস করছে। আর কিছু মানুষ বিভিন্ন স্কুল, রাস্তা ও উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজনীন বেগম জানান, প্রায় দুই হাজার মানুষকে বিভিন্ন স্কুলে নিয়ে আসা হয়েছে এবং যথাসাধ্য ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বানভাসী মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
কিন্তু বানভাসি মানুষ বলছে তারা ত্রাণ চান না।তারা টেকসই বেড়িবাঁধ চান।
দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজিদ শেখ বলেন, ‘আমাদের ত্রাণ দরকার নেই। আমরা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।’
আরেক গ্রামবাসী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘প্রতি বছর বাঁধ ভেঙে যায় আর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতে আবার ভাঙে। বাঁধ নির্মাণের টাকা হয় লুটপাট। আর আমরা হই নিঃস্ব। এর থেকে পরিত্রাণ চাই।’
আরও অনেক গ্রামবাসীর মতোই একই কথা বলেন লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই মূহূর্তে প্রয়োজন বাঁধ নির্মাণ। ত্রাণ লাগবো না। আর দরকার আশ্রয় কেন্দ্র।’
পাইকগাছা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস জানান, ৯৫০ হেক্টর আমন ধানের জমি, ২২৫ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা এবং ২৫ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক জানান, ৪০০টি মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণে সচেষ্ট আছে। তবে নদীর পানি ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় থাকায় বাঁধ নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।