২৫০ কোটি টাকা ঋণের বোঝা ও শতকোটি টাকা লোকসান নিয়ে রংপুর বিভাগের মধ্যে এখনো চালু রয়েছে একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ঠাকুরগাঁও চিনিকল।
৬৭ বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি, অনুন্নত জাতের আখ চাষ, মান্ধাতার আমলের চাষ পদ্ধতিতে আকড়ে থাকা, পরিচর্যায় অবহেলাসহ অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেড চলতি মৌশুমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।
এমন সাফল্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে ধ্বংসপ্রায় মিলটির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের মধ্যে।
চলতি মৌশুমে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের উৎপাদন শুরু হয় গত বছরের ২২ ডিসেম্বর এবং মিল বন্ধ হয় ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ মিলটি চালু ছিল মোট ৫৪দিন। এ সময়ের মধ্যে ছোটখাটো দু’একটি ত্রুটির কারণে দু’এক ঘণ্টা মিল বন্ধ থাকলেও বড় কোনো ‘শাটডাউনে’ যায়নি।
আরও পড়ুন: জয়পুরহাট চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু
এটিকে, একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন মিল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এবার ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের টার্গেট নিয়ে মিল চালু হলেও ৭৪ হাজার ৩৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। এতে চিনি উৎপন্ন হয়েছে ৪ হাজার ২১ মেট্রিক টন। চিনি আহরণের হার ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। যদিও আহরণ হারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
চিনি আহরণের এ নিম্ন হারের বিষয়ে কথা বললে সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান কবির বলেন, ‘নিম্ন হারের প্রধান কারণ হলো ৬৭ বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি। বিভিন্ন দেশে যেখানে সর্বোচ্চ ২৫ বছর একটি মিলের যন্ত্রপাতির স্থায়িত্ব হয়ে থাকে সেখানে আমাদের এ মিল ৬৭ বছর পরেও চিনি উৎপাদন করে যাচ্ছে। এছাড়াও উন্নত আখের জাত আমরা এখনও কৃষকের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। মাঠ পর্যায়ে অন্য ফসলের চেয়ে আখের চাষে কৃষকেরও কিছু অবহেলা আছে, ফলে কাঙ্খিত ফলাফল আসছে না।’
আরও পড়ুন: ফরিদপুর চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু, লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার টন
তিনি আরও জানান, এই অঞ্চলে (পঞ্চগড় ও সেতাবগঞ্জসহ) মাত্র ৪ হাজার ৬১০ একরে আখ চাষ হচ্ছে। একরপ্রতি আখের ফলন বাড়াতে হবে। এই ফসল চাষে অন্য ফসলের মতো যত্ন বাড়াতে হবে।
শাহজাহান কবির বলেন, আগামী ২৪-২৫ মৌসুম থেকে আখের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে যেখানে প্রতি কুইন্টাল আখ মিলগেটে ৫৫০ টাকা এবং বাইরে ৫০০ টাকা। ২০২৪-২৫ সালে বাড়িয়ে করা হয়েছে মিলগেটে প্রতি কুইন্টাল ৬০০টাকা এবং বাইরে ৫৮৭টাকা। এতে করে কৃষকরা আরও বেশি করে আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এ কারণেই তিনি প্রত্যাশা করছেন আগামী আখ মাড়াই মৌশুমে ৯০ হাজার মেট্রিক টন আখ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কৃষককে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করাই এখন প্রধান কাজ বলে তিনি মনে করেন। ইতোমধ্যে কৃষকদের মাঝে আখচাষে আগ্রহ বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।