আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে অবিলম্বে দেশব্যাপী একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশকর্মী ও বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীতে পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (ইএসডিও) আয়োজিত 'প্লাস্টিক চুক্তি আলোচনায় প্লাস্টিক দূষণ' শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্লাস্টিক দূষণ মানবতা ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই বড় সমস্যা।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক দূষণ কমাতে সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন, যা শেষ পর্যন্ত বৈশ্বিক চুক্তির দিকে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক দূষণ রোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
ইএসডিও'র চেয়ারপারসন ও সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মারগুব মুর্শেদ বলেন, এটা খুবই উদ্বেগজনক যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্লাস্টিক-দূষিত দেশ।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক পরিবেশের উপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি। প্লাস্টিক দূষণ এমন একটি সমস্যা, প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তা আমরা সমাধান করতে পারি না।
বিইউপির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনুষদ সহকারী ও সরকারের সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক বলেন, 'যখন প্রত্যেক মানুষ পরিবেশ সচেতন হয়, তখন তা পরিবেশের উপর উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। একবার ব্যবহারের প্লাস্টিক হ্রাস করা, বিকল্প পণ্য ব্যবহার করার মতো ছোট পদক্ষেপগুলো সম্মিলিতভাবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রধান আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক এস কে রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে প্লাস্টিক দূষণ মূলত এই নদীগুলোকে দূষিত করে।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক দূষণ উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে এবং উৎসগুলোতে আমাদের বর্জ্য সঠিকভাবে আলাদা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দুই দশক আগে বাংলাদেশে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হলেও রান্নাঘর, উন্মুক্ত স্থান ও খুচরা দোকানগুলোতে এখনও নন-বায়োডিগ্রেডেবল আইটেম পাওয়া যায়।
২০০২ সালে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ তৈরি, কেনা ও ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এই আইন বাস্তবায়নে মন্থর হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন: টিআইবি
গত বছর ইএসডিও'র এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ১৮টি আন্তঃসীমান্ত নদীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ৩৪৫ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য বহন করে। যার মধ্যে ২ হাজার ৮০২ টন আসে ভারত ও মিয়ানমার থেকে। ভারত থেকে আসে ২ হাজার ৫১৯ টন এবং মায়ানমার থেকে আসে ২৮৪ টন।
প্রতি বছর প্রায় ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে, যার মধ্যে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন টন আন্তঃসীমান্ত বর্জ্য।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১২টি উপকূলীয় এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া খুব ধীর গতিতে চলছে।
ইএসডিও'র সাধারণ সম্পাদক ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেছেন, এই প্লাস্টিক চুক্তি শুধু এক টুকরো কাগজ নয় তার চেয়েও অনেক বেশি।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য এমনকি আমাদের গ্রহের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলেও উপস্থিত রয়েছে, যা সামুদ্রিক জীবকে দমবন্ধ করে দেয়। এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা যা প্রতিটি জাতি, গোষ্ঠী ও ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে। এই দুর্যোগ সত্ত্বেও গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তি আমাদের আশা জাগায়।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংস্থাটি তরুণদের প্লাস্টিক দূষণের অবসান ঘটাতে বিশ্বব্যাপী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে সক্ষম করেছে।
আরও পড়ুন: ৫ম বারের মতো একক ব্যবহারের শীর্ষ প্লাস্টিক দূষণকারী কোকা-কোলা