মৃত রিপা দাস (৩২) রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলার রামকল গ্রামের মিঠুন সরকারের (৩৮) স্ত্রী। রিপা রামকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি ফরিদপুরের টেপাখোলা নিবাসী অনিল কুমার দাসের মেয়ে। চার বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম সন্তান সম্ভবা হয়েছিলেন তিনি।
রিপার ভগ্নিপতি ধীরাজ কুমার জানান, রিপা আড়াই মসের গর্ভবতী ছিলেন। কিন্তু এরইমাঝে তার রক্তক্ষরণ হওয়ায় রবিবার দুপুর ২টার দিকে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এমআর (গর্ভপাত) করাতে বলেন।
ধীরাজ জানান, এরপর রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রিপাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ কানিজ ফাতেমা তার এমআর করান। সোমবার সকাল ৭টার দিকে সেখান থেকে তাকে বের করে বেডে দেয়া হয়। এসময় রিপার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালের নার্স ও ইন্টার্নিদের কাছে অনুরোধ করেও তারা অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেননি। প্রায় এক ঘণ্টা পর একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার আনা হলেও তার আগেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। দুপুরে তার মৃতহেদ নিয়ে যাওয়া হয় রামকল গ্রামে।
ফমেকের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সোমবার সকালে গাইনি বিশেষজ্ঞ কানিজ ফাতেমা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অক্সিজেনের অভাবে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
ডা. কানিজ ফাতেমা জানান, অস্ত্রপচারের পর রোগীর অবস্থা ভালো ছিল। তবে সকালে হঠাৎ তার অবস্থার অবনতি ঘটায় তিনি মারা গেছেন। তখন তিনি সেখানে ছিলেন না।
এদিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাচ্ছেন না অনেক রোগী। শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার ব্যবসায়ী দিলদাল হোসেন (৪৪) জানান, গত রবিবার তিনি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা টিকিট কেটে বসে থেকেও তিনি চর্ম বিষয়ক কোনো চিকিৎসককে দেখাতে পারেননি।
সাইফুর রহমান বলেন, চিকিৎসকরা সরকারি নির্দেশনা মেনে রোগী দেখছেন। এখানে এসে চিকিৎসা পায়নি এ জাতীয় কোনো অভিযোগ তাকে কেউ দেয়নি।
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাংসদ খন্দকার মোশাররফ হোসেন বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে হাসপাতালে ডাক্তারদের অনুপস্থিতির ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, হাসপাতালে এসে রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না এ জাতীয় অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। এই সংকটকালে চিকিৎসকদের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভরসা বেশী। তাই তাদের (চিকিৎসক) কর্তব্যকাজে গাফিলতি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।