নিহতদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও গৃহবধূ রয়েছেন। এর মধ্যে আটজনই নারী।
এ ব্যাপারে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মো. মুশফিকুর রহমান জানান, মনের সাথে লড়াই করে পরাজিত হলেই একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। হতাশা থেকেই মানুষ আত্মঘাতী হয়। কোভিড-১৯ প্রভাবে চারপাশে মানুষের মাঝে হতাশা বেড়েছে। ব্যক্তি শ্রেণিভেদে হতাশার চিত্র আরও প্রকট। হতাশা থেকেই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।
যশোরের পুলিশ সুপার মো. আশরাফ হোসেন বলেন, 'একজন উপপরিদর্শক অসুস্থতা ও পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পাঁচদিন পর রবিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তবে জেলায় হঠাৎ করেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে, এটি ঠিক নয়। সচেতনতা বাড়াতে আমরা মোটিভেশন প্রোগ্রাম করছি।
জানা গেছে, সর্বশেষ ১২ জুন দিবাগত রাত ১টার দিকে খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন যশোর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম। শারীরিক অসুস্থতা ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
গত ৪ জুন ঝিকরগাছা উপজেলার মাগুরা গ্রামের নারায়ন চন্দ্রের স্ত্রী সাধনা রানী (৬০) কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন। একইদিনে চারজন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
তারা হলেন- সদরের কেসমত গ্রামের ইউসুব উদ্দিনের মেয়ে সানজিদা আক্তার (১৬), শহরের নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়ার ইতি খাতুন (২০), ভায়না গ্রামের মৃত মোজ্জাম্মেল হকের ছেলে ইমামুল হক (৪৫) ও মণিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ মোল্লার ছেলে হারুনার রশিদ (৪৫)।
গত ৬ জুন অভয়নগর উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামের আব্বাস মোল্লার ছেলে ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম (২৫) এবং ৭ জুন সদর উপজেলার জিরাট গ্রামের মনোয়ারা খাতুন (৭০) ও ডাকাতিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সাজেদা খাতুন (৩৩) গলায় ফাঁস ও কীটনাশকপানে আত্মহত্যা করেন।
দুদিন পর ৯ জুন গলায় ফাঁস দিয়ে বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের সাহিদুল ইসলামের মেয়ে উর্মি খাতুন (২১) ও অভয়নগর উপজেলার পাঁচকবর গ্রামের নাসিম হোসেনের মেয়ে শামীমা খাতুন (১৩) আত্মহত্যা করেন। পরের দিন ১০ জুন শার্শার হরিশচন্দ্রপুর গ্রামের এরশাদ আলীর স্ত্রী জান্নাতী খাতুন (২৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হওয়া প্রসঙ্গে কাউন্সিলর মো. মুশফিকুর রহমান জানান, করোনা পরিস্থিতিতে পুরুষরা বাড়িতে থাকছে। তাদের আয় কম হওয়ায় মেজাজ খিটমিটে হয়েছে। সেই মেজাজটা তারা নারীদের ওপর দেখাতে পারে। এতে সাংসারিক অশান্তি হয়। আর নারীরা এমনিতেই একটু বেশি আবেগপ্রবণ। এইসব কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি আরও জানান, হতাশার কথাগুলো আশপাশের কারো সাথে খোলামেলা আলোচনা করলে সমাধান সম্ভব। আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না। কাউন্সিলিং বৃদ্ধি করতে প্রাতিষ্ঠানিক ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।