মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ প্রত্যাখ্যান করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, ঝুঁকির মুখেই থাকছে মত প্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতা।
বুধবার (৩০ আগস্ট) টিআইবি বিশেষজ্ঞরা জানান, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ এর খসড়ায় বিতর্কিত 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের-২০১৮' বিতর্কিত ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও শাস্তি ও জামিন অযোগ্য ধারায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
খসড়াটি আইনে পরিণত হলে কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে মতামত ও তথ্য প্রকাশ করলে আইনি হয়রানির শিকার হবেন বলে জানান তারা।
বুধবার টিআইবির ধানমণ্ডিস্থ কার্যালয়ে 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন: একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা ও নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।
তুলনামূলক পর্যালোচনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম এবং ডেটা প্রোটেকশন অফিসার ড. মো. তরিকুল ইসলাম।
প্রস্তাবিত আইনের ৮, ৯, ১০ ও ১১ ধারায় বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিটিআরসিকে উপাত্ত ও তথ্য দুটোই মুছে ফেলতে বলবে এবং ৮(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো তথ্য দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে বা জাতিগত বিদ্বেষ বা ঘৃণা সঞ্চার করে, তা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ নিতে পারবে।
এই আইনে এই বিষয়গুলোর কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, তাই এখানে ব্যাখ্যা ও ভুল ব্যাখ্যার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করতে হবে, যা খুবই বিপজ্জনক।
তিনি বলেন, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হচ্ছে। আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব না করে সাইবার স্পেসে সংঘটিত অপরাধ ও জালিয়াতি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হওয়া দরকার।’
সাইবার সিকিউরিটি পলিসি অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে সাইবার স্পেসে নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশে যেসব সাইবার ক্রাইম হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় আমাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়েনি এবং আমরা সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছি।
যদিও প্রস্তাবিত আইনটি সাইবার নিরাপত্তার জন্য কিছুটা আশার সঞ্চার করেছে, খসড়াটি প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা গেছে, শিরোনামটি পরিবর্তিত হয়েছে, তবে উদ্বেগের ক্ষেত্রগুলোতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া সংসদে পাস হলে তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইনে পরিণত হওয়ার ব্যাপক ঝুঁকি থাকবে এবং এর ফলে সংবিধান প্রদত্ত জনগণের মৌলিক অধিকার লুণ্ঠিত হবে।
খসড়া আইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, বিবেক, চিন্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই কার্যকর থাকবে। সুতরাং এটা ভাবা অযৌক্তিক নয় যে এটি তার পূর্বসূরীর মতো একটি সীমাবদ্ধ আইনে পরিণত হতে চলেছে।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি বলে দেয়, আমরা সংবিধানে স্পষ্টভাবে বর্ণিত মতপ্রকাশ, বাক স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের অধিকারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার পর্যায়ে চলে যাচ্ছি। অতএব, আইনটি যে স্তরে রয়েছে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তিনি সংশ্লিষ্ট খাত, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে খসড়া আইনটি পর্যালোচনাকরার পরামর্শ দেন।