সিলেটের শাহপরাণ (রাহ.) মাজার এলাকায় অসামাজিকতাবিরোধী আলেম-জনতার সঙ্গে ওরসপন্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দু’পক্ষের ৩০ থেকে ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টা থেকে সাড়ে রাত ৪টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা চলে এই সংঘর্ষ হয়। পরে সেনা সদস্যের একটি টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, তিনদিন থেকে শাহপরাণ (রাহ.) মাজারে বার্ষিক ওরস চলছিল। এর আগে সিলেটের আলেমসমাজ শাহপরাণ মাজার ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ওরসের নামে অসামাজিকতা যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করেন।
এসব বৈঠকে কমিটির নেতাদের ওরসে কোনো অসামাজিকতা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এ অবস্থায় তিন দিন আগে শুরু হয় মাজারে ওরস। ওরস চলাকালীন তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে সেজন্য আলেম-সমাজের একটি প্রতিনিধি দল প্রথম দিন থেকেই মাজার এলাকায় অবস্থান করেন এবং সার্বিক বিষয়ে নজরদারি রাখেন।
সেই ধারবাহিকতায় সোমবার দিবাগত রাতেও তারা মাজারের মসজিদের সিঁড়িতে বসে কুরআন তিলাওয়াত ও গজল পরিবেশন করছিলেন। এ সময় ওরসে আসা মাথায় লাল কাপড় বাধা কিছু লোক তাদের ওপর হামলা করে মারধর করতে শুরু করেন। হামলার শিকার মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা এ সময় মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা বাইরে অবস্থান নিয়ে তাদের হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন এ সময়।
খবর পেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে গিয়ে মসজিদে আশ্রয় নেওয়া ছাত্র-শিক্ষককে উদ্ধার করেন এবং ওরসপন্থীদের ওপর চড়াও হন। ওরসে আসা লোকজনের তাবুগুলো ভেঙে দেওয়া হয়। এ সময় দুপক্ষের মাঝে সংঘর্ষ হয় এবং দুপক্ষের ৩০ থেকে ৩৫ জন আহত হন। পরে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সেনা সদস্যের একটি টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
আলেম-সমাজের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ‘শুরুতে ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও উত্তেজনা শুরু হওয়ামাত্র তারা সেখান থেকে চলে যায়। শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করেছে একটি তৃতীয় পক্ষ। তারা ওরসে আসা মাদকসেবী ও মাথায় লাল কাপড় বাধা কিছু লোককে পরিস্থিতি অশান্ত করতে উসকানি দিয়েছে। পরে তারা অতর্কিত আমাদের ওপর হামলা চালায়। মাজার কমিটির লোকও উসকানিতে জড়িত বলে জানান তারা।’
শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘মাজারের ওরসে আসা কিছু পাগল, ফকির ও আলেম সমাজের প্রতিনিধি দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। দুপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় কিছু ভাঙচুর হয়েছে। তবে এখানে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ মাজারে হামলা করতে আসেনি। এ ঘটনায় কারা জড়িত তা এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। তবে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। এ সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।