আইএমএফ
৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ: আইএমএফ অনুমোদন করতে পারে সোমবার
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত পেয়েছেন যে, বহুপক্ষীয় ঋণদাতার বোর্ড দেশটির ঋণের অনুরোধ অনুমোদন করতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার (৩০ জানুয়ারি) আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ঋণ অনুমোদন করবে।
রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি আইএমএফ দল প্রোগ্রামের বিশদ বিবরণ বের করতে গত ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর ঢাকা সফর করেছেন।
এরপর আইএমএফ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহ ১৪-১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন এবং তার সফরের সময় তিনি যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক অগ্রগতির প্রত্যক্ষ করেছেন তার প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্খাকে সমর্থন দেবে আইএমএফ: ডিএমডি
তিনি বলেন, এটি সারা বিশ্বে একটি প্রভাব ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন সায়েহ।
আইএমএফ এর সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর ইউএনবিকে বলেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং অন্যদের সঙ্গে যে পরিদর্শন ও আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়।
এছাড়া বৈশ্বিক ঋণদাতা দেশটিকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি শুধু আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষায় রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর আগে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবে ঋণ পাচ্ছি। বাংলাদেশের জন্য মোট ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া হবে।’
২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাতটি কিস্তিতে এই পরিমাণ অর্থ বিতরণ করা হবে।
এছাড়া ৪৪৭.৭৮ মিলিয়ন ডলারের প্রথম কিস্তি ফেব্রুয়ারিতে দেয়া হবে। অবশিষ্ট পরিমাণ ৬৫৯.১৮ মিলিয়ন ডলার ছয়টি সমান কিস্তিতে দেয়া হবে।
সূত্র জানিয়েছে, ঋণের সুদের হার ম্যাচুরিটির সময় বাজারের হারের ওপর নির্ভর করবে। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় হিসাব করেছে যে এই হার প্রায় ২.২ শতাংশ হবে।
আইএমএফ এর আগে বলেছিল যে, রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে তার প্রতিনিধিদল এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বর্ধিত ক্রেডিট সুবিধা (ইসিএফ) এবং বর্ধিত তহবিল সুবিধা (ইএফএফ) এর অধীনে প্রায় ৩.২ বিলিয়ন ডলারের ৪২ মাসের ব্যবস্থা সহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিগুলিকে সমর্থন করার একটি কর্মসূচিতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই সুবিধা আরএসএফ এর অধীনে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে ঋণ দিতে আইএমএফ’র কোনো শর্ত নেই: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
আইএমএফের ‘রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফান্ড’ থেকে ঋণ নেয়ায় এশিয়ায় প্রথম বাংলাদেশ
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্খাকে সমর্থন দেবে আইএমএফ: ডিএমডি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের আকাঙ্খার প্রতি অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে।
আইএমএফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহ সোমবার (১৬ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক বৈঠকে এই আশ্বাস দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লেখক মো. নজরুল ইসলাম।
আইএমএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে চায়। আইএমএফ এই আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
সায়েহকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্ব রয়েছে। ‘আইএমএফ এই অংশীদারিত্বকে ধারণ করে। আমি এখানে এসেছি এই অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে।’
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অপরিমেয় প্রভাবের কারণে পুরো বিশ্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে।
এসব সমস্যা মোকাবিলায় আইএমএফ বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় সহায়তা করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর ফলে নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের অগ্রগতির ধারা শ্লথ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
শেখ হাসিনা আইএমএফ কর্মকর্তাকে বলেন, তার সরকার দারিদ্র্য বিমোচন ও খাদ্য নিরাপত্তাকে লক্ষ্য করে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পতিত জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক উন্নত দেশেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অগ্রিম ব্যবস্থা হিসেবে আইএমএফের কাছে সহায়তা চেয়েছে। ‘আমরা আইএমএফের কাছে সাহায্য চেয়েছি বেলআউট হিসেবে নয়, একটি পূর্ব-প্রস্তূতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে।’
আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত এক দশকে প্রায় ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।
এছাড়া বৈঠকে নারীর ক্ষমতায়ন, বালিকা শিক্ষা, কমিউনিটি ক্লিনিক ও আইসিটি নিয়ে আলোচনা হয়।
ঢাকায় বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, সিনিয়র অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি ছবি হস্তান্তর করেন। যেগুলো বাংলাদেশ যখন ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট এর সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আইএমএফ -এর আর্টিকেল অব এগ্রিমেন্টে সই করে তখন তোলা হয়েছিল।
৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের ঋণ অনুমোদন বিবেচনা করতে পারে
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী বোর্ড আগামী ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার এক প্রেস বিবৃতিতে আইএমএফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আন্তোয়েনেট এম. সায়েহ এ কথা জানিয়েছেন। আন্তোয়েনেট এম. সায়েহ ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে পাঁচদিনের সফরে রবিবার বাংলাদেশে এসেছেন।
তিনি বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।
আন্তোয়েনেট বলেন, ‘গত দশকে বাংলাদেশের আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। যা দারিদ্র্য নিরসনে ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং জীবনমানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিগুলো মুদ্রাস্ফীতিকে স্থিতিশীল রাখতে, ঋণ থেকে জিডিপি অনুপাত কম এবং বাহ্যিক বাফারগুলোকে পর্যাপ্ত রাখতে সাহায্য করেছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের আশা আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি আগামী মাসের মধ্যে আসবে: মুখপাত্র
সারা বিশ্বের দেশগুলোর মতোই বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক ধাক্কাগুলোর প্রভাব মোকাবিলা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই ধাক্কাগুলোর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং আমি এই কঠিন সময়ে দুর্বলদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর তাদের ফোকাসসহ এসব সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেয়া বিস্তৃত পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।’
কর্তৃপক্ষের স্বদেশি সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশ ও আইএমএফ সম্প্রতি বর্ধিত ক্রেডিট সুবিধা, বর্ধিত তহবিল সুবিধা এবং আইএমএফ এর নতুন স্থিতিস্থাপকতা ও টেকসই সুবিধা (আরএসএফ) এর অধীনে একটি স্টাফ-লেভেল চুক্তিতে পৌঁছেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের আলোচনায় আমরা কর রাজস্ব বাড়ানো এবং আরও দক্ষ আর্থিক খাত গড়ে তোলার দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জসহ এই প্রোগ্রামের মূল উপাদানগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছি।
আরও পড়ুন: ’মর্যাদা ক্ষুন্ন হলে বাংলাদেশকে আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়ার দরকার নেই: এফবিসিসিআই
বেসরকারি বিনিয়োগ এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের সুবিধার্থে পদক্ষেপের সঙ্গে এইসব ক্ষেত্রে সংস্কার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও স্থিতিস্থাপক করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করার শর্ত তৈরি করতে সাহায্য করবে।
এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করেছি। যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।’
আরও পড়ুন: নিরাপদ রিজার্ভ গড়ে তুলতে আইএমএফ এর ঋণ দরকার: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশ ব্যাংকের আশা আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি আগামী মাসের মধ্যে আসবে: মুখপাত্র
সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহ এর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং তাদের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণের অনুরোধ নিয়ে আলোচনা করেছে।
রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো.মেজবাউল হক সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সদর দপ্তরে গভর্নর আবদুর রউফ, ডেপুটি গভর্নর এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইএমএফের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেন।
তিনি বলেন, বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপসহ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আইএমএফ প্রতিনিধিদল কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আসছেন আইএমএফ’র ডিএমডি
বিবির মুখপাত্র বলেন, বৈঠকে ঋণ ও আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
মেজবাউল বলেন যে আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে কোন সমস্যা হবে না। আইএমএফ-এর ৩১ জানুয়ারির বোর্ড সভায় ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ মোকাবিলা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইএমএফের কাছে ঋণের অনুরোধ করেছে।
আইএমএফ প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে।
আলোচনায় জড়িত বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মতে, আইএমএফ বোর্ড চলতি মাসের শেষের দিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঋণের প্রথম কিস্তি ফেব্রুয়ারির শুরুতে পাওয়া যাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকার ঋণের অনুরোধের বিষয়ে আরও আলোচনা করতে শনিবার আইএমএফের প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে।
আরও পড়ুন: আইএমএফ’র ঋণ একটি চারিত্রিক সনদের মতো: প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে অসামান্য বলেছে আইএমএফ: অর্থমন্ত্রী
সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আসছেন আইএমএফ’র ডিএমডি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক(ডিএমডি) আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহ পাঁচ দিনের সফরে ঢাকা আসছেন ১৪ জানুয়ারি। এই সফরে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণের চুক্তি চূড়ান্ত করা হতে পারে।
মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সূত্র জানায়, সফরকালে আইএমএফের ডিএমডি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
আরও পড়ুন: ঋণ পেতে আইএমএফের শর্ত মেনে কাজ করছে সরকার
বাংলাদেশ গত জুলাই মাসে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আবেদন করার পর শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
গত অক্টোবরে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার ফাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে একটি দল আইএমএফের সঙ্গে দেখা করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে অসামান্য বলেছে আইএমএফ: অর্থমন্ত্রী
বৈঠক শেষে গভর্নর সাংবাদিকদের বলেন, আইএমএফ থেকে ঋণ পাবে বাংলাদেশ।
আএমএফ-এর একটি দল গতবছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় দুই সপ্তাহে একাধিক বৈঠক করেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বিএসইসি, এনবিআর ও বিইআরসির সর্বশেষ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জানতে রাহুল আনন্দের (বাংলাদেশের মিশন প্রধান) নেতৃত্বে আইএমএফ দল বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি বিভাগ, বিবিএস- এর সঙ্গে দেখা করেছে।
আরও পড়ুন: আইএমএফ’র ঋণ একটি চারিত্রিক সনদের মতো: প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ: কানাডার প্রকাশনা
কানাডাভিত্তিক অনলাইন প্রকাশনা ‘ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট’ অনুসারে, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এর আগে আইএমএফ প্রকাশ করেছিল যে বাংলাদেশ ও ভারত একমাত্র দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ, যা ৫০টি বৃহৎ অর্থনীতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
আইএমএফ পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট ২০২২ সালের ২৯শে ডিসেম্বর 'দ্য টপ হেভি গ্লোবাল ইকোনমি' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এটি মোট দেশীয় পণ্যের (জিডিপি) পরিপ্রেক্ষিতে দেশগুলোকে তালিকাভুক্ত করেছে।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে তার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিগত ১২/১৩ বছরে ৬ প্লাস জিডিপি প্রবৃদ্ধির কারণে।
ইউএনবি’র সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কানাডার প্রকাশনা বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীনও দেশের অব্যাহত প্রবৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৮২৪ ডলার
ড. আতিউর বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে ২৮তম বৃহত্তম এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এর অর্থনৈতিক পরিমাণ হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, দেশকে এখন দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, সুশাসন এবং স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়নে তার মোট বাজেটের প্রায় ১২ শতাংশ ব্যয় করেছে। যা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, র্যাপিড ম্যাস ট্রানজিট, কর্ণফুলী টানেল এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নসহ মেগা প্রকল্পে অবদান রেখেছে।’
ফলে শহর ও গ্রামাঞ্চলে একটি অর্থনৈতিক বুম ঘটছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশি দেশ ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে পঞ্চম স্থানে চলে গেছে। এর আগে এটি ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল।
২০২২ সালে ৩ দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন জিডিপি নিয়ে যুক্তরাজ্যকে ছাড়িয়ে পঞ্চম স্থান দখল করেছে ভারত।
তালিকার প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও জার্মানি। বিশ্বের ১০টি বৃহত্তম অর্থনীতির বাকি পাঁচটি দেশ হল- যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া ও ইতালি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বে দুটি বড় ঘটনা ঘটেছে।
প্রথমত, বিশ্বের জনসংখ্যা ৮ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বিশ্ব অর্থনীতির আকার ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১০১ দশমিক ৫৬ ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ প্রবাহ ২৪.৩৮% কমেছে: ইআরডি
এলএনজি আমদানি অব্যাহত থাকবে, আরও টার্মিনাল স্থাপন হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে অসামান্য বলেছে আইএমএফ: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল শনিবার বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে ‘খোলা মনে’ অসামান্য বলে স্বীকার করেছে।
শনিবার কামাল রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় ভ্যাট দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু রহমাতুল মুনীম।
কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের সাফল্য সরকারের একমাত্র অর্জন নয়। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে এদেশের জনগণের সম্পৃক্ততায়, তাই করদাতাদের কাছে আমরা ঋণী।’
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে বিশ্ব নেতাদের প্রতি অর্থমন্ত্রীর আহ্বান
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিমউদ্দিন অভিযোগ করেন, গত বছর এক ব্যবসায়ী ভ্যাট হিসেবে এক কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। এ বছর তাকে এক কোটি টাকা ভ্যাট দিতে হবে- এমন চাপ দিচ্ছেন ভ্যাট কর্মকর্তারা।
এ বছর ব্যবসা খারাপ হলে ব্যবসায়ীকে কেন এক কোটি টাকা ভ্যাট দিতে হবে? যারা নিয়মিত ভ্যাট দেন তাদের হয়রানি না করতে এবং আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি না করার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনবিআর সদস্য, কর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা।
আরও পড়ুন: জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম ঋণ থাকা দেশের মধ্যে অন্যতম: এডিবিকে অর্থমন্ত্রী
বৈদেশিক মুদ্রার হার বাজারভিত্তিক করা হবে: অর্থমন্ত্রী
বছরে দুবার মুদ্রানীতি: বিবি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী বছরে দুইবার মুদ্রানীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)।
সোমবার অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে আগামী জানুয়ারিতে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন শুরু হবে বলে মঙ্গলবার ইউএনবিকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
‘আমরা দেশের অর্থনীতিবিদসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অর্থ সরবরাহ, রিজার্ভ কারেন্সি এবং সুদের হারসহ সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা হয়েছে,’ তিনি যোগ করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাসহ ১০ ভাষায় রেডিও সম্প্রচার বন্ধ করছে বিবিসি
হাবিবুর রহমান বলেন, অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে দুইবার মুদ্রানীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে বছরে দুবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে, সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বছরে একবার মুদ্রানীতি প্রণয়নের ঘোষণা দেন।
সে অনুযায়ী তিনি ওই বছরের ৩১ জুলাই ২০১৯-২০ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী অর্থবছর ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২-এ শুধুমাত্র একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে।
সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে বছরে চারবার মুদ্রানীতি ঘোষণার সুপারিশ করেছে।
কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। আর পরিসংখ্যান ব্যুরো বছরে দুবার এই তথ্য প্রকাশ করে। ফলে বছরে দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানুয়ারিতে আর্থিক বছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন: মানি চেঞ্জাররা নগদ ২৫ হাজার ডলারের বেশি রাখতে পারবে না: বিবি
ব্যাংকগুলোকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এসিইউ লেনদেন বন্ধের নির্দেশ বিবি’র
ঋণ পেতে আইএমএফের শর্ত মেনে কাজ করছে সরকার
আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা পেতে সংস্থাটির দেয়া শর্ত মেনে কাজ করছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক ঋণদাতার বোর্ড সভার আগে আর্থিক ও জ্বালানি খাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্তৃক নির্ধারিত কিছু শর্ত বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার।
এর অংশ হিসেবে ঋণের সুদের সীমা শিগগিরই প্রত্যাহার করা হবে এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ শতাংশ কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে। যা বর্তমান গড় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রয়েছে।
রবিবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইউএনবিকে এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন: জিডিপি প্রতিবেদন প্রতি ৩ মাসে হালনাগাদ করার পরামর্শ আইএমএফের
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি এবং অন্যান্য সূত্র এসব কথা বলেছেন, কারণ গণমাধ্যমের সঙ্গে তাদের কথা বলার অনুমতি নেই।
সরকার রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল এবং শ্রীলঙ্কার ঋণ বাদ দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব সংশোধন করেছে। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) গভর্নর বলেছেন যে মোট রিজার্ভ এখন ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সূত্র জানায়, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি আইএমএফের অন্যতম শর্ত। তাই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সম্প্রতি বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছে। এটি বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ভোক্তা পর্যায়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করেছে।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের ঋণ অনুমোদনের কথা রয়েছে।
এর আগে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি দল চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর ঢাকা সফর করেছেন।
দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ(এনবিআর), বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি), বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং আরও কিছু সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে।
ফলে ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। বিশদভাবে বলতে গেলে, আইএমএফের দাবির মধ্যে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যার মধ্যে খেলাপি ঋণ হ্রাস করা, সরকারি ভর্তুকি ব্যয় হ্রাস এবং রাজস্ব খাতের সংস্কার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ প্রসঙ্গে ইউএনবিকে বলেন, ‘আইএমএফের শর্ত মেনে নেয়া উচিত। এগুলোর সঙ্গে কারো দ্বিমত করা ঠিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘এবারের শর্তগুলো খুবই নমনীয়। আমরা যদি এগুলো মেনে নিতে না পারি, তাহলে বুঝতে হবে আমরা সমস্যার সমাধান করতে চাই না।’
আরও পড়ুন: আইএমএফ’র সঙ্গে বাংলাদেশের সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রাথমিক ঋণচুক্তি
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিলো আইএমএফ
আইএমএফের লোন নিলে আরও ভারী হবে ঋণের বোঝা: বিএনপি
বিএনপি অভিযোগ করেছে যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার লোন জনগণের ঋণের বোঝাকে ভারী করে তুলবে। কারণ সরকার 'ব্যাপক লুটপাটের' মাধ্যমে জাতীয় কোষাগার খালি করেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আপনি আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছেন এটা ভালো কথা, কিন্তু কীভাবে শোধ করবেন? আপনি ইতোমধ্যেই রিজার্ভ শেষ করে ফেলেছেন এবং আপনি সমস্ত অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। আপনি কীভাবে এবং কোন খাতে অর্থ ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করছেন না। সুতরাং, আপনি জনগণের ওপর আরেকটি ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারেক ও জুবাইদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা: মির্জা ফখরুল
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি আরও বলেন, সরকারের আইএমএফের ঋণ দরকার। কারণ এরই মধ্যে তারা চুরি করে সরকারি কোষাগার খালি করেছে।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ‘বেসামরিক-সামরিক অভ্যুত্থান’ স্মরণে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদেও এ সমাবেশ করা হয়।
এর আগে বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিশ্চিত করেছেন যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাবে এই আশার মধ্যে যে ঋণদাতা সংস্থাটি আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় দেবে।
ফখরুল বলেন, করোনাভাইরাস যখন দেশে আঘাত হানে তখন তাদের দল সরকারকে মেগাপ্রকল্প বন্ধ করার পরামর্শ দেয়। যাতে বরাদ্দকৃত অর্থ দরিদ্র মানুষের সুরক্ষায় ব্যবহার করা যায়। ‘কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করেনি। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।’
তিনি বলেন, একজন বাংলাদেশি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরের ধনকুবেরদের একজন হয়ে উঠেছেন, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের নামে কত টাকা পাচার হয়েছে তা প্রকাশ করেছেন।
বিএনপি নেতা বলেন, হুন্ডি ব্যবসা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নানাভাবে বিদেশে অর্থ পাচারের কৌশলের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। ‘আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য দুর্নীতি, চুরি এবং দেশের সম্পদ খালি করা।’
তিনি বলেন, এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক সাধারণ নেতা এখন রাজধানীতে বহুতল অ্যাপার্টমেন্টের মালিক এবং বিলাসবহুল যানবাহন ব্যবহার করেন।
ফখরুল বলেন, বিএনপি জনগণের ভোট ও অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধার এবং দেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আন্দোলনে নেমেছে।
আরও পড়ুন: জনগণ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের বর্তমান আন্দোলনে ইতোমধ্যেই পাঁচজন বিরোধীদলীয় নেতা নিহত হয়েছেন। তাদের ত্যাগ ও রক্ত বৃথা যাবে না। ‘বাংলাদেশের জনগণ জেগে ওঠার কারণে দমনমূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে তাদের দমন করা সম্ভব হবে না।’
তিনি একটি নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ তৈরি করতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপির আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে মোড় নিতে নানা কৌশল করছে।
আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে এতটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এখন মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিচ্ছে।
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাকে তাদের দমনের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক মামলাও করেছে।
সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, নরসিংদীতে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতাকে অপরিশোধিত বোমা ও গানপাউডারসহ গ্রেপ্তার করা হলেও নরসিংদী যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এটা প্রমাণ করেছে যে তারা কতটা ভীত এবং তারা এই ধরনের কাজ করতে পারে।
তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য সরকারের নিন্দা জানান।
ফখরুল অভিযোগ করেন, ঢাকা মহানগরীতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করা শুরু করেছে সরকার। পুরনো মামলায় বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। ‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বিরোধীদের দমন করার এটা একটা পুরনো খেলা এবং তারা ১৪ বছর ধরে এই খেলা খেলছে।’
আরও পড়ুন: জামায়াতের সাথে বিএনপির রাজনীতির আদর্শিক মিল নেই; ভারত বিশেষ বন্ধু: ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল