সিরিয়া
নতুন চুক্তি, সিরিয়াকে অস্ত্র সহায়তা দেবে তুরস্ক
সিরিয়ার সঙ্গে নতুন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে তুরস্ক। এই চুক্তির আওতায় দেশটিকে অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম ও লজিস্টিক সহায়তা দেবে আঙ্কারা।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এ তথ্য জানান তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এর আগে, সামরিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসের গুলের এবং সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুরহাফ আবু কাসরা। এর পরপরই এই সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
গত মাসে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সেই সুযোগে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের পর নিজ দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তুরস্কের সহায়তা চেয়েছিল সিরিয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তুরস্কের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, চুক্তির আওতায় সিরিয়ার সঙ্গে নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগ করবে আঙ্কারা। সেই সঙ্গে সিরিয়ার সক্ষমতা জোরদারে সামরিক সরঞ্জাম, অস্ত্র ব্যবস্থা ও লজিস্টিক উপকরণ সরবরাহ করে সহায়তা করবে তুরস্ক।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও দক্ষিণ সিরিয়ায় সংঘাতে সহস্রাধিক প্রাণহানি
গত ডিসেম্বরে আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সরকার গঠিত হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলা দেশটি পরিচালনা করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করে সরকার।
সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণ প্রদেশের সোয়েইদাতে একদিকে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বেদুইন জাতিগোষ্ঠীর সংঘর্ষ, অন্যদিকে দ্রুজ সংখ্যালঘুর যোদ্ধাদের সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হন।
শুরু থেকে সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে সমর্থন করে আসছিল তুরস্ক। এমনকি বুধবার (১৩ আগস্ট) সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট না করতে ইসরায়েল ও কুর্দি যোদ্ধাদের সতর্ক করেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। পাশাপাশি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটি পুনর্প্রতিষ্ঠা করতে তুরস্কের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আঙ্কারায় সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফিদান আরও বলেন, মার্চে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা থাকলেও মার্কিন মিত্র ও কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) সেই চুক্তির বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা করছে।
এদিকে, এসডিএফের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর হাসাকেতে একটি সম্মেলন আয়োজন করেন সিরিয়ার বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। সেখানে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নৃগোষ্ঠীগত বহুমতকে নিশ্চিত করে একটি বিকেন্দ্রীভূত দেশ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ণের আহ্বান জানানো হয়।
তবে এই সম্মেলনের নিন্দা জানিয়েছে দামেস্ক। এমনকি বহুদিন ধরে নির্ধারিত থাকা সত্ত্বেও জুলাইয়ের শেষের দিকে এসডিএফের সঙ্গে প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকও বাতিল করে সিরিয়া সরকার।
১১১ দিন আগে
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও দক্ষিণ সিরিয়ায় সংঘাতে সহস্রাধিক প্রাণহানি
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও দক্ষিণ সিরিয়ার সুয়েইদা অঞ্চলে সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়, বেদুইন গোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতে হাজারের অধিক প্রাণহানি হয়েছে। রবিবার (২০ জুলাই) যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের (এসওএইচআর) বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এই তথ্য জানিয়েছে।
যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি জানিয়েছে, গত রবিবার (১৩ জুলাই) থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে ৩৩৬ জন দ্রুজ যোদ্ধা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টির ২৯৮ জন বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ১৯৪ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে দেশটির প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে এসওএইচআর।
এ ছাড়া, সংস্থাটির তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে ৩৪২ জন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ৩ জন বেসামরিক নাগরিকসহ ২১ জন সুন্নি রয়েছেন। ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ১৫ জন সরকারি বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে এসওএইচআর।
পড়ুন: ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নির্বিচারে গুলি, ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ১৩ জুলাই দক্ষিণ সিরিয়ায় দ্রুজ সম্প্রদায়ের একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ নিয়ে সিরিয়ায় নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়। অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে দ্রুজ মিলিশিয়া এবং সুন্নি বেদুইন যোদ্ধারা মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একই দিন, সংঘাত থামাতে এসে উল্টো দ্রুজদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সিরীয় বাহিনী।
এরপর, বুধবার (১৬ জুলাই) দ্রুজদের ওপর ব্যাপকহারে সহিংসতার অভিযোগ তুলে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের কাছে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এরপর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দিয়ে সুয়েইদা ত্যাগ করেন সিরীয় সেনারা।
পরে, সিরিয়ার সরকার জানায়, শান্তি বজায় রাখতে দক্ষিণাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে এবং লড়াই বন্ধ রাখার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
তবে, বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পরদিন শুক্রবার (১৮ জুলাই) নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ বিষয়ে, গতকাল শনিবার (১৯ জুলাই) সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা জানান, দ্রুজ-অধ্যুষিত সুয়েইদা শহর থেকে বেদুইন যোদ্ধাদের সরানো হয়েছে এবং সেখানে সংঘর্ষ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বেদুইন এবং দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দেওয়ার পর এই ঘোষণা আসে।
এমন পরিস্থিতিতেও সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও প্রাণহানি চলমান রয়েছে।
১৩৭ দিন আগে
সিরিয়ায় গির্জায় আত্মঘাতীর হামলায় নিহত ২২
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের একটি গ্রিক অর্থোডক্স গির্জায় ঢুকে প্রার্থনাকারীদের ওপর গুলি চালান এক বন্দুকধারী। পরে তার নিজের শরীরে বাঁধা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হন। এ ঘটনায় অন্তত ২২ জন নিহত এবং ৬৩ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় রবিবার (২২ জুন) দামেস্কের মার এলিয়াস গির্জায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া, রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার এক প্রতিবেদনে হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়েছে।
এদিকে, ব্রিটেনভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও অনেক আহত হয়েছেন। তবে আহতদের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা জানায়নি তারা।
কিছু স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, হতাহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
বহু বছর পর সিরিয়ায় গির্জায় এই ধরনের হামলা হলো। এমন এক সময়ে এ হামলা ঘটনা হলো যখন দেশটি ইসলামপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তারা সেখানকার সংখ্যালঘুদের সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় ১২ সেনাসদস্য নিহত
এই প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে আবারও উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কোনো গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নূরুদ্দিন আল-বাবা এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলার পেছনে উগ্রবাদী ইসলামিক স্টেট (আইএস) জড়িত থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এক বন্দুকধারী গির্জায় ঢুকে প্রার্থনারতদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং পরে শরীরের বাঁধা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেই নিজেকে উড়িয়ে দেন।’
এই মুখপাত্রের দাবি, উপাসনালয়গুলোর নিরাপত্তা তাদের জন্য একটি রেড লাইন। তবে আইএস ও উৎখাত হওয়া আসাদ সরকারের অবশিষ্ট সদস্যরা সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।
সিরিয়ার তথ্যমন্ত্রী হামজা মোস্তাফা এটিকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘এই কাপুরুষোচিত কাজ আমাদের নাগরিক মূল্যবোধের পরিপন্থী, যা আমাদের একসূত্রে বেঁধে রাখে। আমরা সমান নাগরিকত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং রাষ্ট্র সব অপরাধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করে সমাজের রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুখ ঢাকা এক বন্দুকধারী গির্জায় ঢুকে গুলি চালান। তখন উপস্থিত জনতা তাকে থামাতে ধাক্কা দিলে তিনি গির্জার প্রবেশপথে বিস্ফোরণ ঘটান।
ঘটনার পর ওই দিন সন্ধ্যায় সিরিয়ার সমাজকল্যাণ ও শ্রমমন্ত্রী হিন্দ কাবাওয়াত গির্জায় গিয়ে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে শোক প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: সোমালিয়ার রাজধানীতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত ৭
গির্জার ফাদার ফাদি ঘাট্টাস বলেন, ‘সবাই তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিল। আমি নিজ চোখে অন্তত ২০ জনের লাশ দেখেছি। গির্জায় তখন ৩৫০ জন প্রার্থনারত ছিল।’
তবে আরেক যাজক, মেলেটিয়াস শাহাতি বলেন, ‘হামলাকারী একজন ছিলেন না, দ্বিতীয় আরেক বন্দুকধারীও গির্জার দরজার দিকে গুলি ছুঁড়েছিলেন, এরপর প্রথম হামলাকারী বিস্ফোরণ ঘটান।’
ঘটনার পর হতাহতদের সহায়তায় সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও উদ্ধারকারী দল দ্রুত গির্জায় ছুটে যায়।
১৬৫ দিন আগে
সংকট নিরসনে পরোক্ষ আলোচনায় সিরিয়া-ইসরায়েল; মধ্যস্থতায় আরব আমিরাত
সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যকার দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় এ বিষয়ে দুদেশের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা।
বুধবার (৭ মে) প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
আল-শারা বলেন, ‘সিরিয়া ও ইসরায়েল এখন মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় পরোক্ষভাবে আলোচনা করছে। এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো উভয় দেশের মধ্যকার পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা, যাতে করে এটি আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না সিরিয়া আবারও সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হোক। আমাদের লক্ষ্য হলো, দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।’
এ সময় সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইসরায়েলের অযাচিত হস্তক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তারা ১৯৭৪ সালের অস্ত্রবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করছে। আমরা দামেস্কের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জানিয়েছি যে, সিরিয়া ১৯৭৪ সালের চুক্তির শর্ত রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আরও পড়ুন: সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলছে ইসরায়েল: এরদোগান
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে, এমনকি প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের কাছেও বিমান হামলা চালিয়েছে। আল-শারার অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার অজুহাত দেখিয়ে গত এক সপ্তাহেই ইসরায়েল সিরিয়ায় ২০ বারের বেশি বোমাবর্ষণ করেছে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের দাবি, সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দ্রুজ মিলিশিয়াদের সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে বসবাসরত দ্রুজ সংখ্যালঘুদের রক্ষায় এসব হামলা চালাচ্ছে তারা।
চলতি বছরের মার্চ মাসে সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত আলাউই অধ্যুষিত অঞ্চলে গণহত্যার ঘটনার পর দ্রুজ এলাকায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপরই এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে ইসরায়েল।
গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় শতাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তারা বলছে, সিরিয়ার নতুন শাসকদের তারা জিহাদপন্থি মনে করে এবং তাদের হাতে উন্নত অস্ত্র পৌঁছানো ঠেকাতেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনারা গোলান মালভূমির ১৯৭৪ সালের অস্ত্রবিরতির সীমারেখা অতিক্রম করে মালভূমির জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত নিরপেক্ষ অঞ্চলেও প্রবেশ করেছে এবং দক্ষিণ সিরিয়ায় আরও গভীরে অভিযান চালিয়েছে।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীসহ জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক বাহিনীকেও নিরপেক্ষ অঞ্চল ছেড়ে ব্লু-লাইন বা বিচ্ছিন্ন রেখায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আল-শারা।
এদিকে, সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেন, ‘এসব হামলা দীর্ঘমেয়াদে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না। বোমাবর্ষণ ও আগ্রাসন বাজে একটি দৃষ্টান্ত। প্রতিবেশীর ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে কোনো দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না।’
উল্লেখ্য, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটসের হুমকির পর গত শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল দামেস্কের প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের কাছে হামলা চালায়। সে সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, সিরিয়ার নতুন শাসকরা যদি দ্রুজ সম্প্রদায়ের জনগণকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ইসরায়েল এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এ হামলাকে সিরিয়ার নতুন শাসকদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা হিসেবে উল্লেখ করেন।
২১০ দিন আগে
সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলছে ইসরায়েল: এরদোগান
সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর ইসরায়েল দেশটিকে আবারও অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে অভিযোগ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। স্থানীয় সময় রবিবার (১২ এপ্রিল) তুরস্কে চলমান আন্টালিয়া কূটনীতি ফোরামে (এডিএফ) অংশগ্রহণ করে এই মন্তব্য করেন তিনি।
ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাত্র দুদিন পরেই এমন বক্তব্য বিস্মিত করেছে অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষককে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।
মূলত, এই দুটি দেশেরই সামরিক বাহিনী সিরিয়াতে সক্রিয় রয়েছে। ফলে সেখানে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে গত বুধবার (৯ এপ্রিল) আজারবাইজানে বৈঠক করেন তুরস্ক ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
তবে বৈঠকের পরও সিরিয়ায় শান্তি নষ্ট করায় ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন: তুরস্কে ধরপাকড় উপেক্ষা করে এরদোগানবিরোধী বিক্ষোভ চলছে
আন্টালিয়া সম্মেলনে বিশ্ব নেতা ও কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে এরদোগান জানান, ‘সিরিয়ায় নতুন করে কোনো সংঘাত তারা চান না। যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাসার-আল-আসাদ সরকারের পতন হয়েছে, তা ইসরায়েলের কারণে ব্যর্থ হচ্ছে।’
আসাদের পতনের পর সিরিয়ার গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এরদোগান।
সিরিয়ার ভৌগলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। সিরিয়ার ওপর চলমান বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আঙ্কারার চেষ্টার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আহমেদ আল সারা। সিরিয়ায় নতুন করে কাউকে সংঘাত সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না বলে সারাকে আশ্বস্ত করেন এরদোগান। সম্মেলনের ফাঁকে একটি বৈঠকও করেন তারা।
গত ৮ ডিসেম্বর আল সারার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আলশামস (এইচটিএস) দামেস্ক দখল মাধ্যমে আসাদ সরকারের পতন ঘটায়। এরপর সিরিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তুরস্ক।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভের তৃতীয় দিনে তুরস্কে গ্রেপ্তার ৩৪৩ জন
দামেস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়ে একটি চুক্তিও করতে চাইছে আঙ্কারা, এর মাধ্যমে সিরিয়াতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনসহ দেশটির আকাশসীমা ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে তুরস্কের।
অন্যদিকে আাসদের পতনের পরই সিরিয়ায় সামরিক তৎপরতা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এ কারণে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এ মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ায় তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
আবার হামা প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দর ও হোমসের টি-৪ ও পালমিরা বন্দর পরিদর্শন করেছেন তুরস্কের সেনা কর্মকর্তারা। যেখানে তারা দামেস্কের সঙ্গে একটি যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে নিজেদের সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারে। এ নিয়ে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যকারে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের আরন লুন্ড বলেছেন, ‘সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয়ার্ধে আসাদের অন্যতম রক্ষাকর্তা ছিল রাশিয়া। এখন আসাদের পতনের পর যদি সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারে তুরস্ক, তাহলে এই অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম অনেকটাই সীমিত হয়ে পড়বে।‘
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের সামরিক অভিযানই শুধু আঙ্কারার জন্য সমস্যা নয়, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে তেল আবিবের নানা বাধা নিয়েও চিন্তিত তারা। যেমন, দেশটির দক্ষিণে আল সারার সরকার কোনো সেনা মোতায়ন করতে পারবে না বলে জানিয়েছে তেল আবিব।’
আরও পড়ুন: তুরস্কের ইস্তানবুলের মেয়র গ্রেপ্তার
এরইমধ্যে সিরিয়ার দক্ষিণের দারাহ শহরে অনুপ্রবেশ শুরু করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। চলমান উত্তেজনার মধ্যে দেশ দুটির মধ্যকার বৈঠককে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আরন।
তিনি বলেন, সিরিয়ায় এই দুটি দেশই নিজেদের সামরিক তৎপরতা বহাল রাখবে। তবে তাদের মধ্যে যদি একটি যোগাযোগ চ্যানেল স্থাপিত হয় সেটি সব পক্ষের জন্য ভালো হবে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
বুধবারের বৈঠকের পর তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, ইসরাইলের সাথে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। দুই আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি রোধ করার জন্য এবং সংঘাত বন্ধ করতে আলোচনা অত্যন্ত প্রয়োজন।
এদিকে বৈঠকের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সংলাপ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে তুরস্ক ও ইসরায়েল।
২৩৫ দিন আগে
সিরিয়ায় প্রতিশোধমূলক হামলায় নিহত ১ হাজার ছাড়াল
সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের অনুগতদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডে এক হাজারেরও বেশি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার (৯ মার্চ) যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী একটি গোষ্ঠী এমন তথ্য দিয়েছে।
মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবর অনুসারে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির ১৪ বছরে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা এটি।
ব্রিটিশভিত্তিক সিরীয় অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ৭৪৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৫ সদস্য ও আসাদসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠীর ১৪৮ জন নিহত হয়েছেন। খুব কাছ থেকে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
এছাড়া লাতাকিয়া শহরের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ও খাবার পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই সংঘাতের শুরু হয়েছে। দামেস্কো সরকারের জন্য যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে মাসতিনেক আগে সিরিয়ার কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছে তারা।
সরকার জানিয়েছে, আসাদ বাহিনীর অবশিষ্টাংশের হামলার জবাব দিচ্ছে তারা। আর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার জন্য ব্যক্তিগত হামলার ঘটনাকে দায়ী করা হয়েছে।
আলবীয়দের ওপর প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড
আলবীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সরকার-অনুগত সুন্নি মুসলমানরা শুক্রবার প্রথম এই প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে, যা আসাদ সরকারকে ক্ষমতচ্যুত করতে নেতৃত্ব দেওয়া হায়াত তাহরির আল-শামের জন্য বড় ধাক্কা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এপি জানিয়েছে, বাড়ির সামনের ফটক ও সড়কে আলবীয়দের গুলি করে হত্যা করেছে বন্দুকধারীরা। নিহতদের বেশিরভাগই পুরুষ। বিভিন্ন গ্রামে তাদের অনেক বাড়িঘর লুট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য কয়েক হাজার আলবীয় বাসিন্দা পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে উপকূলীয় শহর বানিয়াস। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, বাড়ির ভেতরে, ঘরের ছাদেও পড়ে আছে মরদেহ। কবর দেওয়ার মতো সেখানে কেউ নেই।’
আরও পড়ুন: সিরিয়ায় এক সপ্তাহে নিহত অন্তত ৩৭০: জাতিসংঘ
একজন বাসিন্দা বলেন, ‘শুক্রবার খুবই কাছ থেকে পাঁচজনকে হত্যা করা হলেও তাদের মরদেহ কবর দিতে দেয়নি বন্দুকধারীরা।’
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর পরিবার নিয়ে পালিয়ে যাওয়া বানিয়াসের ৫৭ বছর বয়সী বাসিন্দা আলী শেহা বলেন, ‘তাদের গ্রামে অন্তত ২০ প্রতিবেশী ও সহকর্মীকে বাড়ি কিংবা দোকানে হত্যা করা হয়েছে।’
আসাদ সরকারের অপরাধের দায়ে প্রতিশোধমূলকভাবে এসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বাসিন্দারা বলছেন, ‘আশপাশের শহর ও গ্রাম থেকে আসা বিদেশি যোদ্ধা ও জঙ্গিরা রয়েছেন বন্দুকধারীদের মধ্যে।’
আলী শেহা বলেন, ‘এটা খুবই খারাপ। রাস্তায় পড়ে আছে মরদেহ।’
পালিয়ে যাওয়ার সময় ফোনে এপিকে এসব কথা বলছিলেন তিনি। তখন শহর থেকে তিনি ২০ কিলোমিটার দূরে। এই আলবীয় বলেন, ‘তার অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ১০০ মিটারের কম দূরত্বে বন্দুকধারীরা জড়ো হচ্ছিল। বাড়িঘর ও বাসিন্দাদের ওপর তারা এলাপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে।’
তার নিজের জানা একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘হত্যার আগে ধর্ম নিশ্চিত হতে বাসিন্দাদের পরিচয়পত্র দেখেন বন্দুকধারীরা। কিছু বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, লুটতরাজ করেছে ও গাড়ি চুরি করে নিয়ে গেছে তারা।’
সিরীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, আসাদ অনুগতদের কাছ থেকে অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সরকারি বাহিনী। সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে উপকূলীয় শহরটির সব সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাসিন্দারা বলছেন, একদিন আগে নিহত ৩১ জনের মরদেহ শনিবার সকালে গণকবর দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯টি শিশু ও চার নারী রয়েছেন।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাইবার হামলা বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র
গেল কয়েক দশক ধরে আসাদের সমর্থকদের বড় একটি অংশ ছিল আলবীয়রা। শিয়া মুসলমানদের একটি শাখা হচ্ছেন তারা। আসাদ সরকারের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ পদে ছিলেন দেশটির এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর লোকজন।
নতুন সরকার দাবি করছে, তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে আসাদ অনুগতরাই এই হামলা চালিয়ে আসছে।
২৭১ দিন আগে
তুরস্কে ফের ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প, নিহত ১
দক্ষিণ তুরস্কে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) একটি ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এএফএডি জানিয়েছে, ভূমিকম্পে কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছে।
স্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তিন সপ্তাহ আগের বিপর্যযের পর ফের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে বেশ কিছু ভবন ধসে পড়েছে।
এএফএডি প্রধান ইউনুস সেজার সাংবাদিকদের বলেছেন, মালতয়া প্রদেশের ইয়েসিলিউর্ট শহরে ভূমিকম্পের ফলে আরও ৬৯ জন আহত হয়েছেন। এতে কমপক্ষে দুই ডজনের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
ইয়েসিলিউর্টের মেয়র মেহমেত সিনার হ্যাবারতুর্ক টেলিভিশনকে বলেছেন যে শহরের একটি চারতলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে একজন বাবা ও মেয়ে আটকা পড়েছেন। ওই দম্পতি মালামাল সংগ্রহ করতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে প্রবেশ করেছিল।
এএফএডি প্রধান লোকদের ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিংগুলিতে প্রবেশ না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে শক্তিশালী আফটারশকগুলো একটি ঝুঁকি তৈরি করছে।
আরও পড়ুন: তুরস্কে নতুন করে ভূমিকম্পে নিহত ৩, আহত ২ শতাধিক
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, সোমবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মালতয়া প্রদেশের ইয়েসিলিউর্ট শহরে।
ইয়েসিলিউর্টের মেয়র মেহমেত সিনার হ্যাবারতুর্ক টেলিভিশনকে বলেছেন যে শহরের কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে।
মালতয়া ছিল তুর্কি প্রদেশের ১১টি প্রদেশের মধ্যে একটি, যেগুলো গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এই ভূমিকম্পের ফলে তুরস্ক ও সিরিয়ার ৪৮ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি তুরস্কের এক লাখ ৭৩ হাজারেরও বেশি ভবন ধসে পড়েছে বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এএফএডি জানিয়েছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় ১০ হাজারটি আফটারশক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এ অঞ্চলে আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন: তুরস্কে ভূমিকম্পের ২৯৬ ঘণ্টা পর দম্পতি জীবিত উদ্ধার, মারা গেছে তাদের সন্তান
তুরস্কে ভূমিকম্প: ঘানার ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ান আতসুর মরদেহ উদ্ধার
১০১১ দিন আগে
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প পরবর্তী প্রধান অগ্রগতি
৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্প তুরস্ক এবং সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ধ্বংসাবশেষ থেকে জীবিত লোকদের খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমাগত সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল। এমতাবস্থায়ও অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকারী দলগুলো বেঁচে থাকা আরও অনেক মানুষকে উদ্ধার করেছে৷
ভূমিকম্পের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত মৌলিক অগ্রগতির দিকে নজর দেয়া হয়েছে এখানে।
হাতায় তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে
উদ্ধার অভিযানের ১৩তম দিনে হাতায় প্রদেশের রাজধানী আন্তাকিয়ার একটি বহুতল ভবনের নিচ থেকে একটি শিশুসহ তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয় একটি টেলিভিশন জানিয়েছে, শহরের কেন্দ্রস্থলে কানাটলি বহুতল ভবনের ধ্বংসস্তুপের নীচে ২৯৬ ঘন্টা চাপা থাকার পর নারী, পুরুষ এবং শিশুকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ফুটেজে দেখা গেছে স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা অবস্থায় তার হাতে একটি আইভি পুশ করেছেন চিকিৎসকরা।
তুরস্কের দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলের ১১টি প্রদেশের মধ্যে হাতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তুরস্কের নিহতের সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৬৭২ জন যা উভয় দেশে রেকর্ডকৃত মৃত্যুর সংখ্যা ৪৩ হাজার ৩৬০ পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়াল, তুরস্কে ঠিকাদার আটক
নিখোঁজ ঘানার তারকা খেলোয়াড়ের লাশ পাওয়া গেছে
অনুসন্ধান দলগুলো তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সময় ধসে পড়া একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষে ঘানার আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ান আতসুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছেন তার ম্যানেজার মুরাত উজুনমেহমেত।
তুর্কি সুপার লিগ ক্লাব হাতায়স্পোরের হয়ে খেলা ফুটবল তারকার দেহাবশেষ পাওয়া গেছে বিলাসবহুল একটি ১২তলা ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে। তিনি হাতাই প্রদেশের আন্তাকিয়া শহরে সেসময় অবস্থান করছিলেন।
ম্যানেজার মুরাত বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ডিএইচএকে বলেছেন, ‘আতসুর প্রাণহীন দেহটি ধ্বংসস্তূপের নিচে পাওয়া গেছে। এই মুহুর্তে, তার জিনিসপত্র সরানো হচ্ছে।’
৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ায় সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা শুক্রবার পর্যন্ত ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে। অনুসন্ধান দলগুলো আরও লাশ খুঁজে পাওয়ায় এই সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই বাড়বে।
৩১ বছর বয়সী আতসু আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসি, নিউক্যাসল ইউনাইটেড, এভারটন এবং বোর্নেমাউথের হয়ে খেলেছিলেন। গত বছরের শেষের দিকে সৌদি দল থেকে হাতাসপোরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন তিনি।
আরও পড়ুন: তুরস্কে ভূমিকম্পের ৮ দিন পর আরও জীবিত মানুষ উদ্ধার
হাতাসপোর ক্লাবটি টুইট করে বলেছে, আতসুর লাশ ঘানায় পাঠানো হচ্ছে।‘দুঃখ প্রকাশের কোনো ভাষা নেই আমাদের।’
ভূমিকম্প আঘাত হানার একদিন পরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে আতসুকে একটি ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত টেনে এনে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ক্লাব অবশ্য কয়েকদিন পরে ঘোষণা করেছিল যে আতসু এবং ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক তানের সাভুত এখনও নিখোঁজ। সাভুতকে অবশ্য এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পের সময় আতসু এবং সাভুত যেই বিলাসবহুল ১২ তলা রোনেসান রেজিডান্স ভবনে ছিলেন। সেই ভবনের ঠিকাদারকে এক সপ্তাহ আগে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে। তিনি মূলত দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
আরও পড়ুন: তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আহ্বান জাতিসংঘের
১০২০ দিন আগে
তুরস্কে ভূমিকম্পের ৮ দিন পর আরও জীবিত মানুষ উদ্ধার
গত সপ্তাহে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা মানুষদের উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
মঙ্গলবার অলৌকিকভাবে জীবিত আরও একজনের সন্ধান পায় উদ্ধারকর্মীরা।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ায় সাত দশমিক আট এবং সাত দশমিক পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্পে ইতোমধ্যে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার পেরিয়ে গেছে। এবং উদ্ধারকর্মীদের চলমান অনুসন্ধান কার্যক্রমে আরও লাশ খুঁজে পাওয়ায় সংখ্যাটি নিশ্চিতভাবেই বৃদ্ধি পাবে।
তুর্কি টেলিভিশন মঙ্গলবারও উদ্ধারকাজ সম্প্রচার অব্যাহত রেখেছে। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন জীবিতদের খোঁজার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আদিয়ামান প্রদেশে ১৮ বছর বয়সী মুহাম্মাদ ক্যাফার সেটিনের কাছে উদ্ধারকারীরা পৌঁছেছিল। একটি বিপজ্জনক ভবন থেকে উদ্ধার চেষ্টা করার আগে চিকিৎসকরা তাকে আইভি দিয়ে তরল খাবার দিয়েছিলেন। উদ্ধারকারীরা কাজ করার সময় ভবনটি আরও ভেঙে পড়েছিল।
তার চাচা বললেন, ‘আমরা খুব খুশি,’ চিকিৎসকরা তাকে একটি স্ট্রেচারে অক্সিজেন মাস্কসহ ঘাড়ের বন্ধনী বেঁধে রেখেছিলেন এবং ১৯৯ ঘন্টা পর তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন; ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়াল, তুরস্কে ঠিকাদার আটক
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে কেন্দ্রীয় কাহরামানমারাসে ধ্বংস হওয়া একটি ভবন থেকে প্রায় ১৯৮ ঘন্টা পরে মঙ্গলবার অন্য দু'জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
হাবের্তুর্ক টেলিভিশন জানিয়েছে, ১৭ বছর বয়সী মুহাম্মাদ এনেস নামে এক কিশোরকে একটি গরম কম্বলে মুড়িয়ে স্ট্রেচারে করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। কয়েক ডজন উদ্ধারকারী ঘটনাস্থলে কাজ করছিল এবং তুর্কি সৈন্যরা তাদের উদ্ধারের পরে জড়িয়ে ধরে হাততালি দিয়েছিল।
উদ্ধারকারীরা তখন অন্যদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার জন্য শান্ত থাকতে বলে এবং চিৎকার করে বলেছিল ‘কেউ কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছে?’
উদ্ধারকৃতদের স্বাস্থ্যের অবস্থা স্পষ্ট নয়।
হাতায় প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের সামনে অপেক্ষা করার সময় অত্যন্ত শোকাহত সেনগুল আবালিওগ্লু দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, তিনি তার বৃদ্ধ বোন এবং চার ভাগ্নেকে হারান। ‘মৃত বা জীবিত এটা কোন ব্যাপার না, আমরা কেবল আমাদের লাশ চাই যাতে তাদের অন্তত একটি কবর থাকে এবং আমরা তাদের কবর দিই।’
ভূমিকম্পে লক্ষ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য এবং সরঞ্জাম সরবরাহ জরুরি বলে সোমবার ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। এরপর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ তুরস্ক থেকে দেশটির বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমে দু’টি নতুন ক্রসিং পয়েন্ট খুলতে সম্মত হয়েছেন।
বাব আল-সালাম এবং আল রাইয়ের ক্রসিংগুলো প্রথমত তিন মাস সময়ের জন্য খোলা হবে। অদ্যাবধি জাতিসংঘকে কেবলমাত্র বাব আল-হাওয়াতে একটি একক ক্রসিংয়ের মাধ্যমে ইদলিব অঞ্চলে সহায়তা সরবরাহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এক সপ্তাহ আগে ভূমিকম্পের পর থেকে সিরিয়ার বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আরও সাহায্য এবং ভারী সরঞ্জাম পাওয়ার জন্য জাতিসংঘের তীব্র চাপ রয়েছে। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্যান্য জীবিত স্বজনদের উদ্ধারের উপায় নেই এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে ৩৫ টন খাদ্য নিয়ে প্রথম সৌদি ত্রাণবাহী একটি বিমান সরকার নিয়ন্ত্রিত আলেপ্পো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সৌদি আরব তুরস্ক এবং সিরিয়াকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য করার ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবারের আগে, সৌদি বিমানগুলো তুরস্কে অবতরণ করেছে। সৌদি ট্রাকগুলো বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত পিছিয়ে পড়া উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় কিছু সহায়তাও সরবরাহ করেছে।
জর্ডান, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি আরব দেশ সরকার নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ায় আরও বেশ সাহায্য বোঝাই বিমান পাঠিয়েছে। এছাড়া আলজেরিয়া, ইরাক, ওমান, তিউনিসিয়া, সুদান এবং লিবিয়া রাজধানী দামেস্কে সাহায্য পৌঁছে দিয়েছে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় জানিয়েছেন, সোমবার গভীর রাতে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল কাহরামানমারাস এবং আদিয়ামানসহ হাতায় প্রদেশে উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে। বাকি সাতটি প্রদেশে উদ্ধার কাজ শেষ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
ভূমিকম্পে তুরস্কের ১০টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে প্রায় এক কোটি ৩৫ লাখ মানুষ বাস করে। পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার একটি বিশাল এলাকায়ও লক্ষাধিক মানুষ বাস করে।
ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরাও বিধ্বস্ত শহরগুলোর মধ্যে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। তারা অনেক ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে বাইরে ঘুমাচ্ছে। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ পানির ব্যবস্থা কাজ করছে না। এবং সিস্টেমের ক্ষতি দূষণের ঝুঁকি বাড়ায়। তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন যে পানি সঞ্চালন ব্যবস্থার কয়েক ডজন পয়েন্ট থেকে নেয়া নমুনাগুলো ‘মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষায় অনিরাপদ’ দেখা যাওয়ায় মৌলিক চাহিদাগুলো অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে চলেছে।
আরও পড়ুন: তুরস্কে আরও একজনকে জীবিত উদ্ধার করল বাংলাদেশ দল, ৯ জনের লাশ পুনরুদ্ধার
পরিবেশ ও নগরায়ন মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রায় ৪১ হাজার ৫০০ এর বেশি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে বা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। ওই ভবনগুলোর নিচে লাশ রয়েছে এবং নিখোঁজের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়।
তুরস্কের অনেকেই বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের জন্য ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণকে দায়ী করেন এবং কর্তৃপক্ষ ধসে পড়া ভবনের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারদের শনাক্ত করা অব্যাহত রেখেছে।
তুরস্ক যে ভবন নির্মাণ আইন চালু করেছে তা ভূমিকম্প-ইঞ্জিনিয়ারিং মান নিশ্চিত করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে কোডগুলো খুব কমই প্রয়োগ করা হয়।
সোমবার পর্যন্ত তুরস্কে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৬৪৩ জনে। কর্মকর্তারা প্রতিক্রিয়ার প্রথম সপ্তাহ থেকে মৃত্যুর সংখ্যার আপডেটের পুনরাবৃত্তির হার হ্রাস করেছে। এখন দিনে একবার বা দুবার বড় সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করছে।
উদ্ধারকারী দল হোয়াইট হেলমেট’র তথ্যানুসারে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ১৬৬ জনে পৌঁছেছে।
এছাড়া দামেস্কে সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এক হাজার ৪১৪ জন মারা গেছে। সিরিয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৮০ জনে।
মঙ্গলবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় বেঁচে যাওয়া হাজারো মানুষ
১০২৪ দিন আগে
একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প ও সিরিজ আফটারশকে ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। দুর্ঘটনার তিনদিন পর বৃহস্পতিবার তীব্র ঠান্ডা ও ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ধ্বংসস্তূপের মাঝে আটকে পড়া জীবিতদের বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
এখনও কয়েক হাজার মানুষ ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে জড়ো হয়ে খাবার ও পানির জন্য অপেক্ষা করছে।
উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও বেশি লোককে জীবিত বের করার জন্য তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
তুরস্কের আন্তাকিয়া শহরে কয়েক ডজন মানুষ শিশুদের পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণকারী একটি ট্রাকের সামনে সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আহমেত তোকগোজ বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
যদিও ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি হারানো কয়েক হাজার মানুষ তাঁবু, স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য অস্থায়ী বাসস্থানে আশ্রয় পেয়েছে। তবে এখনও অনেক মানুষ সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকে বাইরে রাত কাটাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বিশেষ করে এই ঠান্ডায় এখানে বসবাস করা সম্ভব নয়। ‘লোকেরা ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে কিছুটা উষ্ণতা পায়, তবে ক্যাম্পফায়ারগুলো পর্যাপ্ত উষ্ণতা দিতে অপ্রতূল ... যদি মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে মারা না যায়, তবে তারা ঠান্ডায় মারা যাবে।’
এদিকে, ভূমিকম্পের পর বৃহস্পতিবার সকালে তুরস্ক থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় জাতিসংঘের সাহায্য পাঠানো প্রথম ট্রাক প্রবেশ করেছে। ছোট কিছু সাহায্য সংস্থা কিছু পণ্য পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প: বাংলাদেশে ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
শীতকালীন আবহাওয়া ও ভূমিকম্পের ফলে রাস্তা এবং বিমানবন্দরে হওয়া ক্ষতি, ইতোমধ্যে সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি গৃহযুদ্ধের ফলে বিপর্যস্ত অঞ্চলকে আরও বেশি বিধ্বস্ত করে ফেলেছে।
গৃহযুদ্ধ সিরিয়ার লক্ষাধিক লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং দেশটির অনেক মানুষ বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সাহায্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি আরও কয়েক লাখ মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত দিয়ে তুরস্কে পাড়ি জমায়।
অন্যদিকে, তুরস্কের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা খুব ধীর ছিল।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সরকার এই সংকটে অব্যবস্থাপনা করেছে এমন কোনো অভিযোগ যদি ওঠে, তবে আগামী মে মাসে হতে যাওয়া নির্বাচনে তিনি কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হবেন।
তবে এরদোয়ান বৃহস্পতিবারও ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা সফর করে সমালোচনা কমানোর চেষ্টা করেছেন।
এদিকে, সীমান্তের উভয় পাশে জরুরি কর্মীরা জীবিতদের খুঁজে বের করতে রাতভর কাজ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া বা মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পেতে অক্ষমদের বেঁচে থাকার আশা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
তুরস্কের এলবিস্তান শহরে উদ্ধারকারীরা মানববন্ধন করেন।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প: তুরস্ক, সিরিয়ায় নিহত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে
১০২৯ দিন আগে