ক্রয়াদেশ বাতিল
করোনাকালে ৩১৮ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে: বিজিএমইএ
করোনা মহামারির কারণে এক হাজার ১৪৫টি কারখানার প্রায় ৩১৮ কোটি ডলার মূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, ‘করোনাকালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এক প্রচণ্ড বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে। বিজিএমইএর জরিপ অনুযায়ী-এক হাজার ১৪৫টি কারখানার প্রায় ৩১৮ কোটি ডলার মূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতারা রপ্তানি করা পণ্যের দাম দেয়নি। অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারপরও বিজিএমইএ’র বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও সরকারের নীতি সহায়তায় শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।’
রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার বিজিএমইএ ভবনের মাহাবুব আলী হলে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পড়ুন: তৈরি পোশাক নিয়ে সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাবে ‘এমভি সোঙ্গা-চিতা’
পোশাক কারখানাগুলো এখনো কোভিড মহামারির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে সুতার দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে। কনটেইনার পরিবহন খরচ ৩৫০-৫০০ শতাংশ বেড়েছে। তাছাড়া, ডাইস, কেমিক্যালের খরচ বেড়েছে ৪০ শতাংশ। গত ৫ বছরে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম যথাক্রমে ৫৯ ও ১৩ শতাংশ বেড়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে কারখানার উৎপাদন খরচ দিন দিন বেড়েছে। এ সময়টিতে পণ্যের দরপতন মোটেই কাম্য নয়।’
ফারুক হাসান বলেন, করোনার মধ্যেও নানা ঝুঁকি নিয়ে কারখানা মালিকরা ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। বর্তমানে আমাদের কারখানাগুলোতে প্রচুর কার্যাদেশ বেড়েছে। দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা প্রতিটি ক্রেতার সঙ্গে আলাদা-আলাদাভাবে আলোচনা করেছি। তাদের আস্থার সম্পর্কে ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছি।
তিনি বলেন, বিজিএমইএ’র নেতৃত্বে যে হেলথ প্রটোকল তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে তার সুফল হিসেবে আমরা শ্রমিকদের নিরাপদ রাখতে পেরেছি। এর সুফল হিসেবে ক্রেতারা আজ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন, আমাদের রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। করোনা মাহামারি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজটি শিল্পকে সেই কঠিন সময়ে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে।
পড়ুন: এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে পোশাক মালিকরা উদ্বিগ্ন নন: বিজিএমইএ সভাপতি
রপ্তানি বেড়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনার সময় আমাদের খারাপ সময় গিয়েছে। বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় আমরা পেমেন্ট আর পাইনি। সে বোঝা আমাদের অনেক কারখানা মালিককে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের কারখানাগুলোতে প্রচুর কার্যাদেশ আসছে। এ ধারা বজায় রাখতে আমাদের সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ আজিম, সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক ও সাবেক সহ-সভাপতি মো. আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ; উপেক্ষিত শ্রমিক স্বার্থ
রানা প্লাজার পরবর্তী সময়ে পোশাক কারখানার মালিকরা এ খাতের সংস্কারে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেছেন। তবে ব্যাপক সংস্কারের পরেও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিল ব্যবসায়িক অনুশীলনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করছে। সেই সাথে তৈরি পোশাক শিল্পের নিয়োজিত শ্রমিকদের বিরাট সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে।